Saturday, August 11, 2007

বিউটি : জীবন সংগ্রামী এক নারীর গল্প

বিউটি (ছদ্মনাম) ২১ বছর বয়সী এক তরুনী, সুন্দরী এবং উজ্জল তার হাসি যে কারই নজর কাড়েতার জন্ম মধ্যবিত্ত একটি পরিবারে এবং সপ্তম শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেদামী পোশাক পড়ে, কখনো দামী গাড়িতে চড়েও সে সুখী নয়তার কোন আত্মীয় তাকে পছন্দ করে না এমনকি তার সাথে কোনরকম যোগাযোগ রাখে নাসে আমাদের সমাজে একজন অপরাধীর মত বসবাস করেযদিও সে কিছুদিনের জন্য দেশের বাইরে চলে গিয়েছিল এবং বর্তমানে সে একজন যৌনকর্মী(বাসাবাড়ি ভিত্তিক)

১৯৮৬ সালে ঢাকার রায়ের বাজারে একটি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করে বিউটিপাঁচ বোন ও দুই ভাই এর মধ্যে বিউটি ছিল তার বাবা-মায়ের চতুর্থ সন্তানতার বাবা একজন ছোট মুদির দোকানদার ছিলেন আর তার মা ছিলেন একজন গৃহিনীতার বাবা ফরিদপুর জেলার এবং তার মা ছিলেন ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দাতার মায়ের অনেক আত্মীয় ঢাকায় বাস করতবিউটি এবং তার পরিবারের কোন সদস্যেরই গ্রামের বাড়িতে যাতায়াত ছিল নাকিন্তু তার দাদা-দাদী গ্রামের বাড়িতে বসবাস করতেন বলেই তার বাবা মাঝে মাঝে যেখানে যেতেন

তার ছোটবেলায় সে এবং তার প্রতিবেশীর মেয়ে ভর্তি হয় বাড়ির কাছের একটা স্কুলেদুজনে একসাথে স্কুলে যেতবিউটি তখন প্রথম শ্রেনীর ছাত্রী, স্কুল শেষে একদিন সে এবং তার বান্ধবী বাসষ্ট্যান্ডে গিয়ে বাসে উঠে পড়ে কিন্তু দুজনের কেউই জানেনা কোথায় যাচ্ছেবাসের হেলপার তাদেরকে বাস থেকে নামিয়ে দেয়তারপর তারা বাড়ির দিকে হাঁটতে লাগল কিন্তু তারা পথ হারিয়ে ফেললঅনেক পথ হাঁটতে হাঁটতে তারা দুর্বল হয়ে পড়লে কাঁদতে শুরু করেঅনেক লোক তাদেরকে জিজ্ঞেস করল তারা কোথা থেকে এসেছে এবং ঠিকানা কি ? কিন্তু দুজনে কেউই তাদের ঠিকানা বলতে পারেনিঅবশেষে পুলিশ তাদেরকে থানায় নিয়ে যায় এবং পরের দিন মিরপুর ভবঘুরে কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়পুলিশ তাদের ঠিকানা জিজ্ঞাসা করলে তারা শুধুমাত্র পরিবারে সদস্যদের নামই বলে কিন্তু বাড়ির ঠিকানা বলতে পারেনিতার কিছুদিন পরে তাদেরকে গাজীপুর ভবঘুরে কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিল

মুলতঃ এটা ছিল ১৯৯৫ সালের কথাপাঁচবছর এর মত বিউটি ভবঘুরে কেন্দ্রে ছিলসে ভবঘুরে কেন্দ্রে এন.জি.ও স্কুলে ক্লাস-৬ পর্যন্ত পড়েছেতার স্কুল শিক্ষকের তার ভাল সম্পর্ক হয় এবং তারপর তাকে প্রথম সে যে স্কুলে পড়াশুনা করেছিল সেই স্কুলের নাম বললতারপর তার স্কুলের শিক্ষক তার ঐস্কুলে যোগাযোগ করে এবং তার বাবা-মার সাথে যোগাযোগ করেখবর পেয়ে তার বাবা-মা তাকে ভবঘুরে স্কুল থেকে নিয়ে আসেপ্রথম দিকে বিউটির বাবা-মা বিভিন্ন জায়গায় খুঁজাখুঁজি করেছিল কিন্তু তারা কোথাও বিউটির কোন সন্ধান পায়নি এবং পরে বিউটির বাবা-মা এবং আত্মীয় স্বজন ধারনা করেছিল যে সে মারা গেছেতার মা এবং পরিবারের অন্যরা অনেক দিন পর তাকে দেখে খুব খুশি হয়

পরিবারের সাথে বিউটির দিনগুলো আনন্দেই কাটছিলসে পূনরায় ক্লাস-৬ ভর্তি হয় এবং তার শখ ছিল নৃত্য, তাই পড়াশুনার পাশাপাশি বাসার কাছের একটি নাচের স্কুলেও ভর্তি হয়একবছর পর যখন সে ক্লাস-৭ এ পড়ত তখন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সে নাচত এবং ১০০০ টাকা করে পেতধীরে ধীরে লোকজনের কাছে সে একজন নৃত্যশিল্পী হিসাবে পরিচিতি পেতে থাকেআনন্দেই কাটছিল তার দিনগুলো

তার জীবনের পরের কথা আসছে খুব শিগ্রই...................

১. তার জীবনের একটা দুঃঘটনা এবং কিভাবে সে একজন যৌনকর্মী হল?

২. কিভাবে সে দুবাই গিয়েছিল ? কিভাবে কেটেছিল তার একটি বছর?

৩. তার বর্তমান জীবন এবং তার যৌন পেশা?

অনুবাদ: তাসলিমা আক্তার

Tuesday, August 7, 2007

আমার অনেক স্বপ্ন….........

প্রত্যেক মানুষই স্বপ্ন দেখে আর মানুষের স্বপ্ন দেখার নেই কোন শেষমানুষের সব স্বপ্ন পূরণ হয়না কখনো কখনো সেগুলো রূপনেয় দুঃস্বপ্নেমানুষ সেই দুঃস্বপ্ন পেরিয়ে আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন পূরণের আশায়নাছিমা, অর্ধবয়সী এক মহিলার স্বপ্নের দুঃস্বপ্নের কথা বাস্তবের মত বনর্ণা করা হল -

ছোটবেলার কথা খুব একটা মনে নেইআমার বয়স যখন ৯ তখন আমাদের তিন ভাই বোনকে নিয়ে আমার মা গ্রামে থাকতেন আর বাবা থাকতেন ঢাকায়, দিনমজুরের কাজ করতেনতখন মাত্র বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, তখন আমাদের সংসারে খুব অভাবএক বেলা খেলে আরেক বেলা উপোস থাকতে হতসংসারে একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি ছিলেন শুধু আমার বাবাতার উপার্জনও ছিল খুব কম আমাদেরকে তেমন খরচ দিতে পারেনিতখন স্বপ্ন দেখতাম একদিন আসবে যখন প্রত্যেকবেলা পেটভরে খেতে পাব

আমি ছিলাম বড় মেয়ে তাই সংসারের জন্য আমাকে অনেক কাজ করতে হয়েছে, মাছ ধরা এবং অন্যের জমিতে কাজও করতে হয়েছেতখন দুইবেলা আমরা খেতে পেতাম আর স্বপ্ন দেখতাম আমাদের সংসারে কোন অভাব থাকবে নাকিন্তু সেই স্বপ্ন হয়ে গেল দুঃস্বপ্ন যখন আমার বয়স ১৪তখন আমার জীবনে নেমে এল অন্ধকারের ঘনঘটা, আমাদের গ্রামের কেউ আর আমাকে কাজ দিতে চায় না আমাদের গ্রামে একটা নিয়ম ছিল যে, মেয়েরা একটু বড় হলে তাদেরকে কাজ দেয় না যখন কাজ পেলাম না তখন আবার শুরু হল অনাহারের দিন

তার ঠিক ৬ মাস পর আমার এক খালা আমাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন এবং একটা বাসায় কাজ করতে দেন যাদের বাসায় কাজ করা শুরু করলাম তারা বিভিন্ন সময়ে কারনে অকারনে খারাপ ব্যবহার এমনকি মারধর করতআবার বাড়ির পুরুষ কর্তার চরিত্র ভাল ছিলনাএকদিন খালা আমাকে দেখতে যায়, আমি খালাকে সব খুলে বলি এবং এটাও বলি আমি এখানে আর থাকব না তখন খালা আমাকে আমার বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন

বাড়ি ফিরে আসার পর আমার বাবা-মা আমাকে বিয়ে দিয়ে দিলেন ৩৫ বছর বয়সী এক লোকের সাথেবিয়ের পর আমার জীবনে শুরু হল নতুন আরেক কষ্টআমার স্বামী ও তার বাবা মা সবাই ঢাকার কেরানী গঞ্জে থাকতসেখানেই আমার সংসার জীবন শুরু আমার বিয়েতে যৌতুক হিসাবে গরু দেওয়ার কথা থাকলেও বাবা মা দিতে পারেন নি এজন্য আমার স্বামী ও শাশুরী অনেক অত্যাচার করেছেবিয়ের এক বছর এর মাথায় আমাকে আবার কাজে নামতে হয় কারন আমার স্বামীর আয় তেমন ভাল ছিলনা তখন ছোট ব্যবসা করতে শুরু করলাম কখনও পিঠা বিক্রির কাজ, কখনও তরকারী বিক্রি পড়ে একবার কাপড় বিক্রি করতে শুরু করলামকাপড় বিক্রির কাজে ভাল আয় করেত পারিনি কারণ লেখাপড়া না জানার ফলে হিসাব করতে পারতাম নাসেকারনে আমাকে অনেকে ঠকতে হয়েছেতখন খুব ইচ্ছে করত লেখাপড়া করতে

এখন আমার চার ছেলে এক মেয়েছেলেমেয়েদেরকে লেখাপড়া করাতে পারিনিতবে তাদেরকে বিভিন্ন কাজে দিয়েছি ভবিষ্যতে কিছু একটা করে চলার জন্যকারণ কাজ না করলে তাদেরকেও না খেয়ে থাকতে হবে আর সেজন্য তাদের লেখাপড়া করতে দিতে পারছি না জীবনে অনেক কষ্ট করেছিলেখাপড়া জানার ইচ্ছে আমার অনেক দিনেরএকদিন নারী জীবনের কথা জানতে পারি এবং ভর্তি হই নারী জীবনের বাংলা ক্লাসে

এখন প্রতিদিন নারী জীবনে ক্লাসে আসি আর রাতে আমার ছেলে মেয়েদেরকে লেখাপড়া শেখানোর চেষ্টা করি যাতে তারা আমার মত না ঠকেএখন আমার স্বপ্ন আমার মেয়ে নিজের পায়ে দাড়াঁবে আমার মত কষ্ট করবে না আর আমার ছেলেরা ভাল উপার্জ্জন করবে কারও কাছ থেকে ঠকবে না

Sunday, August 5, 2007

ঘুম ভাঙ্গা চিন্তাগুলো

লিখেছেন: রাফি হক

একটা শব্দে হঠাৎ ঘুমটা ভেঙ্গে গেলগভীর রাতনিস্তব্ধ চারিদিকভিআইপি রোডকোন ভারী লড়ীর চাকা পাংচার বা হর্ণ হবে হয়তোঘুম সহজে আসবে নাপাশে খোলা জানালাএকটু হেঁটে এগিয়ে জানালার পাশে দাঁড়াতে লক্ষ হাজার তারার ঝিকিমিকি আকাশ চোখে পড়লোনীচে গাছগুলোও যেন গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে আছেপুরোনো জানালায় নিরাপদে আশ্রয় নেয়া চড়ুই পাখি হঠাৎ সতর্ক হয়ে উঠলো

মাঝে মাঝে নিস্তব্ধ রাতটাকে কাঁপিয়ে নিশুতি গাড়ী চলছেকোন আবার আস্তে আস্তে যেন কারো ঘুম না ভাঙ্গেজীবনের হিসেবটা মিলিয়ে নেয়া যাককী পেলাম আর কী না পেলামসমাজের উপরের দিকে তাকালে মনে হয় কিছুই তো পেলাম না আবার নীচে তাকালে দেখি অনেকই তো পেয়েছিঅন্ধকার রহস্যময় গ্রহ-তারার আকাশের দিকে তাকিয়ে মনটা পার্থিব জীবনের উর্ধ্বে উঠে যায়অনেকে বলে জীবনটা অনেক বড়অনেকে বলে জীবনটা ক্ষণিকের! আমার মন শেষেরটা সায় দেয়এর জন্য এতকিছুর কি প্রয়োজন? মানুষ এই ক্ষণস্থয়ী জীবনটাকে বড় বেশী ভালবাসেজন্মের সঙ্গেই তো মানুষ মৃর্ত্যুর সনদ নিয়ে আসেমৃত্যু সৃষ্টি জগতের এক অনিবার্য অবস্যম্ভাবী ঘটনাজীবন কারো কাছে ভিন্ন রকম মনে হলেও মৃত্যুসবার কাছেই কষ্টেরজীবনের জন্যে এতকিছুর প্রয়োজন হয় মৃত্যুর জন্যে তো হয় না