Saturday, October 20, 2007

সেই মেয়ে

Title of this post: That Girl (A short story) written by Zannat Ara Amzad (English & computer student)
Content of this post: In this short story, author has written a story about a family from her imagination.

প্রথম অংশের পর

মা বললেন, ‘কিন্তু যত যাই থাকুক ছেলে হতে হবে সুন্দর বেশভুষা স্মার্ট, যেন রাজপুত্র। আমাদের বিথীওতো আল্লাহর রহমতে দেখতে শুনতে সুন্দর স্মাট। যে কেউ আমাদের মেয়েকে দেখলে পছন্দ করবে।’
বাবা বললেন, ‘হ্যাঁ বিথির মা, আমাদের দুটো মেয়েই মাশা-আল্লাহ্ রুপে গুনে সবদিক থেকেই সুন্দর। একটা জিনিস লক্ষ্য করেছ বিথির মা, দেখতে দেখতে আমাদের সন্তানেরা কত বড় হয়েগেছে। আজ বাদে কাল বিয়ে দিতে হবে বিথিকে তারপর তিথিকে। এমনি করে দুটো মেয়েই চলে যাবে পরের বাড়িতে। ভাবতে ভিষন খারাপ লাগে। বাকি থাকবে শুধু আমাদের একমাত্র পুত্র অভি। ওতো সবে মাত্র পরছে ক্লাস থ্রিতে, দেখতে চোখের পাতা পলকেই আমাদের আজকের এই ছোট্ট কেদিন পর বউ-বাচ্চা নিয়ে সংসার করবে। তখন শুধু তুমি আর আমি দুই বুড়ো-বুড়ি কি নিয়ে থাকবো?

মা বললেন, আপনার তসব বাজে চিন্তা, আমি যাই বিথিকে খবরটা দিয়ে আসি।
আমি বললাম, ‘
বাবা, এই নাও তোমার চা।
বাবা বললেন,
আয় মা আয়, আমার পাশে একটু বস।
ভয়ে আমার গা সিউরে উঠল। ধীরে ধীরে বাবার পাশের চেয়ারটাতে বসলাম। বাবা
একের পর এক কথা বলতে শুরু করলো
আমি বাবাকে বললাম
, বাবা এখন আমি উঠবো।
বাবা বলল,
উঠবি ঠিক আছে।
পেছন থেকে বাবা আবার ডেকে উঠল। আবারও ভয়ে আমার গা সিউরে উঠল।
বাবা বলল,
তিথি তোর আপাকে আজ দেখতে আসবে। আর বিথির পছন্দ হলেই এই ছেলের সঙ্গেই বিয়ে দিব। এর পর তোর পালা।

আমি লজ্জা পেয়ে বাবাকে কিছু না বলেই চলে এলাম। আমাদের বাড়িতে কিছু মেহমান এসেছে আপাকে দেখতে
অভি আপার রুমে গিয়ে আপার কানে কানে ফিসফিস করে বলল,
আপা তোমার ব এসেছে।

আপা কষে একটা চর দিল অভিকে। অভি সঙ্গে সঙ্গে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে শুরু করল। আমি আপাকে নিয়ে বসার ঘরে গেলাম। আপা আর আমি দুজনে সবাইকে একসঙ্গে সালাম দিলাম
হঠাৎ একটা মোটা মহিলা তার মোটা কন্ঠে বলল,
তা মেয়ে কোনটা?
বাবা আপাকে দেখিয়ে বলল
, এটা আমার বড় মেয়ে বিথি। আর এটা ছোট মেয়ে তিথি।
কি
ন্তু বাবার জায়গায় আমি হলে বলতাম আমার আপাও একটা মেয়ে আমিও একটা মেয়ে। আমার একটাই ভাই। ওর নাম অভি। আমার মেজাজ হঠাৎ চটে গেল। কি করব বুঝতে পারছি না। কারণ ওঘ থেকে অভির বিচ্ছির কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে।
মোটা মহিলাটা বিথিকে বলল,
এসো মা তুমি আমার পাশে বসো।

আমি ভাবছি উনি যেই সোফাটায় বসেছেন তার এক তৃতীয়াংশ অংশতো তিনিই দখল করে আছেন। বিথি আপা ওখানে কেমন করে বসবে। বিথি আর চোখে আমার দিকে খানিক তাকিয়ে রইল। আমি কিছু বলার আগেই ও বসে পল। হঠাৎ আমার দৃষ্টি গেল একটা মধ্য বয়সী লোকের দিকে। লোকটার চাহনি একটু রহস্যময়। একটু অন্যরকম ভাবে আপার দিকে তাকাচ্ছে। আর মিট মিট করে হাসছে। মা, মেহমানদের জন্য নাস্তা এনেছে। মার পেছন পেছন অভিও এল। কিছুক্ষন আগে যে মিট মিট করে হাসছিল সে আমাকে ডেকে ভলল,এখানে বসো। আমার সঙ্গে বস। তার ভাব দেখে আমি বুঝলাম ইনিই আপার হবু ব

সে তার পরিচয় দিয়ে বলল, আমি আরিফ, আমেরিকায় থাকি।
একা একা নিজেই সব বলে
যাচ্ছে। আমাকে জিজ্ঞাসা করল, আপনি কি করেন ?
সে বয়সে কম করে হলেও আমার চাইতে পাচঁ,
ছয় বছরের বড় হবে। তবুও আমাকে আপনি করে বলছে। আমার ভাল লাগছে না। কেউ আমাকে আপনি করে বললে আমার প্রচন্ড রাগ হয়।
তার প্রশ্নের উত্তরেআমি বললাম, খাই-দাই,
ঘুরি-ফিরি, ঘুমাই
তিনি মাথাটা একটু নিচে নামিয়ে বলল,
না মানে আমি বলছিলাম আপনি কিসে পড়েন?
আমি বললাম,
আমি এবার অনার্স সেকেন্ড-ইয়ারে ছি।

বড়রা সবাই কথা বলছে আমি আর অভি চুপচাপ আরিফ সাহেবের পাশে বসে আছি। ওর হাতে একটা কাগজ দেখা যাচ্ছে। অভি কাগজটা আরিফ সাহেবের হাতে দিল। আমি সেই দৃশ্য দেখে অভি আর আরিফ সাহেবের কথার মাঝে কান পেতে রেখেছি।
আরিফ,
অভিকে জিজ্ঞেস করছে, এটা কে দিয়েছে।
অভি ফিসফিস করে বলল
, বড় আপা আপনাকে এটা দিতে বলেছে।আরিফ একটু লাজুক হাসল
অভি ওনাকে বলল,
এটা এখনই পড়ার জন্য আর আপা বলেছে আপনাকেও কিছু লিখে দেবার জন্য।
সবার চোখের আরালে তিনি কি যেন লিখছে, এবং কাগজটা অভিকে দিয়ে বলল,
এটা তোমার আপাকে দিও।
আমি অভিকে পাশের ঘরে ইশারা দিয়ে নিয়ে এলাম
এবং জিজ্ঞাসা করলাম, ঐ কাগজে কি লেখা ছিল?

অভি হাসতে হাসতে বলল, বিথি আপা আমাকে মেরেছে, তাই শোধ নিলাম। ঐ কাগজে আমি মিথ্যে কথা বানিয়ে বানিয়ে লিখে আপার নাম বলে ওনাকে দিয়েছি। আমি লিখেছি- আমার সোনার বাংলা এর পরের লাইনটা যেন উনি আপাকে লিখে দেয়, আমি তোমাকে ভালবাসি। আর সেই সঙ্গে নার ফোন নাম্বারও চেয়েছি ওনাকে ফোন করে বলব, আপা বলেছে, আপনার সঙ্গে আপা সরাসরি কথা বলবে, তারপর আপার কাছে উনি যেন আমার মত চর খায়।
আমি একটু হেসে বললাম তার আগে আমার হাতে একটা চর খেয়ে
নে। দিলাম কষে একটা চর। এতটুকু ছেলে এখনই পেকে গেছে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম
, সোনার বাংলার এই কথাটা কে শিখিয়েছে?
অভি
বলল, কেন! আমাদের স্কুলের শরীর চর্চা বিভাগের শিক্ষক। উনি কাল আমাদের জিজ্ঞেস করল, আমার সোনার বাংলার পরের লাইন কি?
আমি বললাম, ‘
হ্যাঁ আর ওখান থেকে এই পাকামো না?
আমি ওর হাত থেকে আরিফ সাহেবের দেয়া কাগজটা নিয়ে রেখে দেই। আরিফ সাহেবরা চলে গেছেন, আপা ওর
ঘরে ঢুকতেই অভি আপাকে গিয়ে বলল, আপা কত টাকা দিয়েছে?
অভি একথা বলতেই আমি ছো মেরে আপার হাত থেকে টাকাটা নিয়ে বললাম ,
কত টাকা দিয়েছে তা জেনে তোর কি দরকার?
এই বলে টাকা ভাগ করতে লাগলাম। ওরা আপাকে ১০০১ টাকা দিয়েছে। ওখান থেকে অভিকে দিলাম ১০০ টাকা, আমি নিলাম ৪০০ টাকা আর বাকি ৫০১ টাকা আপাকে ফেরৎ দিলাম।
আমি
অভিকে বললাম, যা তুই তোর ঘরে যা।

অভির কাছ থেকে একটু আগে আরিফ সাহেবের দেয়া সেই কাগজটা আমার কাছে রেখেছি সেই কাগজটা আমি এখন আপাকে দেব। অভি বিথির সঙ্গে যেই কাজটি করতে চেয়েছিল, সেই কাজটি এখন আমিই করব। আপা ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে নিজেকে দেখছে। বোধ হয় ভাবছে,ছেলে পক্ষরা ওকে কেমন দেখল

চলবে............

ক্ষুদে মাছ বিক্রেতা

Title of this post: A child fish seller by Shamima Akter
Content of this post: Author expressed hard life of a working girl in her writing.


আমার নাম আসমা, বয়স ১১ আমরা ৫ বোন ৩ ভাই। ভাইবোনদের মধ্যে আমি ৭ম। আমার ৩ বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। আমরা চার ভাইবোন বাবামার সাথে থাকি। আমার বাবা মাছ বিক্রি করে। আমার বাবার আয় খুব অল্প, এ দিয়ে আমাদের সংসার অনেক কষ্ট করে চালাতে হয়। আমার বড় ভাই গার্মেন্টেসে কাজ করে কিন্তু সে আমাদের কোন খরচ দেয় না। আমার এক ভাই তরকারি বিক্রি করেমাঝে মাঝে ঐ ভাইকে তরকারি বিক্রি করতে সাহায্যে করি আমিও আমাদের সংসারে কিছু সাহায্য করার জন্য ফুটপাতে মাছ বিক্রি করি। মাঝে মইধ্যে একা আবার কখনো আমার বাবার সাথে মাছ বিক্রি করি। ফুটপাতে বসে মাছ বিক্রি করতে খুব কষ্ট হয় তারপরও সংসারের প্রয়োজন মিটানোর জন্য কাজ করতে হয়।

আসমা ফুটপাতে মাছ বিক্রি করছে - ছবি: শামীমা আক্তার

কাজ করার পাশাপাশি আমি একটা কর্মজীবী শিশুদের স্কুলে ৪র্থ শ্রেনীতে পড়ি। ভোর বেলা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মাছ বিক্রি করে ২টা থেকে স্কুলে পড়তে যাই। লেখাপড়া করতে খুব ভাল লাগে। স্কুলের পড়া শেষে ঘরের কাজে মাকে সাহায্য করতে হয়। তাই মাঝে মধ্যে ইচ্ছে থাকলেও বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করতে পারি না।

এই আসমার মত নাম না জানা অনেক শিশুই আছে যাদেরকে সংসারের প্রয়োজনে কর্মসংস্থান বেছে নিতে হয়। তাদেরকে শৈশবের হাসি আনন্দকে বিসর্জন দিয়ে জীবিকার তাগিদে অনেক ঝুকিঁপূর্ন কাজ করতে হয়।