Content of this post: In this short story, author has written a story about a family from her imagination.
দ্বিতীয় অংশের পর
আপা হয়ত ভাবছে না - না মোটেও পঁচা দেখাচ্ছে না আমাকে। বরং আমি না সাজলেও হয়ত আরিফ সাহেব বলত “ওয়াও! ইউ আর সো সুইট হানি, আই ওয়ানা বি উইথ ইউ”। আমি খুব সুইট একটা মেয়ে আমি জানি! আশপাশের মানুষগুলো এ ব্যাপারে মনে হয় আমার চেয়েও ভলো জানে, আর আমার বন্ধুদের চোখে-মুখেতো সারাক্ষনই মুগ্ধতা ঝরে- “ওয়াও! ইউ আর সো- ও সুইট!” এটা ছেলে বন্ধুদের কথা আর মেয়ে বন্ধুরা আমার গ্লামারটাকে বেশ পছন্দ করে এটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারি!
আমার মতে সত্যিই বিথি আপা সুন্দরের অপ্সরী।
আমি আপার রুমে ঢুকে বললাম, “আপা এই নাও, এটা আরিফ সাহেব দিয়েছেন।”
আপা বলল, “আরিফ সাহেব!”
আপা এমন ভাব করছে যেন এই কাগজটা দেয়াতে আরিফ সাহেবের প্রতি বিরক্ত হয়েছে।
আপা বলল, “আচ্ছা এটা টেবিলে রাখ।”
আমি কাগজটা রেখে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম আপা পেছনে তাকিয়ে আগে দেখে নিল কেউ আছে কিনা। আপা কাগজটা পড়ছে আর হাসছে, কাগজটাতে কি লেখা ছিল তা তো জানাই আছে। তিন শব্দের আমাদের সবার প্রিয় সেই কথাটি......“ আমি তোমাকে ভালোবাসি”। আপা একা একাই লজ্জা পাচ্ছে। সেই সাথে তার ফোন নাম্বারটি পেয়ে বোধ হয় খুশিই হয়েছে, কিন্তু আমি জানি আপা তাকে ফোন করবে না, কারণ আপা ভিষণ লাজুক।
আরিফ সাহেব বলল, “সে বলল, আমি জানি তুমি কে, বিথি?”
কথাটা শুনে আমি মুখ চেপে হাসলাম। ভালোই হল তার সাথে একটু মজা করা যাবে, অসুবিধে কি! দুলাভাইয়ের সঙ্গে একটু মজা করতেই পারি।
আরিফ সাহেব বললেন, “কি হল চুপ করে আছেন যে? বুঝতে পারছি। আমাকেই কথা বলতে হবে। গতকাল তোমাকে দেখেই আমি মুগ্ধ হয়েছি। “ইউ আর সো-ও সুইট হানি”। তোমাকে আমার এবং আমাদের পরিবারের সবাই ভিষণ পছন্দ করেছে। বিথি, আমি তো একাই সব বলে যাচ্ছি তুমি তো কিছুই বলছো না!”
আমি কন্ঠটা ঝেরে পরিষ্কার করে বললাম এখনও কি আমার কণ্ঠটা চিনতে অসুবিধা হচ্ছে দুলাভাই!
আরিফ সাহেব বললেন, “কে-কে-কে?” আরিফ সাহেব হকচকিয়ে গেলেন।
আমি বললাম, “লজ্জা পাবার কিছুই নেই আমি তিথি। ভাগ্যিস্ ফোনটা আমার মা করেননি।” এবার তিনি জোরে কাশঁছেন।
আমি বললাম, “আপনার জোরে কাশঁবার প্রয়োজন নেই। আমি আপনার কণ্ঠটা চিনতে ভুল করিনি, কি! এবার আপনি চুপসে গেলেন যে? থাক আর কথা বাড়াতে চাই না। আমার ইউনিভার্সিটির সময় হয়ে এল। বিথি আপা আমাকে বলল, আপনাকে ফোন করে বলার জন্য যে, আপা আপনার সাথে সরাসরি কথা বলতে চায়। আপনি কি একটু সময় দিতে পারবেন?”
আরিফ সাহেব বললেন, “নিশ্চয়ই। তোমার আপা কবে কথা বলতে চায়?”
আমি বললাম, “আজ বিকেলে বোটানিকেল গার্ডেন।”
আরিফ সাহেব বললেন, “বিকেল কয়টার দিকে?”
আমি বললাম, “৪টার দিকে।”
আরিফ, “আচ্ছা তোমার আপাকে বলবে আমি ৪টার আগেই সেখানে থাকবো। আচ্ছা খোদা হাফেজ।”
আমি রিসিভার টি রেখেই আপার ঘরে গেলাম। আপা শুয়ে শুয়ে ম্যাগাজিন পড়ছে। মনে হচ্ছে আপার মুড খুব ভালো।
আমি বললাম, “আপা আসবো?”
আপা বলল, “আয়।”
আমি বললাম, “আরিফ সাহেব ফোন করেছিলেন। তিনি বললেন তোমার সাথে সে সরাসরি কথা বলতে চায়।”
আপা বলল, “সরাসরি কথা বলতে চায়, কি কথা?”
আমি বললাম, “তা আমি কি করে বলবো?”
আপা বলল, “উনি তোকে ফোন করে কি বলেছে?”
আমি বললাম, “আরিফ সাহেব আমার কণ্ঠ শুনে ভেবেছেন ফোনটা বুঝি তুমি রিসিভ করেছ। আমার কণ্ঠ শুনেই তিনি বলে উঠলেন, কে বিথি? কথাটা শুনে আপাও মিটমিট করে হাসলো। আমি বললাম, না আমি তিথি, ইয়ে মানে আমি আরিফ। তোমার আপা কি বাসায় আছেন? আমি বললাম, জি আছে আপনি হোল্ড করুন, আমি আপাকে ডেকে দিচ্ছি। উনি বললেন, না না তোমার আপাকে ডাকতে হবে না। তুমি তোমার আপাকে বলো আমি তোমার আপার সাথে আজ বিকেলে বোটানিকেল গার্ডেনে বিকেল ৪টায় কথা বলতে চাই। ওকে ঠিক ৪টায় সেখানে থাকতে বলো। তোমাকে অবশ্যই, অবশ্যই যেতে বলেছে। আপা তুমিকি যাবে সেখানে?
আপা বলল, “দেখি।“
আমি চলে এলাম বসার ঘরে। এটাই সুযোগ ফোন করার। মা রান্না করছে, অভি স্কুলে, আর বাবা অফিসে। রিং হচ্ছে, কিন্তু কেউ ফোন ধরছে না। বোধ হয় বাসায় কেউ নেই। আমি যার সাথে ফোনে কথা বলি, ওর নাম হচ্ছে“ রূপ”। ও ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার এর ছাত্র। আমি ওকে ছোট বেলা থেকেই চিনি। ও আমাকে চেনে। আমার সাথে সব সময়ই ওর দেখা হয় কথা হয়। আমি যখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি তখন থেকেই ওকে চিনতাম। কিন্তু ওর সাথে কখনও কথা বলতাম না। রূপদের পাশের বাড়িতেই আমারা থাকতাম। আমি যখন বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতাম ঠিক তখনই ও এসে দাঁড়াতো ওদের বারান্দায়। ও ফেল ফেল করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো। আর ও একটু বোকা টাইপের, ভীষণ ভিঁতুও বলা যেতে পারে। আমরা রূপদের ওখান থেকে চলে আসি, অন্য আর এক এলাকায়। ওর সঙ্গে এরপর থেকে স্কুলেই দেখা হত। ও আর আমি একই স্কুলে পড়তাম। ও আমার তিন বছরের সিনিয়র। দু’জনেই দিনে দিনে বড় হতে থাকি। আর যতই বড় হচ্ছি ততই বুঝতে শিখছি। ও এখন আর আগের মত নেই। ও আমাকে দেখলেই বন্ধুদের সঙ্গে আমাকে নিয়ে কথা বলত। এমনি করে কেটে গেল ছয়-ছয়টি বছর। রূপ এতদিন স্কুলে থেকে বেরিয়ে কলেজ থেকে বেড়বার পথে। ওর সাথে প্রথম যেদিন ফোনে কথা বলি, সেদিন ও নিজেই ফোন রিসিভ করেছিল,আর এমনিতেও,ও বাসয় থাকলেও নিজেই সব সময় ফোন রিসিভ করে। রূপ হ্যালো বলার পরই
আমি বললাম, “কেমন আছ?”
রূপ বলল, “আপনি কে?”
আমি বললাম, “ফাজলামো করছ কেন, তুমি জানো না আমি কে?”
রূপ বলল, “না আমি আপনাকে চিনি না,আপনি আপনার পরিচয় না জানালে চিনব কেমন করে?”
আমি বললাম, “রূপ তুমি কিন্তু মিথ্যা বলছ। রোজ তুমি আমাকে দেখ, আমিও তোমাকে দেখি। তবুও তুমি বলছো, তুমি আমাকে চেননা। আচ্ছা বেশ, তুমি আমাকে চেননা মানলাম। তোমার সঙ্গে আমার জরুরি কথা আছে।
রূপ বলল, “দেখুন আমি আপনাকে চিনি বা জানিনা। আমার সাথে আপনার কিসের জরুরি কথা?”
আমি বললাম, “দেখ, রূপ আগে থেকেই কেউ কাউকে চেনেনা। কথাবার্তার মাধ্যমেই একজন অপরজনকে চিনতে পারে। যাই হোক তোমাকে আমি যেই কথাটা বলতে চাই তা হল, আমি তোমার সাথে ফ্রেন্ডশীপ করতে চাই। তুমি কি করে আমার বন্ধু হবে?
রূপ বলল, “আচ্ছা?কে আপনি? আগে তো আপনার নামটা আগে বলুন, তারপর বন্ধুত্ব।”
আমি বললাম, “আচ্ছা ঠিক আছে। আমার নাম তোমার জানার দরকার নেই। তুমি আমাকে চিনতে পারবে, তুমি এখনই চলে আস।”
রূপ বলল, “কোথায় আসবো? তুমি বেলি রোডে চলে আস। আর এখানেই তুমি আমাকে দেখতে পাবে।”
রূপ বলল, “ঠিক আছে, আমি আসছি।”
চলবে.......................
No comments:
Post a Comment