রাস্তার পাশে বসে একটি ছেলে ভিক্ষা করে। কতই বা বয়স হবে ওর বড় জোড় ২০/২২। মুখ খানা বড় মায়ায় ভরা। বড় বড় চোখ দুটোতে কি ভীষন দিপ্তী। রাস্তাধরে যখন আমি হেঁটে যাই প্রায়ই চোখ তুলে দেখি ওকে, মুখটা অনেক করুন কিন্তু চোখে থাকে এক ঝলক হাসি। মনে হয়, আমরা ওকে করুনা করছি না বরং ওই করুনা করে তাকিয়ে দেখছে সব সুস্থ স্বাভাবিক নির্দয় মানুষগুলোকে। একটা কথা বলা হয়নি, ওর শরীরের একটা হাত ও একটা পা শুকনো কাঠের মতই খটখটে। অনেক কষ্ট করে প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে সে রাস্তায় চলে, বেশির ভাগ এক কোনায় চুপটি করে বসে থাকে।
একদিন আমি অনেক দ্বিধাদ্বন্দের দোলায় দুলে, অনেকটা সাহস করেই ওর কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলাম, কি নাম তোমার? কোথায় থাকো? বাড়ীতে কে কে আছে? কতদিন থেকে তুমি এখানে বসো? এতগুলো প্রশ্ন একসাথে শুনে মনে হয় ও ঘাবড়ে গিয়েছিলো। অবাক অবাক চোখে নিয়ে কিছুক্ষন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল তারপর বললো, আমার নাম শাহীন, থাকি গাবতলার ছোট্ট বস্তিতে। বাড়ীতে বাবা, মা আর ওরা ৪ ভাই ২ বোন থাকে এবং ভাইবোনের মধ্যে ওই সবচেয়ে বড়। ওর বাবার নির্দিষ্ট কোন কাজ নেই, সব মিলিয়ে বড় জীবনটা একটা করুন কাহিনীর অধ্যায়। আর এই ভিক্ষা করা কবে থেকে শুরু হয়েছে তা বোধ হয় ও নিজেই ভুলে গিয়েছে।
ওর কথা শুনতে শুনতে চোখ দুটো আমার ভরে উঠল কান্নায়। আমি মাঝে মাঝে ওকে টাকা দিয়েছি। বেশির ভাগই দিতে পারিনি কারণ সব সময়ই আমার মনে হয়েছে শুধুই কি ৫/১০ টাকা ওর প্রাপ্য। বেঁচে থাকার জন্য আর কি কোনই দাবী নেই ওর। নাকি আমরা সুস্থ মানুষগুলো ওদের মতো কাউকে মানুষ বলে ভাবতে পারি না।
আমার মাঝে মাঝে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা হয়- কেন এত করুনা প্রাপ্য ওদের, ওরা আমাদের মতই রক্তে মাংসে গড়া মানুষ, ওদের স্বপ্ন আছে, সুন্দর পৃথিবীতে ওদের ও ইচ্ছা হয় নানা রং এর ঘুড়ি উড়াতে। বাঁচতে ইচ্ছা হয় প্রান ভরে।
আসলে ওর শুকিয়ে গেছে শরীর আর আমাদের মন। এত স্বার্থপরতা, নির্মমতা আর বিবেকহীন হয়ে গেছি আমরা যে, হৃদয় আছে কিন্তু নেই ভালবাসা, চোখ আছে বটে কিন্তু দৃষ্টি ঘোর লাগা। কি হবে এই ভাবে বেঁচে থেকে। যদি নাই পারি একটা অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোঁটাতে...............
No comments:
Post a Comment