Title of this post : "A Story of a Tortured Girl" By Mayanur Akter Maya
Content of this post: It is a story of a girl who was being tortured by her husband. Her name is Mitali. Her parents influenced her to marry only for money. So her husband treats her as a servant, not as a wife. She is so helpless that she doesn’t have any shelter in her parent’s house. আমাদের সমাজ চায়, মেয়েরা তাদের সব আনন্দ ত্যাগ করে খুশি থাকবে সরাইকে নিয়ে। আর তা না করলে বলা হয় সে ভাল মেয়ে না। অন্য দিকে হাসি মুখে মেয়েরা সব কাজ করে গেলেও সে তার কাজের স্বীকৃতি চায়। যখন নিত্য দিনের ছোট খাটো কোন ত্যাগের স্বীকৃতি সে পায় না, তখনি শুরু হয় হতাশা। চাইলেও এই হতাশা খুব বেশি দিন চেপে রাখা যায় না। তা কোন না কোন দিন বিস্ফোরিত হবেই। এতে একদিকে যেমন সম্পর্কের ফাটল শুরু হয়, অন্য দিকে ধুকে ধুকে কষ্ট পায় মেয়ে নিজেই।
আমি এমন একজন মেয়ের কথা বলছি। মিতালী আমার ছোটবেলার বান্ধবী। ও দেখতে খুব সুন্দরী। ও যখন ৯ম শ্রেনীতে পড়ে তখন রানা নামের ধর্নাঢ্য এক ব্যক্তির সাথে তার বিয়ে হয়। সে মিতালীর চেয়ে ১৭ বৎসরের বড়। বিয়ে কি সে কথাটি বুঝে উঠার আগেই বাবা, আর বড় ভাই দুজন মিলে তাকে বিয়ে দিয়ে দেয় রানার সাথে।
ঘরই যদি নিরাপদ না হয় তবে কোথায় যাবে নারী? ঘরের বাইরে এক পা, একটি দিন মানেই অসংখ্য অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হতে হয় নারীকে। যখনি সে বিয়ে করবেনা বলে আপত্তি করল তখনই শুরু হল মিতালীর উপর বাবা ভাইয়ের অমানবিক নির্যাতন। তার ঘর থেকে বের হওয়া, স্কুলে যাওয়া সব বন্ধ করে দেয়া হল। এমনকি স্কুলের সব বান্ধবীদের সাথেও দেখা করা বন্ধ করে দিল । মানুষ কোন সমস্যার মুখোমুখি হলে তার একমাত্র আশ্রয় বা স্থান হয় ঘর, তার পরিবার-- বাবা, মা, ভাই, বোন, আত্নীয়-স্বজন। আর সেখানেই যদি হয় নির্যাতনের কেন্দ্র তখন নারীরা কোথায় যাবে বলতে পারেন?
মিতালীকে এক সপ্তাহের মধ্যে বিয়ে দেয়া হল। শুরু হল মিতালীর নতুন জীবন। নির্যাতনের এক ধাপ পার হয়ে অন্য ধাপ শুরু হল! ভাই ও বাবা দুজন মিলে সেই রানার কাছ থেকে মিতালীর বিনিময়ে মোটা অংকের টাকা নিয়েছে। রানা কম বয়সি ও দেখতে সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করতে পেরেছে, সে জন্য সে সব কিছু করতে রাজি। কিন্তু বিয়ের পর শুরু হল মিতালীর উপর অমানবিক নির্যাতন। মিতালীকে কখনও তার স্ত্রী মনে করতেন না। সব সময় তাকে মনে করা হত কেনা দাসী।
আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে যেভাবে নারীদের ক্রীত দাসী হিসেবে ব্যবহার করা হত। মিতালীর সাথেও রানা সে রকম আচরণই করত। আর সব সময় বলত, “আমি তোকে তোর ভাই আর বাবার কাছ থেকে টাকা দিয়ে কিনেছি। আমি তো আর তোকে বউ করে আমার ঘরে আনিনি, যে তোর সাথে ভাল ব্যবহার করতে হবে। তোকে সব সময় আমার কথা মত চলতে হবে। আমি যা করতে বলি তাই করতে হবে।” মিতালী সব কষ্ট মুখ বন্ধ করে সহ্য করে। তাছাড়া কি বা করার আছে তার। সে কাকে বলবে তার এই কষ্টের কথা? বাবাকে? ভাইকে? না, তারাই তো তার অসল শত্রু । সে ভাবে আমি কি করব? বাবার বাড়িতে যাবে তারাই তো তার সর্বনাশ করেছে। ভাবতে ভাবতে ভাবনার রাজ্যে ডুবে যায় ,কিন্তু কোন কুল সে খুঁজে পায় না।
কলি থেকে ফুল হয়, আর সে ফুল থেকে মালা। কিন্তু ফুল ফোটার আগেই যদি সেই কলি কোন বিষাক্ত কোন ক্রীট দ্বারা আক্রান্ত হয়, তাহলে সেই কলি থেকে কিভাবে সুস্থ ফুলের আশা করা যায়। তার স্বামী সব সময় তাকে অবিশ্বাস করত। সে সব সময় বলে মেয়েদের প্রশয় দিতে নেই। মেয়েরা শুধূই মেয়ে। তারা পুরুষের হুকুম মেনে চলবে, সংসার গোছাবে শশুর শাশুরী স্বামী সন্তান দেখাশুনা করবে। তাদের আবার চাওয়া পাওয়ার কি আছে? কষ্ট সহ্য করতে না পেরে মিতালী একদিন সিদ্ধান্ত নিল আত্মহত্যা করবে। এত বড় পৃথীবিতে তার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার একটও জায়গা নেই কোথাও।
‘মরিতে চাহিনা এই সুন্দর ভুবনে!’ মিতালীর অনেক ইচ্ছা হয় বেঁচে থাকতে এই পৃথিবীতে। কিন্তু যখনি মনে অসংখ্য প্রশ্ন জাগে কেন বেঁচে থাকব? কিসের আশায় বেঁচে থাকব? কার জন্য বেঁচে থাকব? সে কোন উত্তর খুঁজে পায় না, শুধু তার চোখের সামনে ভেসে উঠে তার মার সেই অসহায় মুখখানা! মনে পরে মায়ের কথা। যখনি দেখত মা নিজের জন্য কিছুই করছে না। ছেলে পছন্দ করে-- তাই বাড়িতে ভাল রান্না হচ্ছে , মেয়ে শুনতে ভালভাসে-- তাই এই গানটা প্রায়ই শোনা হয়। স্বামী ঘুরতে পছন্দ করেন-- তাই বেড়ানো হয় অনেক। কিন্তু শুধুই নিজের ভালো লাগার প্রাধান্য দেয়নি। মাকে মাঝে মাঝে প্রশ্ন করা হলে মা বলতেন, ‘মেয়েদের অবার পছন্দ! সবাইকে খুশি করতে পারলেই খুশি তারা । সবার খুশিতেই নিজের খুশি !’ এসব কথা ভাবতে ভাবতে দুচোখের পাতা এক করতে পারেনা মিতালী ।
একদিন সকালে মিতালী পাশের দোকান থেকে ঘুমের ঔষদ কিনে আনে, আত্মহত্যা করার জন্য। যখন রাত গড়িয়ে সন্ধ্যা হল, সবাই যখন ঘুমে বিভোর, তখন মিতালী ঘুমের ঔষধ খেয়ে শুয়ে পরে। হঠাৎ কিভাবে যেন রানা বুঝতে পারল মিতালী কিছু একটা ঘটিয়েছে। মিতালী মারা যাচ্ছে সেই জন্য না -- নিজেকে বাঁচানোর জন্য মিতালীকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। আর তার বাবা, ভাইয়ের কাছ থেকে লিখিত ডকুমেন্ট রাখল-- যদি কোন দিন কোন কারণে মিতালী মারা যায় এর জন্য রানা কোন রকম দায়ী থাকবেনা!
রানা এতদিন মিতালীকে মানসিক নির্যাতন করত। এখন সে শারীরিক নির্যাতন করতে শুরু করল। ঘরের বাহিরে বের হওয়া বন্ধ করে দিল। রানা সিদ্ধান্ত নিল মিতালীকে আর এভাবে রাখবেনা, সে সন্তানের বাবা হতে চায়। আর মিতালীর বয়স তখন ১৫ বছর চলছে। এই পুরুষ শাসিত সমাজে নারীদের কোন মূল্যই নেই। সেখানে সন্তান নেওয়া , না নেওয়ার সব সিদ্ধান্ত পুরুষেরই। নারীরা হচ্ছে তাদের খেলার পুতুল; যেভাবে নাচাবে, সেভাবেই নাচতে হবে।
মিতালী সন্তানের মা হতে চলেছে। এত যন্ত্রনার নির্যাতনের মাঝেও কি মিতালী পারবে একজন সুস্থ সন্তানের মা হতে? নানা প্রতিকুলতা পার হয়ে মিতালী মা হলেন। তার যমজ সন্তান হল। সে তাদের নাম রাখল সবুজ ও সাথী।
এখন রানা মিতালীর উপর নির্যাতন করে অভিনব পদ্ধতিতে। মিতালী মা হয়ে গেছে এখন সে আবার বিয়ে করবে। মিতালী দু’সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সব কষ্ট সহ্য করে নিচ্ছে। তাহলে মেয়েরা কি পাচ্ছে এই পৃথিবীতে এসে? প্রতিটি পদে পদে নির্যাতিত হচ্ছে নারীরা।
দেখা যায়, পরকীয়া আর যৌতুকের জন্য স্বামী ও তার আপনজনদের সহযোগিতায় স্ত্রীকে হত্যা করা হয়। কলঙ্কিত হয়ে সংসার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উপায় না পেয়ে মিতালীর মত অনেক মেয়েরাই ধুকে ধুকে মরে, কেউ বা আবার লাশ হয়ে বের হয়। তাই এগুলো থেকে বঞ্চিত হলে কতগুলো জীবন ধ্বংসের পথে চলে যায়। যেখানে অভিভাবকরা নিজেদের সুখ শান্তি বিসর্জন দিয়ে সন্তানদের সঠিক পথে রাখার জন্য আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে এই আভিভাবক অনন্দ-ফুর্তি করার জন্য সন্তানদের দুনিয়াতে এনে তাদেরকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে।
মিতালীর মত কত নারীরা আমাদের দেশে ঘরে বাহিরে প্রকাশ্যে গোপনে নির্যাতিত হচ্ছে। এই নির্যাতন থেকে নারীদেরকে রক্ষা করতে হলে আমাদের সবার মানসিকতার পর্রিবতন করতে হবে। মেয়েদেরকে মানুষ ভাবতে হবে। কারণ মেয়েরাও মানুষ ।
No comments:
Post a Comment