অনেক দিন আগের কথা। গ্রামের নাম আমতা হওড়া থেকে ৩-৪ ঘন্টার পথ। শহরের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যমে ছিল ট্রেন। তখন গ্রামে ছিল না পাকা রাস্তা, ছিল না বিদুৎ, চারপাশে গাছ-পালার ছিল সমারোহ দু-চারটে বাড়ি তাও অনেক দুরে। সে সময়কার একটি কাহিনী............
যেই কথা সেই কাজ। চাচীর বোল শামুর খালা সম্পর্কে হলেও শামুর সাথে জোহরাকে ১৫ ভরি স্বণ দিয়ে বিয়ে দিলেন। ছোট মেয়ে লাল ছোট সাড়ি ও গহনা পেয়ে খুব খুশী। গহনা গুলো ছুয়ে ছুয়ে দেখতে লাগল এবং খিল খিল করে হাসতে লাগল। বউ দেখার জন্য কয় গ্রামের লোক এক জায়গায় হল এবং সকলেই বউয়ের রূপের প্রশংসা করল। ছোট বউ রূপী মেয়েটার নাকের নথ এত্ত ভারী ছিল যে সে পানি খেতে পারছিল না। সে কাউকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল “মোর নতটা খুলে নেওনা মুই একটু পানি খাই।” সে নাকে কষ্ট পাচ্ছে বুঝে শামুর মা নথটা খুলে নিল। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে দেখে জোহরা বলল “মোকে বাড়ি দিয়ে আস না সাঁঝ হয়ে এল সে মুই বাড়ি যাবুনি।” নানী দাদীরা বলল এটাই তো তোর স্বামীর বাড়ি এখানেই তো তুই থাকবি। তারপর রাতটা কাটল শামুর মায়ের কোলে সে তার ছেলের এই ছোট বউকে খুব আদর যত্নে রাখলেন। সকালে সেই ছোট মেয়েটির বাপের বাড়ি যাওয়ার পালা। শামুর মা তাকে সুন্দর করে সাজিয়ে পালকিতে উঠাতে গেলেন ছোট মেয়ে জোহরা বলে উঠল “মুই ঘর যাচ্ছি মোর নাকের নতটা দেওনা গো” হঠাৎ ছোট মুখে এই কথা শুনে হাসির একটা সোরগোল পড়ে গেল সবার মধ্যে। শামুর মা বলল “তাই তো গো নাকের নথটা তো দেওয়া হয়নি।” বউ বিদায়ের সময় কথা হল মেয়ে বড় হলে অনেক জাকজমক ভাবে বউ উঠায় নিয়ে আসা হবে। ছোট্ট বধু জোহরা শ্বশুর বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি রওনা হল।
দিন যায়, মাস যায় বছর যায় ৫ বছরের মেয়ে ৮ বছর বয়স হয়েছে। বাড়ির বাইরে বের হলে গ্রামের লোকেরা তাকে জ্ঞান দিয়ে বলে তোমার বিয়ে হয়েছে তুমি বড় হচ্ছ পাড়ায় এত বেরিও না শ্বশুর বাড়ির লোকেদের চোখে পড়লে তোমাকে মন্দ বলবে। এরই মধ্যে জোহরার বাবা মারা গেল। আয় করার মত কেউ ছিল না বোনদের মধ্যে ছোট জোহরা একমাত্র ভাই সে ও তখন গ্রামের স্কুলে লেখাপড়া করত। বাবা মারা গেছে কি আর করার এখন সংসারের হালতো তাকেই ধরতে হবে। ১৫-১৬ বছরের ছেলে বুদ্ধি আর কতটুকু সে সিন্ধান্ত নিল জোহরার গহনা বিক্রি করে ব্যবসা করবে জোহরা বড় হওয়ার আগে তার ব্যবসার লাভের অংশ দিয়ে পুনরায় গহনা বানিয়ে দেবে তার বোনকে। কথাটা গোপন থাকলনা কার মাধ্যমে যেন পৌছে গেল জোহরার শ্বাশুড়ির কানে। বিদ্যুৎ চমকে উঠল সে বিয়ের গহনা বিক্রি করাটাকে সহজ ভাবে একেবারেই মেনে নিতে পারলেন না তিনি। তিনি জোহরার বাপের বাড়ি খবর পাঠিয়ে দিলেন যে ভাই বোনের শ্বশুড় বাড়ির গহনা বিক্রি করতে পারে সেই বাড়ির মেয়েকে আমি আমার বাড়ি উঠাবোনা। শামুর কানে গেল এই কথা তখন সে কলকাতায় ব্যবসা করত। সে তার মায়ের সিন্ধান্ত মেনে নিতে পারল না। চিন্তা করতে লাগল কিভাবে বউ আনা যায়। শামু তার মামার কাছে গেল তিনিও কলকাতায় চাকুরি করতেন। মামাকে বললেন আগামী সাপ্তাহিক ছুটি রবিবার ডিপে যাবে বউ আনতে তুমি আমার সাথে থাকবে। সপ্তাহের ছুটিতে কেউ বাড়ি ফিরল না। একটা নৌকা ভাড়া করে বিকেল পাঁচটায় রওনা হল তারা ডিপের উদ্দেশ্যে জোহরাকে আনতে। তাদের ডিপে পৌঁছতে রাত প্রায় এগারটা বেজে গেল। সে সময়কার দিনে রাত্রেই শ্বশুড় বাড়ি যাওয়ার রীতি ছিল, দিনে জামাই শ্বশুড় বাড়ি যাওয়াটা লজ্জাকর মনে করত। শ্বশুড় বাড়ি থেকে কিছু দূরে নৌকা ভিড়িয়ে মামাকে লুকিয়ে বসে থাকতে বলল, যতক্ষণ না শামু বউ নিয়ে আসে। জামাই দেখে জোহরার বাপের বাড়ির লোকজন খুবই খুশী হল। জামাইকে খাওয়ানোর জন্য তোরজোর পড়ে গেল। মুরগী রান্না, পায়েস, হরেক রকমের পিঠা, আন্ডা ভাজা আরো অনেক প্রকার খাবারের আয়োজন করল তারা। রান্না-বান্না আর খাওয়া-দাওয়া শেষ করতে রাত প্রায় দুটো বাজে। জামাইকে সুন্দর করে পরিপাটি বিছানা করে শুতে দিল। গ্রাম যখন পুরোপুরি নিঃশব্দ হয়ে গেল রাত বাজে তখন প্রায় তিনটার কাছে। শামুর চোখে ঘুম নেই তার মামাকে রেখে এসেছে খালের পাড়ে নৌকা নিয়ে অপেক্ষা করছে। কোন অজুহাতে জোহরাকে বাইরে নিয়ে যাবে সেই চিন্তায় সে ব্যস্ত। শামু জোহরাকে বলল আমি প্রসাব করব আমার সাথে একটু বাইরে চল, জোহরা বলল ভয় পাচ্ছ কেন তুমি তো বড় গো একাই যাও না। শামু বলল আমি একা গেলে আমাকে শিয়ালে খেয়ে ফেলবে তুই সাথে চল। জোহরা তার সাথে বাইরে বের হল শামু বলল একটু এগিয়ে চল জোহরা আপত্তি করল শামু বলল আর একটু এগিয়ে চল জোহরা আর একটু এগিয়ে গেল বাড়ি থেকে কিছু দূরে যেতেই শামু জোহরার মুখ চেপে কোলে উঠিয়ে নিয়ে নৌকার দিকে ছুটতে লাগল। নৌকায় জোহরাকে উঠিয়ে তারা রওনা হল। শামুর বাড়ি আসতে ভোর হলে গেল। জোহরাকে মামার সাথে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে শামু কলকাতায় চলে গেল মামাকে বলল জোহরাকে যেন মা ঘরে উঠায় জোহরাকে ঘরে না উঠালে সে বাড়ি ফিরবেনা। মায়ের সামনে দাড়ানোর মত সাহস তার ছিলনা। একারনে সে মামাকে দিয়ে জোহরাকে বাড়ি পাঠায় নিঃষ্পাপ ছোট মেয়ের দিকে তাকিয়ে সে তার খোভ ভুলে যায় আর তার ছেলের মনের ইচ্ছাও বুঝতে পারল বউ যত্নসহকারে ঘরে উঠালো আর তার ভাইকে বলল আমার ছেলেকে বাড়ি আসতে বল।
কয়েকদিন পর শামু বাড়ি আসল তারা সবাই মিলে সিন্ধান্ত নিল আবার যাকযমক করে তারা বউ আনবে। জোহরাকে আবার বাপের বাড়ি পাঠানো হল ভুল বুঝা বুঝির অবসান ঘটল। কয়েক বছর পর অনুষ্ঠান করে বউ আনার সিন্ধান্ত নেওয়া হল। তখনো জোহরার ভাইয়ের ব্যবসার তেমন কোন উন্নতি হয়নি। তাই শামু নিজেই গ্রামের লোকজনকে নিজের খরচে ভোজন করালো। বউকে আবার স্বণ ও বিয়ের যাবতীয় জিনিস পত্র দিয়ে অনুষ্ঠান করলেন। পালকি, ঘোড়ার গাড়ি এবং ব্যান্ড পাটি নিয়ে শ্বশুড় বাড়ি থেকে রাজকীয়ভাবে বউকে নিয়ে এলেন।
1 comment:
tarpor ki holo??
Post a Comment