Title of this post: Flood and my Jacket by Helen Sarkar
ঘটনাটা খুবই ছোট হতে পারে কার কাছে কিন্তু এই ছোট একটি ঘটনার মাঝে আছে হয়তো কোন করুন কান্না। আসলে হয়েছিল কি খুলেই বলি ১৯৯৮ এর বন্যার কথাতো সবারই জানা। আর বন্যা যেন আমাদের খুব আপন কেউ, বছরে এক আধবার না এলে যেন চলেই না। সে যাক তখন আমরা ফরিদপুর শহড়ে টেপা খোলা বেড়ী বাধের কাছে থাকতাম যদিও আমাদর বাড়িটা ফরিদপুরের মধ্যেই ছিল কিন্তু কি আর করা মার চাকরির জন্য ঐ এলাকায় আমাদের থাকতে হয় যা হোক সে বেশ মজারই ছিল দিন গুলি একপাশে মায়ের অফিস ঘড় অন্য পাশে থাকতাম আমরা মানে আমরাদেরকেই তো সারাদিন থাকতে হত বাসায় একটু সুযোগ পেলেই হল অমনি মার অফিস ঘরে হানা দিয়ে বলতাম অনেক তো হল মা, কখন বাসায় আসবে? মা উত্তরে বলত কখন আসবো কিরে আমিতো সারাদিন বাসায়ই আছি।
একদিন আমি আমাদের সবার শীতকালের সোয়েটার, জেকেট গুলো ধুয়ে রোদে শুকানোর জন্য দিয়েছিলাম কিন্তু গরম কাপড় বলে তো কথা ওগুলো কেন এত তাড়াতাড়ি শুকাবে, যাই হোক -আমার জ্যাকেট টা ছিল মোটা জিন্স কাপড়ের, আকাশি রং এর। বলতেই হয় ওটাকে আমি অনেক পছন্দ করতাম। সেদিন সন্ধাবেলায় দেখি মা সব কাপড় উঠাচ্ছে কিন্তু আমার জ্যাকেট টা আর উঠালোনা আমি মাকে বললাম, আমার পেটমোটা জ্যাকেটটা কি দোষ করলো যে ওটা তুমি তুললে না। মা বলল- তোমার এই জামা কেউ নেবেই না। তাই ওটাকে বারান্দার তারে রেখেই রাতটা একঘুমে কাভার করলাম।
কিন্তু ভোরে বারান্দায় এসে দেখি কোথায় আমার জ্যাকেট তার বদলে তার গুলো ছিরে পরে আছে মেঝেতে। আমার এত পছন্দের একটা জিনিস চুরি হয়ে গেল---এই দুঃখে আমার পাথর হওয়ার উচিৎ ছিল কিন্তু আমি একবার চিৎকারও দেইনি তার বদলে যে নিয়েছে তার জন্য সহানভুতি এলো। মনেমনে ভাবলাম যে নিয়েছে সেতো আসোলেই চোর না, ওকে চুরি করতে হয়েছে একমুঠো ভাতের জন্য। আমার কেন যেন মনে হয়- আসলে না আমরা যারা ভালো আছি তারাই সমাজের এক শ্রেণীর মানুষকে চোর হবার শিক্ষা দেই, ওদেরকে পরোক্ষভাবে বোঝানোর চেষ্টাকরি, সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার কোন অধিকার তোমাদের নেই। তোমরা নষ্টহয়ে যাবে, চুরি করবে, ছন্নছাড়া জীবন তোমাদের জন্য।
প্রতি বছরই বন্যা হয়, আর সে সময়ের অপেক্ষায়ই যেন আমরা থাকি-কিছু সাহায্য দেওয়ার সময় নিজের ক্যামেরা বন্দি ছবি। অসহায় মানুষের কান্না ভেজা চোখ-আর ত্রান দিতে আসা মানুষের গর্বের হাসি। কে কত দিলাম তারই যেন একটা অদৃশ্য প্রতিযোগিতা আমাদের মধ্যে। আমরা নাকি সভ্য জগতের মানুষ- আমরা ছোট সাহায্যের প্যাকেট দিয়ে কিনতে চাই অসহায় ক্ষুধার্ত কোন শিশুর কান্নাকে, বৃদ্ধের আর্তনাদকে সহায়, সম্বলহীন মানুষগুলোকে। কিন্তু প্রতিকার করতে চাই না- আর যেন বন্যা না এসে দুকুল ভাসিয়ে যেন আমাদের সম্পদকে নষ্ট না করে দেয়, না-ভাসিয়ে দেয় আমাদের অশ্রুর সাগরে।
No comments:
Post a Comment