পিঠা বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী খাদ্য। এদেশের মানুষের অত্যন্ত প্রিয় খাদ্য হচ্ছে পিঠা। গ্রাম অঞ্চল ও শহর উভয় স্থানেই পিঠা সমান ভাবে জনপ্রিয়। শীতের সকালে গরম পিঠা অতুলনীয়। আমাদের দেশের শহর অঞ্চলে এই পিঠা বিক্রি করা হয়। যারা এই পিঠা বিক্রি করেন তাদের বেশির ভাগই নারী। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে পিঠা নারীগন রাস্তার পাশে ফুটপাতে পিঠা তৈরি ও বিক্রি করে থাকে এবং বেশির ভাগ ক্রেতাই রিক্সাচালক, সি.এন.জি চালক প্রভৃতি।
সাম্প্রতি, আমি একজন পিঠা নারীর সাথে কথা বলেছি। তার নাম জরিনা বেগম। সে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পিঠা তৈরি করে। একটি মাটির চুলা, একটি মাটির হাড়ির মাধ্যমে পিঠা তৈরি করে থাকে। পিঠা তৈরির জন্য চালের গুড়া, গুড় ও হাড়ির উপরে দেয়ার জন্য একটি পাতলা কাপড় লাগে। খুবই কম মূল্যে এই পিঠা বিক্রি হয়ে থাকে। জরিনা বেগম বলেছে পিঠা বিক্রির অর্থ দিয়ে তার সংসার চালানোর চেষ্টা করে। তার স্বামী একজন রিক্সা চালক। জরিনা বেগমের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। অর্থের অভাবে তারা স্কুলে যেতে পারে না। দুঃখ -কষ্ট ও অভাব-অনটনের মধ্যে জরিনা তার জীবন নিবার্হ করছে। জরিনা বেগম তার পরিবার নিয়ে একটি দূষিত পরিবেশে বাস করে। তারা গরিব হওয়ার কারনে বঞ্চিত হচ্ছে বিশুদ্ধ খাবার, পানি এবং ভাল আশ্রয় থেকে এবং তার শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে সুশিক্ষা থেকে। কিন্তু শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। কোন জাতি শিক্ষা ছাড়া উন্নতি করতে পারে না। আমি দেখেছি, জরিনা এবং তার শিশুরা পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। তারা বন্যা, অতিবৃষ্টি, মশা এবং দূর্গন্ধ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় অনেক কষ্ট করে। আমার মনে হয় তাদের অবস্থা খুবই দুঃখজনক। এই অবস্থায় জীবন খুবই কষ্টকর এবং অভিশাপের মত। সে বলেছে পিঠা তৈরির জন্য চাল ও গুড় কিনতে প্রচুর খরচ হয় যা তার জন্য কষ্টকর। সে ভাঁপা পিঠা, চিতই পিঠা ইত্যাদি নানা ধরনের সুস্বাদু পিঠা তৈরি করে থাকে।
আমি তার সাথে কথা বলার সময় তার তৈরি দুঠো পিঠা খেয়েছি। সে খুব খুশি হয়েছে এবং তার চোখ দিয়ে গড়িয়ে দুফোঁটা পানি নেমে গিয়েছিল। সে আরও বলেছে, “বুজি আমাগো অনেক দুঃখ, মোগো দেখার কেউ নেই।” কিন্তু হাজার দুঃখ ও অভাবের মধ্যেও জরিনা বেগমের তৈরি পিঠা প্রচন্ড মিষ্টি ও সুস্বাদু এবং অতুলনীয়।
No comments:
Post a Comment