বাঃ দেখতে তো ভালই লাগছে, কিরে বিয়ে করবি নাকি? এই যে ডার্রলিং কোথায় যাচ্ছ? একা একা হাঁটছো কেন? এই কথাগুলো আমার দিকেই তীরের মতই ছুরে দিচ্ছিল ওরা। ওরা যে কে তা তো বলা হলো না। ওরা আসলে সব সময়ই দাঁড়িয়ে থাকে রাস্তার বাকেঁ বাকেঁ, কখন কাকে বলবে তাদের বিকৃত নোংরা কথা। আর ওদের শিকার তো গোটা সমাজেরই নারীরা।
আমিও তো এই নারী সমাজের একজন। আমাকেই বা কেন বাদ দেবে ওরা। প্রতিদিন নানা ধরনের বিকৃত অশালীন কথাশুনে আমার গায়ের চামড়া মনে হয় মোটা হয়ে যাচ্ছে নতুবা বোধশক্তি হারিয়ে ফেলছি আমি। এই আমার মতই কত হাজারো মেয়ে এই অসভ্য বর্বরদের এই অত্যাচার সহ্য করে নীরবে চলে যায়, আর এভাবেই অত্যাচারিত হয় গোটা এক জীবন। নতুবা সমাধান একটাই আছে আর তা এই পুরুষ শাসিত সমাজ খুব সাদরে গ্রহণও করেছে তা হলো ঠান্ডা মাথায় গায়ের ওড়না অথবা শাড়ী দিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে পড়া, নয়তো বিষাক্ত কিছু খেয়ে চিরদিনের মত সব মমতার সম্পর্ক ছিড়ে হারিয়ে যাওয়া মৃত্যুর পথে।
ভাবতে অবাকই লাগে আবার ওদের মুখেই যখন শুনি মেয়েরা মায়ের জাত, ওদের সম্মান করতে হয়। হ্যাঁ, সম্মান তো ওরা ঠিকই জানায় তবে পন্থাটা একটু ভিন্ন প্রকৃতির হয়। আর তাই তো প্রতিদিন খবরের কাগজে দেখা যায় কোন অসহায় এসিড দগ্ধ নারীর ছবি নতুন কোন ধর্ষিত নারীর আর্তচিৎকার। এভাবেই নারীরা সম্মান পেয়ে আসছে দিনের পর দিন।
কিন্তু আমি ভাবি কেন এগুলো? ওরা তো আমার সাথে কথা ছাড়া আর কিছুই করছে না। কিন্তু এত কুৎসিত ছবি যখন চোখের সামনে ভেসে ওঠে, যখন দেখি কোন অসহায় বঞ্চিত নারীর কান্না তখন আমার বুকের ভেতরটাও যে হু-হু করে কেদেঁ ওঠে ওদের জন্য। আমার জীবনেও যে এরকম কিছু ঘটবে না তারই বা নিশ্চয়তা কি?
কিন্তু ভয় পেয়ে চার দেওয়ালের মাঝে বন্দী হয়ে নিজের ভবিষ্যতটা অন্ধকার করে লাভ কি? অনেক তো মানসিক যন্ত্রনা আর কেদেঁছি, কেউ কি দেখেছে না সাহায্য করেছে কোন অসহায় নারীকে। তাই মাথা নিচু করে নয়, বাঁচতে হবে প্রাণ ভরে। সবাই মিলে ভেঙ্গে দিতে হবে ও অসভ্যতার মেরুদণ্ডকে। কেন পারবে ওরা আমাদের শক্তির কাছে। প্রাপ্য শাস্তি দিতে হবে এক একটা জংলী জানোয়ার কে। ওদের বুঝিয়ে দিতে হবে। আধিকার সবার সমান।
তাই স্বপ্ন আর শক্তি আছে মনে, হাল ছেড়ো না বন্ধু বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে। প্রতিবাদ আর প্রতিরোধ গড়ে তোলো ওদের বিরুদ্ধে। স্বপ্ন দেখো সুন্দর একটি জীবনের আর বাস্তব করে তোলো নিজের মেধা আর পরিশ্রম দিয়ে। ভয় পেয়ে বন্দী থেকো না- তাহলে এই সুন্দর পৃথিবী হয়তো বঞ্চিত হবে তোমার অমূল্য কোন উপহার থেকে। নিজের ভেতরের শিকড়টাকে ছড়িয়ে দিয়ে সব সুন্দর, ভাললাগার, আনন্দের থেকে রস নিয়ে বেঁচে থাকো অনন্তকাল ধরে। সভ্যতার শেষ স্তরে।
No comments:
Post a Comment