Content of this post: A mother wrote on her child’s thinking and emotion.
আমার সেই ছোট সোনামণির কথা বলছি। যাকে ঘিরে আমার সমস্ত সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা । যাকে ঘিরে আমার সকল আশা। সে হচ্ছে আমার একমাত্র মেয়ে, কাজী জান্নাতুল ফেরদৌস (মীম)।
শুধু আমি কেন? প্রত্যেক মা-ই তার সন্তানদেরকে নিয়ে এরকম করে স্বপ্ন দেখে। আমিও দেখি। আমার সমস্ত মন প্রাণ জুড়ে তার অস্তিত্ব। সেদিনের কথা বলছি। তারিখটা ছিল ২৮/১২/০৭। সেদিন ছিল মীমের ফুপাতো বোন ইয়াসমিন দোলন (বৃন্তি)-র জন্ম দিন। মীম বৃন্তির চেয়ে বয়সে বড়। বৃন্তির জন্ম দিন পালন করা হবে ফ্যান্টাসী কিংডমে। আমরা সবাই সেখানে গেলাম। মীম তো খুব খুশি। যাওয়ার আগে প্রতিমুহুর্তে আমাকে জিজ্ঞেস করে বলত, “আম্মু আর কতদিন পর ২৮ তারিখ আসবে?” আমার অনেক সময় অনেক জায়গায় যেতে ইচ্ছে করে না। তারপরও নিজের অনিচ্ছা থাকা সত্বেও যেতে বাধ্য হই। কারণ আমার মনে হয় আমার ইচ্ছের চেয়ে বেশী বড় হচ্ছে আমার মেয়ের আনন্দটা।
নতুন নতুন জায়গায় যাবে, নতুন কিছু দেখবে, অজানা কে জানবে। আমি সেজন্য একটু সময় পেলেই আমার সোনামণিকে কোথাও না কোথাও নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। সেই দিন ফ্যান্টাসী কিংডমে আমার মেয়ের আনন্দ দেখে সত্যি আমি অনন্দিত হয়েছি।
ছোট্ট মনের যে শুধু আনন্দ তা নয়, ছোট মনে যত তাড়াতাড়ি আনন্দ পায়, সে রকম আবার দুঃখও পায় অনেক। যা সহজে বুঝানো যায় না। সবাই মিলে যে যার ইচ্ছে মত বিভিন্ন রাইডারে চড়ে সন্ধ্যা ৭ টায় কেক কাটার জন্য একসাথে জড়ো হলাম। কেক কাটার আগে সারাক্ষণ শুধু আমাকে বলতে লাগল, “কখন কেক কাটা হবে আম্মু?” যখনি কেক কাটা শুরু হল সবাই “হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ বৃন্তি” ...... বলতে লাগল তখনি মীমের মন খারাপ হয়ে গেল। আমার কাছে এসে মন খারাপ করে বলতে লাগল, “আম্মু সবাই শুধু বৃন্তি বলে! কেউই আমার নাম বলেনা কেন?” তাকে আবার বলতে হল, “তুমি কি বুঝতে পারছ না আজ তো বৃন্তির জন্ম দিন, তাই বৃন্তিকে বলছে।”এই কথাটা ওকে অনেক বার বুঝাতে হচ্ছিল আমাকে। শিশু মনে সাধারণ কথাই লেগে যায়। আবার সহজে তা ভুলেও যায়। এ যে ছোট্ট মনের চিন্তা চেতনা সত্যি খুব আনন্দময়। এই কথাগুলো অন্য লোকদের কাছে ভাল না লাগলেও বাবা মা’র কাছে স্মৃতিময় হয়ে থাকে আজীবন ।
ছোট্ট মনে কতশত প্রশ্ন জাগে, নতুন কিছু দেখলেই সেটা জানার যে আগ্রহ তা ছোটদেরকে না দেখলে বুঝা যায় না। কেক কাটা শেষ আবার তার বায়না, “আম্মু আমার জন্ম দিন কখন আসবে?” আমি যখন বললাম ১ জুন, মীম বলল, “এত দেরি কেন?” আমি বললাম, “বেশী দিন নেই। এই তো কিছু দিন পরই তোমার জন্ম দিন।” সে বলল, “আম্মু জন্মদিন কিন্তু এখানে করতে হবে।” এই যে, ছোট মনের চাওয়া পাওয়া। চেয়ে যদি কিছু না পায়, তাহলেই ওদের মনের মধ্যে একটা কষ্টের জন্ম হয়। সেই কষ্ট সহজে দূর করা যায় না তাদের মন থেকে। তাই আমি যেটা করতে পারবনা সেটা কখনও বলিনা। মীম আবার বলতে লাগল, “আম্মু আমি জানি তুমি আমার জন্ম দিন এখানে করবে না।” আমি বললাম, “কি ভাবে বুঝলে ?” মীম বলল, “এই যে তুমি কিছু বলছ না। আমি জানি তুমি আমার সাথে মিথ্যে কথা বলনা। তাই চুপ করে আছ।”
এক দিন আমি ওকে মেরেছি, খেতে চায়না তাই। ওর বাবা আমাকে যখন বলল, “মেয়েকে কেন মেরেছ? বাচ্চাদেরকে এরকম করে মারতে হয় না। আর কোন দিন মারবে না।” সে কথা শুনে আমার মেয়ে কান্নার মাঝে বলতে লাগল, “বাবা আমার আম্মুকে কিছু বলবে না। আমার আম্মুর কোন দোষ নাই। আমি দুষ্টমি করেছি তাই আম্মু মেরেছে।” ওর বাবা হাসতে হাসতে আমাকে বলল, “দেখ মেয়ে কি বলে। যার জন্য তোমায় বললাম সেই আমাকে উল্টা বলছে।” ওর বাবা আবার বলল, “তাহলে তো তুমি জান দুষ্টমি করলে মারবে, তাহলে দুষ্টমি কর কেন?” মীম বলল, “বাবা আমি তো ছোট্ট আর ছোটরা তো মাঝে মাঝে দুষ্টমি করেই।” আমার মেয়ের এই কথার পর আমি আর ওকে দুষ্টমি করলেও মার দেই না। কেউ যদি কখন ওকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কাকে সবচেয়ে বেশী ভালবাস?”মীম সবসময় বলে “বাবা ও মাকে”। সব সময় বলে বাবা মা দুজনকেই। কোন দিনও এক জনের কথা বলে না।
মাঝে মাঝে খুব মন খারাপ করে বসে থাকে। যদি বলি মা-মণি, “কি করছ এখানে আস।“ মীম বলে, “আমাকে কিছু বলনা আমার মন খারাপ!!” সে বলে চুপ করে বসে থাকে। আমার মেয়ের খুব রাগ। সে যা বলবে সবার তাই শুনতে হবে। যদি তার কথা কেউই না শুনে সেই তাকে আর পছন্দ করে না তার ছায়াটা ও দেখতে পারে না। যা চাইবে তাই দিতে হবে। আমি একদিন মেয়েকে বলি, “মা-মণি তোমার যে রাগ আল্লাহ জানে তুমি বড় হয়ে কি হবে।“ মেয়ে আমাকে বলে, “আম্মু তুমি না কিছু বুঝনা, আমি বড় হয়ে ডাক্তার হব।” আমি যদি কোথায় ওকে না নিয়ে চলে যাই। খুব মন খারাপ হয়। বলে, “আম্মু আমি না বলেছি যে তুমি অফিসে গেলে আমাকে নিয়ে যেতে হবে না। আর অফিস ছাড়া যে কোন জায়গায় যাও আমাকে নিয়ে যাবে।”
No comments:
Post a Comment