Saturday, September 1, 2007

সেই ছেলেটি

Title of this post: The boy (Shei cheleti) by Mayanur Akter
Content of this post: Sympathetic feelings of the author about a man who sleeps in the hospital (works as the attendant of patient telling them that he has patient in the hospital (but he does not have any patient) at night as he has no house to live at Dhaka. He can not live in rented house as he does not have enough money. In day time he pulls rickshaw and at night he sleeps in hospital. He is earning/saving money for her family (Mother, and sibling).

মনে পরে সেই ১৯/২০ বছরের ছেলেটির কথা
ছেলেটির কথা মনে হলে এখনও আমার দুই চোখ অশ্রু সজল হয়ে যায়কিন্তু আমি পারিনি ওর জন্য কিছু করতে এমনকি পারিনি তাকে একদিনের জন্যও আশ্রয় দিতে

যে ছেলেটির কথা বলছি: আমার শ্বশুর খুবই অসুস্থ, তাকে নিয়ে আমরা সবাই হাসপাতালে ছুটাছুটি করছিলামতারপর বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে শেষ পর্যন্ত এক হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হলএ্যাম্বুল্যান্স্‌ থেকে আমার শশুরকে নামানোর পর এক যুবক হাতে একটা কাপড়ের ব্যাগ, সে আমাদের পাশে পাশে ছুটছেমনে হয়েছিল সে আমাদের কেউ একজনসবাই তো আব্বাকে নিয়ে ব্যস্তকিন্তু আমি বুঝতে পারছিলাম না কে এই ছেলে আমি দেখতে পেলাম সেই ছেলেটি একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমুচ্ছে; পাশে রাখা সেই কাপড়ের ব্যাগটিঅন্যরা দেখলে মনে করবে সে আমাদের সাথে এসেছে আমি কিছু বুঝতে পারছিলাম না আমি বাসায় চলে এলামতার পরদিন যখন আমি আবার হাসপাতালে গেলাম; রাতের বেলা কেবিন থেকে বের হয়ে দেখলাম যে, সেই ছেলেটি আজও ওখানে ঘুমুচ্ছে আমার শব্দ শুনে সে জেগে গেছেআমি ওর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম সে আমাকে কিছু বলতে চায়আমি কাছে গিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম আপনার কি কেউ এখানে ভর্তি হয়েছে? ছেলেটি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, নাআমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে আপনি এখানে কি করছেন প্রতিদিন ?’ সে বলল, আমার কথা কি আপনার বিশ্বাস হবে ? আমার কথা শুনার মত সময় কি আপনাদের আছে?’ আমি বললাম, হ্যাঁ বলুন আমি আপনার সব কথা শুনব

সে বলতে লাগল, আমার বাবা নেইআমি বাবা মার বড় সন্তানতিন বোন আর মাআমার মা খুব অসুস্থটাকার অভাবে চিকিৎসা চলছে না আমি অনেক কষ্ট করে এইচ.এস.সি পাশ করেছি টাকার অভাবে আর লেখা পড়া হয়নিঅনেক চেষ্টা করেও কোন কাজ পাচ্ছিলামনা মায়ের চিকিৎসার টাকা দিতে বোনদেরকে দু-বেলা দুমুঠো ভাত আমি দিতে পারিনিএসব কষ্ট সহ্য করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত চলে এলাম এই ঢাকা শহরে! এখানে এসে বুঝতে পারলাম আমি কতটা অসহায়, পৃথিবী কত কঠিন! মানুষ কত নির্মম! এখানে সবাই খুব ব্যস্ত নিজেদেরও প্রয়োজনেএক মূহুর্তের জন্যও কেউ কাউকে সময় দিতে চায়না আমি বললাম, আসলেই সবাই খুব ব্যস্ত, তাই সময় দিতে পারছেনা
ছেলেটি আবার বলতে লাগল, একদিকে মায়ের সে অসুস্থ মুখ অন্যদিকে বোনদের ক্ষুর্ধাত মুখ আমার চোখের সামনে প্রতিনিয়ত ভেসে ওঠেআমি ভাই হয়ে ওদের জন্য কিছুই করতে পারিনি তাই উপায় না পেয়ে অনেক বলে কয়ে এক গ্যারেজ থেকে একটা রিক্সা নিয়েছিলামপ্রতিদিন যা পেতাম তাতে ওদের টাকা জমা দিয়ে আমার থাকত ৭০/৮০ টাকাএই টাকা দিয়ে আমি নিজে চলব নাকি বাড়িতে মা, বোনদের জন্য পাঠাব? ওরা তো আমার আশায় বসে আছে, তাই আমি সারাদিন এক বেলা খাই, অনেক দিন না খেয়েও থাকি কিন্তু রাতে তো কোথাও থাকতে হবে তাই সন্ধ্যার পর রিক্সা গ্যারেজে জমা দিয়ে আমি ছুটতে থাকি বিভিন্ন হাসপাতালে

আমি জিজ্ঞেস করলাম, হাসপাতালে কেন ?’ উত্তরে সে বলল, বুঝতে পারছেন না, হাসপাতালে কেন ?’ আমি মাথা নেরে বলাম, নাছেলেটি বলল, অবশ্য আপনাদের মত লোকরা আমাদের মত এই গরীবদের দুঃখের কথাগুলো না বুঝার-ই কথাআমি কিছু বুঝতে না পেরে চুপ করে আছিসে আবার বলতে লাগল, একেক দিন একেক হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি, যখন দেখি কোন একটা এ্যাম্বুল্যান্স তখনি পাশে পাশে থাকি এবং রোগীর সাথে যে মানুষ আসে তাদের সাথে ঢুকে যাইহাসপাতালের লোক জন মনে করে আমি সে রোগীর কেউ হইতারপর যতদিন সে রোগী থাকে আমিও ততদিন থাকিসারারাত এই চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে থাকি, সকালের অপেক্ষায়যখনি রাত শেষে ভোর হয় তখনি রিক্সার জন্য গ্যারেজের দিকে ছুটতে থাকিএভাবে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে আমার রাত চলে যায় আর দিন চলে রিক্সায়এভাবে মাসের পর যে টাকা জমে সেগুলো দেশের বাড়িতে আমার মা, আর বোনদের জন্য পাঠিয়ে দেইওরা ভাল থাকলেই আমি ভাল থাকবওরা জানে আমি ঢাকা শহরে খুব ভাল চাকরি করি

আমি বললাম, তাহলে আপনার খাওয়া, গোসল এগুলো? ’ সে আমাকে বলল, যদি কখনও সম্ভব হয় তাহলে হাসপাতালেই গোসল করিসে আরও বলল, আমি এখানে মাঝে মাঝে ডিউটিও করিআমি তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম সে একটু হেসে বলল ডিউটি বুঝতে পারছেন না তো? অনেক রোগী আসে যাদের সাথে কেউ থাকে না, যদি কখনও এরকম দেখি তখন ওদের জন্য আমার খুব মায়া হয়, সে রোগীর জন্য আমি কিছু করার চেষ্টা করিআমি যদি বলি যে আমি এভাবে এখানে থাকি তখন হয়ত কেউ আমাকে সন্দেহ করবে, বা রোগীটিও আমাকে ভুল বুঝতে পারে তাই বলি যে আমার ও এখানে রোগী আছে, সে কথা বলে সেবা যত্ন করি

আমি ছেলেটির সব কথা শুনে চুপ হয়ে গেলাম, মনে মনে ভাবলাম যার সময় শেষ আমরা তাকে জোর করে আটকাতে চাইআর যার বেঁচে থাকা খুব দরকার, বাঁচার জন্য প্রাণপন চেষ্টা করছে তাকে আমরা একটু সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসি নাআমি কিন্তু ছেলেটির জন্য কিছুই করতে পারিনি! আমি পারতাম অন্তত একটু আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিতে কিন্তু আমি তা করিনিকারণ আমার সংসার, আমার সমাজ; পাছে লোকে কিছু বলে, দ্বিধা, দ্বন্দ্ব ,ভয় এসব ভেবে আমি আর কিছু করতে পারিনি সেই ছেলেটির জন্যআমি তাকে তার মায়ের জন্য কিছু টাকা দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সে নেয়নিসেলেছিল, আমার মাকে আল্লাহ্‌ দেখবে কোন মানুষের সাহায্য আমি চাই না

আমি তাকে আর কিছুই বলতে পারিনিসেই ছেলেটির কথা আমার প্রতি মূহুর্তে মনে পরেমনে হয় গ্রামের এই সহজ সরল ছেলেটি নিজের সাথে সংগ্রাম করতে করতে হয়ত একদিন উন্নতির স্বর্ণ শিখরে পৌঁছাতে পারবেআবার এমনও হতে পারে যে টাকার জন্য সে নিজের আত্ম বিশ্বাস হারিয়ে অন্ধকারে তলিয়ে যেতে পারেহয়তবা হয়ে যাবে বখাটে মাস্তানএর জন্য তো আমরা সবাই দায়ীআমাদের সমাজের এই বৈষম্য থেকেই তো সমাজে সর্বপ্রকার অরাজকতা এবং বিশৃংখলার সৃষ্টি

আমিতো আর কিছু করতে পারিনিদোয়া করি, এই রকম সব ছেলেরা যেন, জীবনের সাথে সংগ্রাম করে একদিন উন্নতির স্বর্ণ শিখরে পৌঁছাতে পারেআমি একজনকে জেনেছি, কিন্তু এরকম আরও কতশত ছেলে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে আছেআমরা কি কেউ তাদের খবর রাখি?

ট্রাফিক জামে ফুল বিক্রি করা সেই মেয়েগুলো

Title of this post: Girls who used to sell flower in the traffic Jam in Dhaka city by M.G. Rabbany


বিথি আক্তার






"আমার বয়স ১৩ বছরের মতো হবেআমি বাবা-মায়ের দ্বিতীয় সন্তান, আমার আরো তিন বোন আছে কিন্তু আমাদের কোন ভাই নাইআমার বড় বোন বয়স ১৬ বছরের মতো গার্মেন্টস-এ কাজ করতো, প্রায় এক বছরের বেশী হলো তার বিয়ে হয়ে গেছেআমার বাবার নাম দুলাল বয়স ৪০ বছরবর্তমানে সে কোন কাজ করতে পারে না কারন সে অসুস্থ। পূর্বে সে রিক্সা চালাত কিন্তু ৪বছর আগে সে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েকোমরের ব্যাথার কারণে কোন কাজ করতে পারে না

আমার মা গৃহপরিচারিকার (বুয়া) কাজ করেন এবং বলতে গেলে তিনিই একমাত্র উপর্জনকারীনতুন বাজার থেকে পূর্বদিকে নূরের চালা মুড়ি ফ্যাক্টরির পাশে আমাদের বাসাটিনসেট একটি ঘরের ছোট একটি রুম

ে আমরা সবাই থাকি - প্রতিমাসে ভাড়া দিতে হয় ১১০০ টাকা

আমি দু বছরের মতো লেখা-পড়া করেছিআমাদের এলাকায় একটি এন.জি.ও ছিল কিন্তু দু-বছর পড়ানোর পর গত জানুয়ারীতে বন্ধ হয়ে যায়বর্তমানে আমি বাংলা পড়তে ও লিখতে পারি এবং অংক ও ইংরেজী অল্প অল্প পারিখুব ইচ্ছে ছিল লেখা-পড়া করার কিন্তু কোথাও আর পড়া হলো নাবর্তমানে আমি প্রায় সারাদিন বাসায় থাকি এবং ঘরের কাজ করিরান্না বান্না থেকে প্রায় সবই নিজেই করিকাউকে না জানিয়ে আমি গার্মেন্টস চাকরীর জন্য গিয়েছিলামও কিন্তু ছোট বলে আমাকে কাজ দেয়নিপূর্বে আমি গুলশানে ট্রাফিক সিগনালে ফুল বিক্রি করতামআমি এবং আমার আরো তিনজন বান্ধবী মিলে ফুল বিক্রি করতামকিন্তু এখন একটু বড় হয়েছি বলে বাবা-মা ফুল বিক্রি করতে দেয় নাবাবা-মা এখন আমাকে বিয়ে দেয়ার জন্য চিন্তা ভাবনা শুরু করেছেতারা কয়েক বার আমাকে বিয়ের কথা বলেছেআমি কেঁদেছি এবং বলেছি তারা যদি আমাকে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চায় তাহলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাব যেদিকে দু চোখ যায়।"

কুলসুমা








"আমার বয়স ১২ বছর
আমি বাবা-মার সবচেয়ে ছোট সন্তানআমার বড় দুজন ভাই আছেআমার বাবা নেই আমি যখন খুব ছোট তখন আমার বাবা মারা গেছেনআমার মা আগে গৃহপরিচারিকার (বুয়া) কাজ করত কিন্তু বর্তমানে সে বৃদ্ধ এবং অসুস্থ কোন কাজ করতে পারেনাআমার মেঝ ভাই একটি স্কুলে কাজ করে কিন্তু সে বিয়ে করে আলাদা থাকেআমাদের কোন খোঁজ নেয় নাআমার বড় ভাই কোন কাজ করে না - সে মাদকাশক্ত এবং জুয়া খেলেসে গাঁজা এবং হিরোইন খায়সে আমাদের সাথে খায় না - গভীর রাত্রে ঘরে এসে ঘুমায় এবং দিনের বেলায় চলে যায়সে আমাদের কোন টাকা দেয়না কিন্তু মা এবং আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে বলতে গেলে আমাকে সব খরচ বহন করিতে হয়আমি আগে গুলশান-২ ট্রাফিক সিগনালে ফুল বিক্রি করতাম কিন্তু বেশী আয় করার জন্য আমি এখন টোকাইয়ের কাজ করিরাস্তার পাশের ডাস্টবিনের ভিতর থেকে ময়লার কাগজ, পলিথিন ব্যাগ, বোতল, ক্যান ইত্যাদি সংগ্রহ করি এবং ভাঙ্গারী দোকানে বিক্রি করিসপ্তাহে প্রায় প্রতিদিনই কাজ করি- এতে প্রতি সপ্তাহে ২০০ থেকে ৪০০ টাকার মতো আয় হয়আমাকে প্রতিদিনের খাবার এবং অন্যান্য খরচ ছাড়াও প্রতিমাসে ১২০০ টাকা ঘর ভাড়া দিতে হয়আমাদের বাসায় বিদ্যুতের সংযোগ থাকলেও বাড়ীওয়ালা রাত্রের বেলাই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখে

আমি একটি এন.জি.ও স্কুলে দু-বছর লেখা-পড়া করেছিআমি বাংলা পড়তে ও লিখতে পারিঅংক এবং ইংরেজী কিছু কিছু পারিআমি স্কুলে ভালো ছাত্রী ছিলামদু - বছর পর গত জানুয়ারী মাসে স্কুল বন্ধ হলে আমার লেখা পড়াও বন্ধ হয়ে যায়।"

লাভলী আক্তার






"আমার নাম লাভলী আক্তার, বয়স ১৩ বছর
আমি বাবা-মার সবচেয়ে বড় সন্তান আমার একজন ছোট ভাই এবং একজন ছোট বোন আছেআমার বাবা নিয়মিত রিক্সা চালাত কিন্তু দু-বছর আগে সে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং এখন পর্যন্ত সে কোনো কাজ করতে পারেনাআমার বাবার নাম বাবু এবং তার বয়স ৪০ বছরের মতো হবেআমার মা গৃহপরিচারিকার কাজ করে এবং বর্তমানে তিনিই আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। আমাদের গ্রামের বাড়ী ঢাকার ডেমরা কিন্তু সেখানে আমাদের কিছুই নেইআমি আগে গুলশান-২ ট্রাফিক সিগনালে ফুল বিক্রি করতাম কিন্তু এখন বাবা-মা ফুল বিক্রি করতে যেতে দেয় না কারন তারা বলে আমি এখন বড় হয়ে গিয়াছিতারা আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেকিছুদিন ছেলে পক্ষ এসে দেখে গেছে শুনেছি ছেলে কোন এক গার্মেন্টসে চাকুরী করেআমি এ বিয়েতে রাজি ছিলাম না, আমি অনেক কেঁদেছি এবং বলেছি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবএখনো বাবা-মা আমাকে বিয়ের কথা প্রায়ই বলে যাতে আমি রাজি হইআমার ইচ্ছে ছিল লেখা-পড়া করব এবং কমপক্ষে গার্মেন্টসে চাকুরী করবএকদিন আমার বান্ধবী বিথির সাথে একটি গার্মেন্টসে গিয়েছিলাম চাকুরী নেওয়ার জন্য কিন্তু আমাদের অল্প বয়স বলে চাকুরী দেয়নি। আমি কোন স্কুলে লেখাপড়া করিনি কিন্তু দু-বছর একটি এন.জি.ও স্কুলে পড়েছিগত জানুয়ারী মাসে আমাদের স্কুল বন্ধ হয়ে গেছেআমি বাংলা এবং অংক লিখতে ও পড়তে পারি।"

রুবি আক্তার






"আমার নাম রুবি আক্তার বয়স ১৩ বছর
আমি বাবা-মার ছোট সন্তান, আমার বড় দুই ভাই এবং দুবোন আছেআমার বড় দু-বোনের বিয়ে হয়েছে এবং তারা তাদের স্বামীর সাথে থাকেআমার বড় ভাই রিক্সা চালায়, সেও বিয়ে করেছে এবং তার পরিবার নিয়ে আলাদা থাকে আমার দ্বিতীয় বড় ভাই কোন কাজ করেনা সে নেশাখোর, জুয়াখেলেসে গাঁজা, হিরোইন খায় এবং জুয়াখেলেসে প্রায়ই আমাদের ঘর থেকে টাকা অথবা কোন জিনিস চুরি করে বিক্রি করে নেশা করেমা এবং আমাকে মাঝে মাঝেই মারেআমার বাবা অন্য আরেকটি বিয়ে করে অন্যত্র থাকেমাঝে মাঝে বেড়াতে এলেও কোন খরচ দেয় নাআমার মা একজন ভিক্ষুক সে দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে বেড়ায়আগে আমার মা বুয়ার কাজ করিত কিন্তু এখন সে খুব দুর্বল কাজ করতে পারেনাসে ভিক্ষাও ঠিকমত করতে পারেনা

আমি আগে ট্রাফিক সিগনালে ফুল বিক্রি করিতাম কিন্তু কয়েকটি কারনে এখন করিনা ফুল সন্ধ্যার পরে বিক্রি করা যায় বেশি, কিন্তু আমার বান্ধবীরা কেউ আসেনা এবং এ কাজে বেশী আয় করা যায় নাকিন্তু আমাকে পরিবারের প্রায় সব খরচই বহন করতে হয়আমাকে বাসা ভাড়া হিসাবে প্রতি মাসে ১১০০ টাকা দিতে হয়মা বেশী বেশী ভিক্ষা করিতে পারেনা বলে আমাকেই প্রায় সব খরচই দিতে হয়তাই আমি ফুল বিক্রি বাদ দিয়ে টোকাইয়ের কাজ করছিগুলশান মার্কেটের বিভিন্ন রাস্তায় এবং ডাস্টবিনের ময়লা থেকে কাগজ, পলিথিন, ক্যান, বোতল ইত্যাদি সংগ্রহ করি এবং ভাঙ্গারী দোকানদারদের কাছে বিক্রি করিপ্রতিদিন কাজ করলে সপ্তাহে ২০০ থেকে ৪০০ টাকার মতো আয় করা যায়

কিছুদিন আগে বাবা আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য একটি ছেলে ঠিক করেছিলো তখন আমার বড় ভাই বিয়ে দিতে দেয়নিআমার বড় ভাই বাবাকে বলেছে এত ছোট বয়সে বিয়ে দেওয়া ঠিক নাআমিও এখন বিয়ে করতে চাই নাআমি লেখা-পড়া শিখে গার্মেন্টস বা কোন অফিসে চাকুরী করিতে চাইআমি প্রায় দু-বছর একটি এন.জি.ও স্কুলে লেখাপড়া করেছিআমি বাংলা এবং অংক লিখতে ও পড়তে পারি এবং কিছু কিছু ইংরেজী পড়তে পারি।"


এই চারজন মেয়েই একই বাসায় আলাদা আলাদা রুম ভাড়া নিয়ে তাদের পরিবারের সাথে থাকেপ্রতিটি কক্ষের ভাড়া ১১০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকাতাদের ঘরের চাল টিনের, বেড়া বাশেঁর এবং মেঝে কাচা মাটির১২ থেকে ১৪ টি পরিবারের জন্য রয়েছে দুটি অরক্ষিত টয়লেট, গোসলের জন্য খোলা জায়গা তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বিদ্যুৎ সংযোগ দিনের বেলা মাঝে মাঝে পেলে রাত্রে বিচ্ছিন্ন থাকেমশা, দুর্গন্ধ এবং অসহ্য গরমে তাদের ঘুমানো খুবই কঠিনবিদ্যুতের জন্য বাড়ীওয়ালাকে বললে বাড়ী থেকে চলে যেতে বলেতাদের টয়লেটটি খোলা বলে খুব দুর্গন্ধ ছড়ায়

এই চারজন ছোট বালিকা গুলশান-২ গোলচক্করে ফুল বিক্রি করত এবং ২০০৩ সালের দিকে আমাদের সাথে পরিচয় হয়েছিলআমাদের নারী জীবনের চেয়ারম্যান ডঃ ক্যাথরিন বি-ওয়ার্ড যখনই বাংলাদেশে আসেন তখনই তাদের খোঁজ নেনতাদেরকে সাহায্যও করে থাকেন এবং তাদের খুবই ভালবাসেন

যেমন- এই চারজন বালিকাকে তাদের জীবনের স্বরনীয় কোন ঘটনার কথা জিজ্ঞেস করিলে চারজনই একই একই দুটি ঘটনার কথা বর্ননা করেন

প্রথমটি হলো: প্রথম যেদিন তাদের মধ্যে দু-জন ডঃ ক্যাথরিনের কাছে ফুল বিক্রি করিতে গেলে ফুল না নিয়ে প্রত্যেককে ১০০টাকা করে দেন
দ্বিতীয়টি হলো: যেদিন তারা ডঃ ক্যাথরিনের অফিসে গিয়েছিল এবং তাদের সবাইকে খুবই ব্যায় বহুল রেষ্টুরেন্টে নিয়ে সুস্বাদু খাবার খাওয়াল
তাদের ভাষায় ম্যাডাম তাদের বাবা-মার চেয়েও বেশী আদর করেন এবং তারাও তাকে খুব ভালবাসেন

Tuesday, August 28, 2007

নারী

Title of this poem: “Women” by Tahmina Akter
Content of this poem: “In Bangladesh women are always despised and deprived from their rights in the male dominated society. However women have increased their self estimate and stepping ahead. Women always make confidence to acquire accomplishment for men but men don’t evaluate it” author exemplify her thought from beginning to end in her poem.


নারীই মাতা, নারীই দাতা, নারীই সুখের ধারা,
নারীর কারণে হয়েছে সৃষ্টি, ধরনীর তরুলতা
যুগে যুগে নারী রয়েছে যত অবহেলা অনাদরে,
তবুও নারী হারায় নিকো তার বিশ্বাসকে চিরতরে
নরশাসিত সমাজে নারী তুচ্ছ, বঞ্চিত,
নারী বিনা নর থাকিতো পশ্চাতে সে কথা যদি সে বুঝিত
নারীর কারণে করেছে নর এই বিশ্ব জয়,
নারী বিনা নর নাহি পৌঁছিত উন্নতির দরজায়
নারীই তার আপন মহিমায় গড়েছে এই ভূবন,
নারী বিনা কভু না পাইতাম আমাদের এ জীবন
নারীর কারণে পেয়েছি মোরা সম্মান মর্যাদা
নারীই আজীবন রাখিয়াছে ধরি বিশ্ববাসীর মান
নারীর কারণে হয়েছে ধরনী চির কল্যানকর
নারীকে মোরা বলিতে পারি কল্যানময়ী মাতা
নারীই কল্যানী, নারীই বিশ্বাসী, নারীই প্রেরনাময়ী,
তাই আজীবন মোরা করিবো স্মরন নারীকে শ্রদ্ধাভরে