Saturday, November 24, 2007

সিডর বাংলাদেশ,২০০৭ এবং আমার অভিজ্ঞতা

Title of this post: Sidr of Bangladesh in 2007 and my experience by Zannat Ara Amzad Liva

১৯৯১ সালের পর ভয়াবহ ঘূর্নিঝড়ের আগমনে আবারও তছনছ হল বাংলাদেশগত ১৫ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বরিশালের কাছে বলেশ্বর নদীর মোহনা দিয়ে ভয়ঙ্কর সিডরবাংলাদেশ উপকুলে আঘাত হানতে শুরু করেসারারাত উপকূলের জনপদগুলো তছনছ করে এটি উত্তর-পূর্ব দিক দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েপরবর্তীতে প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় ‘‘সিডরউত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বৃহস্পতিবার রাত ৩:০০টায় উপকূল অতিক্রম করেপরে এটি দেশের দক্ষিণ,মধ্যাঞ্চলে স্থল নিম্নচাপ হিসেবে অবস্থান করে এবং শুক্রবার সকাল ৯:০০টার দিকে দুর্বল হয়ে উত্তর, উত্তর- পূর্ব দিক দিয়ে বাংলাদেশের স্থলসীমা অতিক্রম করে

প্রলয়ঙ্কারী এই ঘূর্ণিঝড়ির আগমন-বার্তা বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর আগে থেকেই উপলব্ধি করতে পেরেছিল বলে দেশের সর্ব সাধারণকে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্ব থেকেই বেশকিছু বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়এছাড়াও উপকূলবর্তী অঞ্চলের অনেক মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়কিন্তু এত সর্তকতা অবলম্বন করা সত্বেও প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় তার আক্রমনে ব্যর্থ হয়নিপ্রাণ হারাতে হয়েছে প্রায় ৩৫০০ হাজারেরও অধিক মানুষকেবিনষ্ট হয়েছে ব্যাপক ঘরবাড়ী, মসজিদ-মাদ্রাসা, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান সহ গবাদি পশু ও ফসলেরভয়াবহ এই ঘূর্ণীঝড়ের আতঙ্কে আতঙ্কিত ছিলাম আমরা সারা দেশবাসীবৃহস্পতিবার গভীর রাতে হঠাৎ ঘূর্ণীঝড়ের বাতাসের বেগ প্রচন্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় লন্ডভন্ড হতে শুরু করল ঢাকার অনেক এলাকাআমি ঢাকার খিলগাঁও এলাকার একজন অধিবাসীসেদিন গভীর রাতে আমার বাড়ীর পাশের গলিতে বিরাট একটি গাছ উপরে পড়ে যাওয়ায় একসঙ্গে উপড়ে পড়ল পুরো এলাকার বৈদ্যুতিক তারসারা এলাকা নিমিষেই ছেয়ে গেল অন্ধকারেশুধুমাত্র এই একটি এলাকাই নয় দেশের সব এলাকা ঘিরেই নেমে এল অন্ধকারচারদিকে অন্ধকারময় অদৃশ্য বাতাসের শো-শো শব্দে কান ভারী হতে লাগলভয়ে শিউরে উঠলো গাঁএমনি করে নিদ্রাহীন ভাবে কাটালাম অন্ধকারময় প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণীঝড়ের বিমূর্ত এক রাত

পরদিন সকালেই খবর পেলাম প্রলয়ঙ্কারী ঝড়ের আত্নকাহিণীঘূর্ণিঝড়ে স্যালেন্ডার করেছে হাজারও নর-নারী, শিশু-কিশোর, আবাল-বৃদ্ধএছাড়াও বিধ্বস্ত হয়েছে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সহস্রাধিক ঘরবাড়ি, চাপা পড়েছে অনেক তাজা প্রাণমানুষ হারিয়েছে আত্নীয়-স্বজন কেউবা হারিয়েছে প্রিয়জনঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের সর্বত্র ছিল ধূ-ধূ অন্ধকারচক্রাকারে বিদ্যুতের রো ধরে ছিল পানি স্বল্পতা, বন্ধছিল সরবরাহদেশবাসী ভীষণ কষ্টে একই সাথে বিদ্যুৎ, পানি স্বল্পতা ও গ্যাস সরবরাহ ছাড়া দিনযাপন করেছে এছাড়াও বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিঘ্নিত হয়েছে দেশের অনেক বৃহৎ কাজআমি ভোটার আই.ডি কার্ডের একজন ডাটা এ্যান্ট্রি অপারেটর সেদিন শুক্রবার সকাল ৯.৩০ মিনিটে আমাদের ভোটার আই.ডি কার্ডের ডাটা এ্যান্ট্রি অপারেটরদের একটি ট্রেনিং হওয়ার কথা ছিলআমাদের ট্রেনিং সেন্টার ছিল খিলগাঁও মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজআমি ও আমার বড় বোন, আমরা খিলগাঁও মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ঢুকতেই দেখলাম কলেজের অনেক মূল্যবান গাছ উপড়ে পড়ে ছিন্নভিন্ন হয়েছে অনেক বৈদ্যুতিক তারআর এই বৈদ্যুতিক তাড় বিনষ্ট হওয়ার দরুন আমাদের ট্রেনিং এ বিঘ্ন ঘটেআমরা আমাদের ল্যাপটপ খুলতে পারিনি; অনুশীলন করতে পারিনি গুরুত্বপূর্ন অনেক কাজবিঘ্নিত হয়েছে মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট কানেকশনশতশত প্রাণ হারানোর সাথে সাথে সারা দেশ হারিয়ে গিয়েছিল অন্ধকারের গভীরেখবরের পাতায়, টেলিভিশনের পর্দায় ঘূনীঝড়ে আহত, নিহতদের দৃশ্য দেখে সর্বক্ষণ হাহাকার করছিল মনমনকে আর পোষ মানাতে পারিনিআমিও তো মানুষ, রক্তে-মাংসে গড়া মানুষ, আমারও মন আছেকোন রকম ট্রেনিং লেকচারের মাধ্যমেই সেদিনের মত সমাপ্ত হল ট্রেনিং ক্লাসট্রেনিং শেষ হওয়া মাত্রই ছুটে গেলাম দানবীয় শক্তির ঘূর্ণিঝড় সিডরআক্রান্ত দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলিয় এলাকায়যেখানে গিয়ে থমকে গেলাম আমি, স্তব্ধ আমার কণ্ঠমনে শুধুই প্রশ্ন জাগে প্রকৃতির এ কোন স্টীম রোলার পীষ্ঠ হল নিস্পাপ শিশু-কিশোর, সহায়-সম্বলহীণ মানুষের ওপর? শুধু মানুষই নয়, অবুঝ-নির্বাক পশুরাও নিস্তার পায়নি দানবীয় সিডরআক্রমন থেকেপানির স্রোতে ভেসে উঠেছে বহু মানুষের মৃত গলিত দেহ, বাতাসে পঁচন ধরা লাশের দুর্গন্ধএ যেন এক মৃত্যুপুরীধ্বংসযজ্ঞ এই সকল মৃত্যুপুরিতে চলছে স্বজনহারানো শোকের মাতন, অন্যদিকে একমুঠো খাবার ও লজ্জা নিবারনের এক টুকরো বস্ত্রের জন্য খোলা আকাশের নিচে রাত কাটানো লাখ লাখ বুভুক্ষু ও শীতার্ত মানুষের হাহাকারএই মাতম আর হাহাকারের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাশুকনো মাটির অভাবে বহু লাশের ঠাঁই হচ্ছে গণ কবরেঅনেক ক্ষেত্রে কাফনের কাপড়টুকু ও ধ্বংস্তুপের মাঝে চাঁপা পড়া মানুষের মৃত দেহ পত্রিকার পাতায় ছবি হয়ে স্থান নিয়ে ত্যাগ করেছে নিঃশ্বাস, ছেড়ে গেছে এই নিষ্ঠুর পৃথিবীমর্মান্তিক এই ঘূর্ণিঝড় আমাদের করেছে নিঃস্বঅবশেষে আজ বাতাসে শুধু ধ্বনিত হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়ে নিহত হাজারো শিশুর ক্রন্দন

Thursday, November 22, 2007

ভয়াবহ ঘুর্নিঝড় সিডর

Title of this post: The cyclone “sidr” by Sofia Khatun

দিনটি ছিল বৃষ্পতিবার। তারিখটি ছিল ১৫ই নভোম্বর ২০০৭ সাল। তার আগের দিন থেকেই আমাদের কানে ভেসে এসেছে ভয়াবহ প্রলয়ংকারী ঘুর্নীঝড় সিডরের সংবাদ। প্রথমদিন আবহাওয়া অধিদপ্তর আমাদের ৪নং সর্তক সংকেত দিয়েছিল এবং সবাইকে কাছাকাছি আশ্রয় কেন্দ্র আশ্রয় নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু প্রায় দুঘন্টা পর ১০নং মহাবিপদ সতর্ক সংকেত দিয়েছিল। অনেকেই এই সর্তক সংকেত শুনে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিল। যাদের ভাগ্যে ছিল র্দুভাগ্যের সাথে গড়া, তারাই রয়ে গেলো তাদের বসত বাড়িতে। এক সময় বৃহষ্পতিবার রাতে শুরু হল তুমুল ঘুর্নীঝড় সিডর। যার আঘাত লন্ডভন্ড হয়ে গেলো গোটা বাংলাদেশ। ঝড়ের আঘাতে বাংলাদেশের এমন কিছু জেলা আছে যা শুধুমাত্র তুলার মত উড়তে থাকে। এমন কিছু গ্রাম আছে যার কোন অস্তিত্ত্ব নেই। এমন কোন লোক নোই যার স্বজন হারাইনি। কিছু কিছু পরিবার আছে, যে পরিবারের একজনকে টিকিয়ে রেখেছে কান্নার জন্যে। যার ঘর-বাড়ি, ফসল, আত্মীয়-স্বজন সব চলে গেছে। বাংলাদেশে ৬৪টি জেলার মধ্যে তা প্রায় ২০/২৫ টি জেলার উপর দিয়ে ভয়াবহ সিডর আঘাত হেনেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে ১৬টি জেলায়। যার কোন চিহ্ন নেই। কিছু কিছু জেলাগুলো এমন হয়েছে। যা দেখলে কখনোই বুঝা যাবে না যে এখানে মানুষের কোন বসবাস ছিল। দু-একজন যা চোখে পড়ে দেখা যায় তাদের কান্নার ঢল। তাদের খুদার যন্ত্রনা ও স্বজন হারা আর্তনাদ বাংলার আকাশ ছেয়ে গেছে। একটা মানুষের বেচেঁ থাকতে যা কিছু প্রয়োজন, ঘর-বাড়ি, গবাদি পশু, খাদ্য বস্ত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা সবকিছু নিয়ে গেছে সিডর। ঘুর্নীঝড় সিডরের আঘাতে কত লোক প্রান হারিয়েছে তা এখনো সঠিক বলা যাবে না। কারন সকল জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন। কোথাও সঠিক মোবাইল টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না। বিদ্যুৎতের খুঁটি উপড়ে গেছে, বিছিন্ন হয়ে গেছে বিদ্যুৎ লাইন। এরই মধ্যে টুকিটাকি সংবাদ জানা গেছে তিনহাজারের বেশি মানুষের প্রান হারিয়েছে। বিধস্ত হয়েছে হাজারো ঘর বাড়ি, যারা প্রান হারিয়েছে হয়ত তারা বেঁচে গেছে। কিন্তু যারা প্রানে বেঁচে আছে তাদের অবস্থা এত খারাপ যে ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না, তাদের বাঁচার কোন পরিস্থিই নেই, নেই কোন ঘর বাড়ি, নেই খাদ্য, বস্ত্র, নেই কোন মুখে একমুঠে ভাত তুলে দেওয়ার মত এজন স্বজন। আছে শুধু চোখের জল। অনেকের সেই জলটুকু শুকিয়ে গেছে। এমন একজন বৃদ্ধ বেঁচে আছেন যার বংশে কেই নেই। শুধুমাত্র উনি বেঁচে আছেন আর আছে উনার বুক ফাটা কান্না হাহাকার আর্তনাদ। ভয়াবহ ঘৃর্নীঝড় সিডর কেড়ে নিয়ে গেছে মানুষের সবকিছু। আর দিয়ে গেছে বাংলাদেশকে না খাওয়ার যন্ত্রনা স্বজন হারা আর্তনাদ, ভিটেমাটিটুকু হারানোর হাহাকার। ফসল নষ্ট হয়েছে তা প্রায় ৮ লাখ ৬৩ হাজার ৭শ। দারিদ্র এই বাংলাদেশ কতটুকু সাহায্য করতে পারবে অসহায় এই মানুষদের সৃষ্টিকর্তা কতটুকু সময়ের মধ্যে ভেঙ্গ চুরমার করে দিল হারিয়ে যাওয়া সাজানো সংসার। বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ এখন অসহায়। তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসুন। তবেই হবে বন্ধুত্ত্বের পরিচয়।