Tuesday, January 15, 2008

বন্যা ও আমার জ্যাকেট

Title of this post: Flood and my Jacket by Helen Sarkar

ঘটনাটা খুবই ছোট হতে পারে কার কাছে কিন্তু এই ছোট একটি ঘটনার মাঝে আছে হয়তো কোন করুন কান্নাআসলে হয়েছিল কি খুলেই বলি ১৯৯৮ এর বন্যার কথাতো সবারই জানা আর বন্যা যেন আমাদের খুব আপন কেউ, বছরে এক আধবার না এলে যেন চলেই না সে যাক তখন আমরা ফরিদপুর শহড়ে টেপা খোলা বেড়ী বাধের কাছে থাকতাম যদি আমাদ বাড়িটা ফরিদপুরের মধ্যেই ছিল কিন্তু কি আর করা মার চাকরির জন্য ঐ এলাকায় আমাদের থাকতে হয় যা হোক সে বে মজারই ছিল দিন গুলি একপাশে মায়ের অফিস ঘড় অন্য পাশে থাকতাম আমরা মানে আমরাদেরকেই তো সারাদিন থাকতে হত বাসায় একটু সুযোগ পেলেই হল অমনি মার অফিস ঘরে হানা দিয়ে বলতাম অনেক তো হল মা, কখন বাসায় আসবে? মা উত্তরে বলত কখন আসবো কিরে আমিতো সারাদিন বাসায়ই আছি

অবশ্য মাঝে মাঝে মাকে বাইরেও যেতে হত কাজে এবং সেই সাথে মায়ের লেজে থাকতাম আমিভাগ্য ভালো যে মায়ের পাশে পাশে থাকতাম তাইতো দেখতে পেয়েছি আমার দেখার সুন্দর পৃথিবীর পাশে অন্য আরেক হৃদয় হীন পৃথিবীকে ঐ এলাকার খুব কাছেই পদ্মা নদী ছিল বিধায় নদী ভাঙ্গন আর বন্যা ছিল জনসাধারনের কাছে ডাল ভাতের মত তো, বন্যা যথারিতি আবারও হল সব মানুষ কুল-কিনারা কিছু খুঁজে না পেয়ে উঠলো এসে আমাদের ঘড়ের সামনে বেড়ী বাঁধের উপর এত বুকফাটানো আর্তনাদ আর কান্নার শব্দ একসাথে আমি মনে হয় শুনিনিভোর থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত- কেউ না কেউ দরজায় কড়া নেড়ে বলত তাদে অভাবের কথাকতটুকুই বা দেওয়ার ক্ষমতা ছিল আমাদের তারপরও দিতে চেয়েছি সামর্থ্য অনুসারে

একদিন আমি আমাদের সবার শীতকালের সোয়েটার, জেকেট গুলো ধুয়ে রোদে শুকানোর জন্য দিয়েছিলাম কিন্তু গরম কাপ লে তো কথা ওগুলো কেন এত তাড়াতাড়ি শুকাবে, যাই হোক -আমার জ্যাকেট টা ছিল মোটা জিন্স কাপড়ে, আকাশি রং এরবলতেই হয় ওটাকে আমি অনেক পছন্দ করতামসেদিন সন্ধাবেলা দেখি মা সব কাপড় উঠাচ্ছে কিন্তু আমার জ্যাকেট টা আর উঠালোনা আমি মাকে বললাম, আমার পেটমোটা জ্যাকেটটা কি দো করলো যে ওটা তুমি তুললে নামা বলল- তোমার এই জামা কেউ নেবেই নাতাই ওটাকে বারান্দার তারে রেখেই রাতটা একঘুমে কাভার করলাম

কিন্তু ভোরে বারান্দায় এসে দেখি কোথায় আমার জ্যাকেট তার বদলে তার গুলো ছিরে পরে আছে মেঝেতেআমার এত পছন্দের একটা জিনিস চুরি হয়ে গেল---এই দুঃখে আমার পাথর হওয়ার উচিৎ ছিল কিন্তু আমি একবার চিৎকারও দেইনি তার বদলে যে নিয়েছে তার জন্য সহানভুতি এলোমনেমনে ভাবলাম যে নিয়েছে সেতো আসোলেই চোর না, কে চুরি করতে হয়েছে একমুঠো ভাতের জন্যআমার কেন যেন মনে হয়- আসলে না আমরা যারা ভালো আছি তারাই সমাজের এক শ্রেণীর মানুষকে চোর হবার শিক্ষা দেই, ওদেকে পরোক্ষভাবে বোঝানোর চেষ্টাকরি, সুন্দ ভাবে বেঁচে থাকার কোন অধিকার তোমাদের নেইতোমরা নষ্টহয়ে যাবে, চুরি করবে, ছন্নছাড়া জীবন তোমাদের জন্য

প্রতি বছরই বন্যা হয়, আর সে সময়ের অপেক্ষায় যেন আমরা থাকি-কিছু সাহায্য দেওয়ার সময় নিজের ক্যামেরা বন্দি ছবিঅসহায় মানুষের কান্না ভেজা চোখ-আর ত্রান দিতে আসা মানুষের গর্বে হাসিকে কত দিলাম তারই যেন একটা অদৃশ্য প্রতিযোগিতা আমাদে মধ্যেআমরা নাকি সভ্য গতের মানুষ- আমরা ছোট সাহায্যের প্যাকেট দিয়ে কিনতে চাই অসহায় ক্ষুধার্ত কোন শিশুর কান্নাকে, বৃদ্ধে আর্তনাদকে সহায়, সম্বলহীন মানুষগুলোকে। কিন্তু প্রতিকার করতে চাই না- আর যেন বন্যা না এসে দুকুল ভাসিয়ে যেন আমাদের সম্পদকে নষ্ট না করে দেয়, না-ভাসিয়ে দেয় আমাদের অশ্রুর সাগরে

কিন্তু বন্যার মত ভাসিয়ে নিয়ে যাক-আমাদের নষ্ট বিবেককে, হৃদয়ের আবর্জনা-গুলো পরিষ্কার নিসুর্নিপুন হাতেতবেই না এক একটা হয়ে উঠবে সতেজ শুভ্র