আর কেঁদনা মাগো
হাজার ছেলে আসছে তোমার
বরতে তাদের জাগো।
এপ্রভাতে গাথঁছে সবাই
হৃদয় ফুলের মালা
তাই দেখে মা শান্ত কর
হারানো ছেলের জ্বালা।
ফুলের ডালি দাও সাজিয়ে
প্রভাত তারা জাগে
স্বর্গ হতে আসছে ভাইয়েরা
বরতে হবে যে আগে।
রক্ত পলাশ ফোঁটে থোকা থোকা
শিমুল ফুঁটেছে শাখে
দেখ দেখ মা ভাইয়েরা আমার
হাতছানি দিয়ে ডাকে।
রফিকের হাতে ফুলের ডালা
শফিকের মুখে হাসি
সালাম জব্বার পুলকিতভাবে
আসিতেছে পাশাপাশি।
বরকত ভাইয়া অগ্রে ছুঠেছে
“মাগো” ডাক তার মুখে
সবাই এসেছে তোমার কোলে মা
তুমি কাঁদ কোন দুঃখে।
Saturday, February 23, 2008
২১-শের প্রভাত
Tuesday, February 19, 2008
দাদী
দাদী বলে উঠল ”পুতের ছোয়াল লাথি দিয়া কোমর ভাইঙ্গা দিমু”
“কেন দাদী কি করেছি আমি” নাদিয়া বলল।
দাদী বলে উঠল, “আবার কথা কস একটা লাথি দেব মুখের উপর।”
নাদিয়া বাবাকে বলে, “দেখ আব্বু দাদী কি বলে।”
বাবা বললেন, “দাদী হয় একটু সহ্য কর নাদিয়া”
আমি বললাম দাদী কি এমন হয় আব্বু। রাত্রে খাবার সময়, হঠাৎ দাদী বলে উঠল “আমাকে খাবার দিবি নাকি না খাওয়ায় মারবি।”
দাদী জেদ ধরল গ্রামে যাবে, এদিকে আমাদের ও বার্ষিক পরীক্ষা শেষ আমরা সবাই গ্রামে গেলাম। যাওয়ার পথে আমি বড় আপুর পাশে বসলাম,
দাদী বলল, “এত পিরিত কিসের ফকিন্নির ঝি সর আমারে বসতে দে।”
দাদী আমার আর বড় আপুর মাঝে বসল। আমার যখন গ্রামের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছালাম তখন বিকাল। আমার বড় চাচার ছেলে তের চৌদ্দ বয়সের সুমন ভাইয়া পেয়ারা গাছে ছিল।
দাদী বাড়িতে পা দিয়েই বলে উঠল, “পুতের ছোয়াল আমি বাড়িতে নাই আর তুই আমার সম্পত্তি খাস। পুতের ছোয়াল খাড়া মজা বুঝাই” বলেই দৌড়ে গিয়ে কতগুলো ইটের টুকরা ছুরে মারল, তার মধ্যে একটা ইট যেয়ে চোখে লাগল। সুমনের চিৎকার শুনে বড় চাচা ছুটে এল, আমরা হতবম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
দাদীকে চাচা বলতে লাগল, “মা তুমি বাড়ি আসতে না আসতেই শুরু করে দিলে।”
দাদীও চুপ থাকল না বলল, “ক্যা রে তোর পোলা যে আমার সম্পত্তি খায় তা কি চোখে দেখিস না।”
আমার বাবা বলল, “থাক না অনেক হয়েছে এখন চুপ কর। ওর চোখ থেকে রক্ত বের হচ্ছে ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।”
আমার বাবা ভাই বোনদের সবার ছোট, দাদী এমন হলেও বাবাকে অনেক ভালোবাসে যার কারনে বাবার কথাতেই চুপ করে গেল। আমরা সবাই দাদীর ঘরে বসলাম হঠাৎ এক জার্মানি মহিলা এসে দাদীর পা ধরে সালাম করল।
দাদী আশ্চার্য হয়ে বলল, “কে তুই?”
বড় চাচা বলল, “জার্মান থেকে বিয়ে করে নিয়ে আসছি এটা তোমার নতুন বৌ মা।”
এরই মধ্যে আমার বড় চাচী কাঁদতে কাঁদাতে দাদীর কাছে এসে বিচার দিল, “মা দেখেন আপনার ছেলে কি করেছে।”
দাদী বলল, “যা করেছে ভাল করেছে তোর ইচ্ছা হইলে তুই থাক তা না হলে চইলা যা। কি রে আমার বড় লোকের ঝি ছেলেরা দুই একটা বেশি বিয়ে করেই থাকে তাতে কি একেবারে মহাভারত অসুদ্ধ হইছে ঢং করিস না, যা।”
আমার মা, মেজ চাচী তাকে বুঝ দেওয়ার কোন ভাষা খুঁজে পেল না। রাত্রে তাকে খাওয়াতেও পারল না। সে রাত্রে বড় চাচী বারান্দায় বসে কেদেঁ রাত কাটাল।
সকাল হতেই চাচীর ৩ বছরের মেয়ে মিনুকে সাথে নিয়ে যাওয়ার সময় দাদী ঝড়ের বেগে এসে বলল, “ফকিন্নির ঝি তুই মিনুকে কই নিয়ে যাস মরলে তুই একাই মর।”
মিনু দৌড়ে গিয়ে বলল, “দাদী মা যাচ্ছে।”
দাদী মিনুকে বুঝ দিয়ে বলল, “ওটা তো তোর পুরানো মা কালা, দেখ তোর জন্য তোর বাপে কেমন সুন্দর বিদেশী মা নিয়ে আইছে।”
মিনু বলে, “না দাদী আমার সুন্দর মা দরকার নাই, আমার ঐ মাই ভাল।”
দাদী বলল, “চল তোরে গোসল করায় নিয়ে আসি তোর মাথা গরম হয়ে গেছে।”
দাদী মিনুকে পুকুরে গোসল করাতে নিয়ে গেল। কিছুক্ষন পর দাদী গোসল করে একাই ফিরে এসে উঠানে শাড়ি নাঁড়ছে
মা দাদীকে একা দেখে বলল, “আপনি একা মিনু কোথায় মা? আপনি না ওকে গোসল করাতে নিয়ে গেলেন?
দাদী ঘামটা দিয়ে বলল, “ফকিন্নির ঝি ফকিন্নির মতই হইছে আমার সাথে জেদ দেখায় কয় আরো গোসল করমু ঘাঁটে থুইয়া আইছি।”
মা বলল, “মা একি করেছেন ছোট বাচ্চা.....” কথা শেষ না করেই পুকুর ঘাঁটে ছুটে গেল। মায়ের চিৎকার দিয়ে দৌঁড়ে যাওয়া দেখে আমরা দৌঁড়ে গেলাম। মিনুকে ঘাঁটে দেখতে পেলাম না। পানিতে নীল রং এর কাপড় একটু দেখতে পেয়ে মিনু বলে চিৎকার করে সুমন ভাইয়া পানিতে ঝাপ দিল। পানিতে মিনুর লাশ জরিয়ে ধরে পানিতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল, সে যে মিনুকে উঠিয়ে নিয়ে আসতে এতুটুকু শক্তি তার শরীরে নাই। সবাই বলতে লাগল সুমন মিনুকে উঠিয়ে নিয়ে আস ও কি বেঁচে আছে। সুমন ভাইয়ার বাক শক্তি হারিয়ে ফেলেছে একে তো মা বাড়ি ছাড়া তার উপর একমাত্র বোন মারা গেছে। সুমন ভাইয়া অনেকক্ষন পরে ঘাটে মিনুকে উঠিয়ে নিয়ে এসে দাদীকে প্রসঙ্গ করে বলে উঠল, “এই বুড়ির বাচ্চা বুড়ি আমার ছোট বোনকে মাইরা ফেলছে।”
আমি এই প্রথম দাদীকে নীরব ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম।
মেজ চাচা বলে উঠল, “সুমন বেয়াদবী করে কথা বল না।”
মিনুর লাশ দাফন দেওয়া হল কদম গাছের তলে যেখানে মিনু পুতুল নিয়ে খেলত। ঐ দিনের পর থেকে সুমন ভাইয়াকে আর পাওয়া যায়নি। কিছুদিন পর বড় চাচা বউ নিয়ে জার্মানে ফিরে গেল। প্রায় অনেক দিন হল গ্রামে এসেছি। এবার আমাদের যাওয়ার পালা। দাদী আমাদের সাথে শহড়ে আসতে চাইল না।
বাবা দাদীর হাতে এক মাসের খরচ দিয়ে বলল, “মা আপনার জন্য প্রতি মাসে আমি টাকা পাঠাব।”
দাদী কোন উক্তি করল না চুপ করে কথা শুনে মাথা নাড়াঁলো। দাদী ইদানিং কেমন যেন ভেঙ্গে পড়েছে, আগের মত অতবেশি গালি গালাজ, দাপা-দাপী এখন আর করে না। আমার মনে হয় মিনুর মৃত্যু দাদীর মনে লেগেছে। কারণ মিনুর মৃত্যুর দোষ সম্পূর্ন দাদীর উপরই চাপিয়ে দিয়েছেন সবাই।
আমরা গ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরে এলাম। প্রায় দুই মাস পর খবর পাই দাদী মারা গেছে। আমরা ভাই বোনরা কিছুতেই তার হঠাৎ মৃত্যু মেনে নিতে পারিনি। আমরা গ্রামে গিয়ে শুনি আব্বু ঢাকায় এসে দাদীর জন্য যে টাকা পাঠাত মেজ চাচা সেই টাকা দাদীকে দিত না। এমনকি দাদীকে তারা খেতেও দিত না, না খেতে পেয়ে একদিন দাদীর প্রচন্ড জ্বর আসে।
দাদী চাচাকে হাত পেতে বলে, “আমারে অল্প কয়টা ভাত খাইতে দে, আমার অনেক জ্বর।”
চাচা তাকে খেতে দেয় না এমনকি আশেপাশের মানুষরাও তাকে সামান্য ভাত দেয় নি, এমনকি তার এই মুমূর্ষ অবস্থা দেখেও।
দাদী কার কাছ থেকে যেন ৮-৯ টা প্যারাসিট্যামল ঔষধ নিয়ে একসাথে সবগুলো খালি পেটে খেয়ে নেয়। তখন প্রায় সন্ধ্যা দাদী বিছানায় শুয়ে জ্বরে কাতরাচ্ছে। মেজ চাচা বলে চল তোমারে গায়ে পানি ডালি জ্বর নেমে যাবে।
দাদী বলল, “না বাবা আমারে গোসল করালে আমি মারা যাব যদি পারিস চারডা বাসি ভাতই দে।”
চাচা বললেন, “চলতো বক বক কইরো না” বলে দাদীকে যখন গায়ে পানি ডালে কিছুক্ষনের মধ্যেই দাদী মাটিতে পড়ে মারা যায়।
ফাল্গুনের আগমনে
আহা ফাল্গুনের এই আগমনে
মনের হরসে গুন গুনে,
গাইছি যে গান তাই
তোমারই স্মরনে।
হরুদের সমারোহ বনে
আগুনেরই ছটা।
সবুজের মাঝে মাঝে
শিমুল ফুল ফোটা।
প্রকৃতির চারদিক সেজেছে
এযন নব বধুর সাজ।
তাই ফাল্গুনের দুয়ির খুলে
শুভেচ্ছা জানতে এলাম আজ।
বিমর্ষতা কাঁটিয়ে চল কিছু সময় ধরে।
কষ্টের দুয়ার ছুরে ফেলে সুখের ওপারে।
নিভে যাএয়া প্রদিপের সুতোয় জ্বালায় আগুন।
দু-হাত বাড়িয়ে কাটে টেনে নাও এই ফাল্গুন।