Saturday, December 29, 2007

মায়ের দাদুর বিয়ে

Title of this: Marriage of mother’s grand father by Nafisa Mubassira

অনেক দিন আগের কথা। গ্রামের নাম আমতা হওড়া থেকে ৩-৪ ঘন্টার পথ। শহরের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যমে ছিল ট্রেন। তখন গ্রামে ছিল না পাকা রাস্তা, ছিল না বিদুৎ, চারপাশে গাছ-পালার ছিল সমারোহ দু-চারটে বাড়ি তাও অনেক দুরে। সে সময়কার একটি কাহিনী............

মায়ের দাদুর নাম সামসুল হুদা বয়স ছিল মাত্র পনের। তারা ছিল আমতা গ্রামের প্রভাবশীল পরিবার, সবাই তাদের এক নামেই চিনত। সামসুলকে আদর করে শামু বলা হত ছোট নামে। শামুর চাচীর বাড়ি ডিপে গ্রামে। একদিন শামুর চাচীর সাথে তার ৫ বয়সের বছরের ছোট বোন বেড়াতে আসে তার নাম ছিল জোহরা। ছোট এক অবুজ মেয়েটাকে চাপ কলের গোড়ায় গোসল করাতে নেয় তার বড় বোন, দুষ্টামি করে পানি ছিটিয়ে গোসল করতে থাকে সে। শামুর মা তাকিয়ে বলে ভারি সুন্দর এই মেয়েটা, জোহরা তার দিকে তাকিয়ে ছোট করে ভেংচি কাটে। শামুর মাও তার দুষ্টামিতে সাড়া দিয়ে বলল তোকেই আমার ছেলের বউ করব।

যেই কথা সেই কাজ। চাচীর বোল শামুর খালা সম্পর্কে হলেও শামুর সাথে জোহরাকে ১৫ ভরি স্বণ দিয়ে বিয়ে দিলেন। ছোট মেয়ে লাল ছোট সাড়ি ও গহনা পেয়ে খুব খুশী। গহনা গুলো ছুয়ে ছুয়ে দেখতে লাগল এবং খিল খিল করে হাসতে লাগল। বউ দেখার জন্য কয় গ্রামের লোক এক জায়গায় হল এবং সকলেই বউয়ের রূপের প্রশংসা করল। ছোট বউ রূপী মেয়েটার নাকের নথ এত্ত ভারী ছিল যে সে পানি খেতে পারছিল না। সে কাউকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল
মোর‍ নতটা খুলে নেওনা মুই একটু পানি খাই। সে নাকে কষ্ট পাচ্ছে বুঝে শামুর মা নথটা খুলে নিল। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে দেখে জোহরা বলল মোকে বাড়ি দিয়ে আস না সাঁঝ হয়ে এল সে মুই বাড়ি যাবুনি। নানী দাদীরা বলল এটাই তো তোর স্বামীর বাড়ি এখানেই তো তুই থাকবি। তারপর রাতটা কাটল শামুর মায়ের কোলে সে তার ছেলের এই ছোট বউকে খুব আদর যত্নে রাখলেন। সকালে সেই ছোট মেয়েটির বাপের বাড়ি যাওয়ার পালা। শামুর মা তাকে সুন্দর করে সাজিয়ে পালকিতে উঠাতে গেলেন ছোট মেয়ে জোহরা বলে উঠল মুই ঘর যাচ্ছি মোর নাকের নতটা দেওনা গো হঠাৎ ছোট মুখে এই কথা শুনে হাসির একটা সোরগোল পড়ে গেল সবার মধ্যে। শামুর মা বলল তাই তো গো নাকের নথটা তো দেওয়া হয়নি। বউ বিদায়ের সময় কথা হল মেয়ে বড় হলে অনেক জাকজমক ভাবে বউ উঠায় নিয়ে আসা হবে। ছোট্ট বধু জোহরা শ্বশুর বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি রওনা হল।

দিন যায়, মাস যায় বছর যায় ৫ বছরের মেয়ে ৮ বছর বয়স হয়েছে। বাড়ির বাইরে বের হলে গ্রামের লোকেরা তাকে জ্ঞান দিয়ে বলে তোমার বিয়ে হয়েছে তুমি বড় হচ্ছ পাড়ায় এত বেরিও না শ্বশুর বাড়ির লোকেদের চোখে পড়লে তোমাকে মন্দ বলবে। এরই মধ্যে জোহরার বাবা মারা গেল। আয় করার মত কেউ ছিল না বোনদের মধ্যে ছোট জোহরা একমাত্র ভাই সে ও তখন গ্রামের স্কুলে লেখাপড়া করত। বাবা মারা গেছে কি আর করার এখন সংসারের হালতো তাকেই ধরতে হবে। ১৫-১৬ বছরের ছেলে বুদ্ধি আর কতটুকু সে সিন্ধান্ত নিল জোহরার গহনা বিক্রি করে ব্যবসা করবে জোহরা বড় হওয়ার আগে তার ব্যবসার লাভের অংশ দিয়ে পুনরায় গহনা বানিয়ে দেবে তার বোনকে। কথাটা গোপন থাকলনা কার মাধ্যমে যেন পৌছে গেল জোহরার শ্বাশুড়ির কানে। বিদ্যুৎ চমকে উঠল সে বিয়ের গহনা বিক্রি করাটাকে সহজ ভাবে একেবারেই মেনে নিতে পারলেন না তিনি। তিনি জোহরার বাপের বাড়ি খবর পাঠিয়ে দিলেন যে ভাই বোনের শ্বশুড় বাড়ির গহনা বিক্রি করতে পারে সেই বাড়ির মেয়েকে আমি আমার বাড়ি উঠাবোনা। শামুর কানে গেল এই কথা তখন সে কলকাতায় ব্যবসা করত। সে তার মায়ের সিন্ধান্ত মেনে নিতে পারল না। চিন্তা করতে লাগল কিভাবে বউ আনা যায়। শামু তার মামার কাছে গেল তিনিও কলকাতায় চাকুরি করতেন। মামাকে বললেন আগামী সাপ্তাহিক ছুটি রবিবার ডিপে যাবে বউ আনতে তুমি আমার সাথে থাকবে। সপ্তাহের ছুটিতে কেউ বাড়ি ফিরল না। একটা নৌকা ভাড়া করে বিকেল পাঁচটায় রওনা হল তারা ডিপের উদ্দেশ্যে জোহরাকে আনতে। তাদের ডিপে পৌঁছতে রাত প্রায় এগারটা বেজে গেল। সে সময়কার দিনে রাত্রেই শ্বশুড় বাড়ি যাওয়ার রীতি ছিল, দিনে জামাই শ্বশুড় বাড়ি যাওয়াটা লজ্জাকর মনে করত। শ্বশুড় বাড়ি থেকে কিছু দূরে নৌকা ভিড়িয়ে মামাকে লুকিয়ে বসে থাকতে বলল, যতক্ষণ না শামু বউ নিয়ে আসে। জামাই দেখে জোহরার বাপের বাড়ির লোকজন খুবই খুশী হল। জামাইকে খাওয়ানোর জন্য তোরজোর পড়ে গেল। মুরগী রান্না, পায়েস, হরেক রকমের পিঠা, আন্ডা ভাজা আরো অনেক প্রকার খাবারের আয়োজন করল তারা। রান্না-বান্না আর খাওয়া-দাওয়া শেষ করতে রাত প্রায় দুটো বাজে। জামাইকে সুন্দর করে পরিপাটি বিছানা করে শুতে দিল। গ্রাম যখন পুরোপুরি নিঃশব্দ হয়ে গেল রাত বাজে তখন প্রায় তিনটার কাছে। শামুর চোখে ঘুম নেই তার মামাকে রেখে এসেছে খালের পাড়ে নৌকা নিয়ে অপেক্ষা করছে। কোন অজুহাতে জোহরাকে বাইরে নিয়ে যাবে সেই চিন্তায় সে ব্যস্ত। শামু জোহরাকে বলল আমি প্রসাব করব আমার সাথে একটু বাইরে চল, জোহরা বলল ভয় পাচ্ছ কেন তুমি তো বড় গো একাই যাও না। শামু বলল আমি একা গেলে আমাকে শিয়ালে খেয়ে ফেলবে তুই সাথে চল। জোহরা তার সাথে বাইরে বের হল শামু বলল একটু এগিয়ে চল জোহরা আপত্তি করল শামু বলল আর একটু এগিয়ে চল জোহরা আর একটু এগিয়ে গেল বাড়ি থেকে কিছু দূরে যেতেই শামু জোহরার মুখ চেপে কোলে উঠিয়ে নিয়ে নৌকার দিকে ছুটতে লাগল। নৌকায় জোহরাকে উঠিয়ে তারা রওনা হল। শামুর বাড়ি আসতে ভোর হলে গেল। জোহরাকে মামার সাথে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে শামু কলকাতায় চলে গেল মামাকে বলল জোহরাকে যেন মা ঘরে উঠায় জোহরাকে ঘরে না উঠালে সে বাড়ি ফিরবেনা। মায়ের সামনে দাড়ানোর মত সাহস তার ছিলনা। একারনে সে মামাকে দিয়ে জোহরাকে বাড়ি পাঠায় নিঃষ্পাপ ছোট মেয়ের দিকে তাকিয়ে সে তার খোভ ভুলে যায় আর তার ছেলের মনের ইচ্ছাও বুঝতে পারল বউ যত্নসহকারে ঘরে উঠালো আর তার ভাইকে বলল আমার ছেলেকে বাড়ি আসতে বল।

কয়েকদিন পর শামু বাড়ি আসল তারা সবাই মিলে সিন্ধান্ত নিল আবার যাকযমক করে তারা বউ আনবে। জোহরাকে আবার বাপের বাড়ি পাঠানো হল ভুল বুঝা বুঝির অবসান ঘটল। কয়েক বছর পর অনুষ্ঠান করে বউ আনার সিন্ধান্ত নেওয়া হল। তখনো জোহরার ভাইয়ের ব্যবসার তেমন কোন উন্নতি হয়নি। তাই শামু নিজেই গ্রামের লোকজনকে নিজের খরচে ভোজন করালো। বউকে আবার স্বণ ও বিয়ের যাবতীয় জিনিস পত্র দিয়ে অনুষ্ঠান করলেন। পালকি, ঘোড়ার গাড়ি এবং ব্যান্ড পাটি নিয়ে শ্বশুড় বাড়ি থেকে রাজকীয়ভাবে বউকে নিয়ে এলেন।

স্বাধীনতা

Title of this post: Liberty by Sufia Khatun

হে আমাদের আগমন কারি স্বাধীনতা
তোমার নয়টি মাসের স্মৃতি
আমাদের অন্তরে রয়েছে গাঁথা।
চিরদিন তোমাকে আমরা রাখব স্মরনে
আবার দেখা হল আজকের এই
১৬ই ডিসেম্বরে।
যেখানেই থাকি না কেন
আমরা তোমাকে ভুলব না
কারন আজকের এই দিনটি যেন
এক আনন্দপূর্ন স্বাধীনতা।
খোদা যদি থাকেন সহায়
কোনদিনই ভুলব না তোমায়
কারন তোমাকে পাওয়ার জন্য
বাংলার দামালছেলে
বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিল
বাংলা মায়ের কোলে।
আচঁলে তাহার আজও
রয়েছে রক্তেরই দাগ
যে স্মৃতি জীবন হতে
হয়নি তফাৎ।
সেই দিন তুমি স্বার্থক
হবে স্বাধীনতা
সত্য কথা বলিতে কারও রবেনা জড়তা।

Wednesday, December 19, 2007

প্রতিভার বিলুপ্তী

Title of this post: Abolished talent Sufia Khatun

সবেমাত্র এইচ ,এস,সি পাস করেছিআমি ও শিল্পী, আমরা দুই বান্ধবী একসাথে চলতাম, কোথাও যেতে হলে একসাথে যেতাম, দুই জনের মধ্যে ছিল গভীর মিল, কারন আমরা দুই জন ৬ষ্ট শ্রেনী থেকে এইচ.এস.সি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছিএক এক করে দুই জনে মনে করলাম একসাথে যে কোন বিশ্ববিদ্যায়ে ভর্তি পরীক্ষা দিবোকিন্তু ভাগ্যের পরিহাস দুইজনেরই একই সমস্যা টাকার জন্য কোন বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে পারলাম নাআমি এবং আমার ক্লাসের অন্য সব বান্ধবীদের তুলনায় শিল্পী করেছিল ভাল রেজাল্ট টাকার সমস্যার কারনে থেমে গেলো দুইজনের চলার পথক্লাসের মধ্যে শিল্পী ছিল সবচেয়ে গরীব ও মেধাবী ছাত্রী ওর বাবা কোন রকম মাছ বিক্রি করে সংসার চালাতভাল ছাত্রী ছিল বলে স্কুলও কলেজ এর তহবিল থেকে ওকে অনেক সাহায্য করতঅধিকাংশ সময় সহায্যের উপর নির্ভর করে ওর লেখা পড়া চলেতোআমি ঐ বছরেই বি. ভর্তি হয়ে গেলামকিন্তু শিল্পী ভর্তি হতে পারল না ওর বাবা মনে করল, মেয়েকে আরও যদি পড়ানো হয় তবে, তার মেয়েকে ভাল একটা পাত্রের হাতে তুলে দিতে পারবে নাকারন সে একজন গরীবতাই সে তার মেয়েকে পড়াবে নাআমি বুঝালাম, বিয়ে হওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপারকিন্তু ও শিক্ষি হলে ভাল চাকুরী করতে পারবেআপনার সংসারের অভাব অনটন দুর করে দেবে
ওর বাবা বলল, মেয়ে মানুষ কি করবে? ছেলে হলে একটা কথা ছিল

ওর বাবাকে কিছুতেই বুঝাতে পারলাম নাব্যর্থ র্হয়ে ফিরে এলাম বাসায়মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলোএর মধ্যে অনেক জায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসতে লাগলকেউ শিক্ষক কেউ ভাল চাকরীজীবিঐ দারিদ্রতাই হল ওর চরম শত্রু গরীব দেখে সবাই পিছিয়ে যায়এভাবেই চলতে থাকে প্রায় ৬ মাসহঠাৎ একদিন কলেজ থেকে এসে শুনি ওর আগামী শুক্রবার বিয়েছেলে অনেক বড়লোকবিশাল বড় ব্যবসায়ীকথাটা শুনে খূব খুশি হলামবিয়ের দিন হাজির হলাম ওর বাড়িতেগিয়ে দেখি বেনারশিতে ওকে এত সুন্দর লাগছিল যা দেখে সবাই চেঁচিয়ে উঠলামবিয়ে হয়ে গেলোবিদায়ের বেলায় হঠাৎ আমার কানে এল ছেলে নাকি কোন লেখাপড়া জানেনাএমন কি ছেলে কসাইসে বাজারে গোশত কেটে বিক্রি করেকিন্তু স্বাভাবিকের তুলনায় টাকা-পয়সা একটু বেশিশুনে মাথা গরম হয়ে গেলকি করব বুঝতে পারছিনাচ্ছে হল সবকিছু ফেলে, বিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে আসিকিন্তু পারলাম নাএকদিকে সমাজ অন্য দিকে বান্ধবীর মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে স্থি করে চুপটিকরে বসে রইলামঅন্য এক জনের কাছে জানতে পারলাম এ বিয়েতে নাকি শিল্পী নিজে মত দিয়েছেওর কথা মতই এই বিয়ে হচ্ছেশুনে ওর প্রতি ঘৃনা জন্মে গেলোওর প্রতি আমার একটাই রাগ, সে কেন একটা শিক্ষিত মেয়ে হয়ে একটা অশিক্ষিত ছেলেকে বিয়ে করলকাউকে কিছু জানতে দিলাম নাচলে এলাম বাসায়তারপর ওর সাথে আর দেখা কারার চেষ্ঠা করলাম না ও একদিন আমার সাথে দেখা করতে আসলোজানিনা কেন এমন ব্যবহার করেছিলাম ওর সাথেআমার মনে হয় যাকে বেশি ভালবাসা যায়তার প্রতি রাগ হয় পাহাড় সমানকেননা সবাই চায় তার প্রিয় মানুষটি সবর্দা সুখে থাকুক যাই হোক তা প্রায় ৬ মাস পর ওর সাথে

দেখা করার চেষ্টা কারলাম কিন্তু দেখা হলো না ওর সাথেতার আগই আমি অসুস্থ হয়ে পড়লামকোন ডাক্তার আমার রোগ ধরতে পারল নাআমি ধীরে ধীরে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লামচিকিৎসা নিতে চলে এলাম ঢাকয়কিছুতেই ভাল হলাম নাবনধ হয়ে গেলো আমার লেখাপড়াথেমে গেলো আমার জীবন বাধা পড়ে গেলো দুই জনের চলার পথ এরই মাঝে একটু সুস্থ হলামফিরে গেলাম দেশে একদিন হাটাতে, হাটতে ওদের বাড়িতে গেলামআমাদের গ্রামেই ওদের বাড়ি ওর সংগে দেখা হল নাওদের বাড়িতে গিয়ে যা শুনলামতাতে ওর প্রতি যে রাগ ছিল তা ধুয়ে মুছে গেলো শুরু হল সমাজের প্রতি ঘৃনাদারিদ্র্যের প্রতি ঘৃনাদারিদ্র মানুষকে কোনদিন সুখ তো দেয়ই না বরং সুন্দর সাজানো একটা জীবন ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়মাদের দেশে যৌতুক অতি সাধারন ও গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছেএ দেশের দারিদ্র বাবারা মনে করেন মেয়ে হয়ে জন্ম নেয়া হল একটা ভিশাপজন্মের পরে একটা মেয়ের পিছনে কত কিছু খরচ করতে হয় তার বাবাকেতার জীবন পরিচালনা থেকে শুরু করে লেখাপড়া এবং দায়িত্ব, কত খরচএকটা ছেলের বেলায় ও এইকোন কিছুর কমতি নেইকিন্তু বিয়ের সময় ছেলের বেলায় কোন নিয়ম নেইঅথচ মেয়ের বেলায় কত রকম ধান্দাবাজীশিল্পীর বাবা এতই গরীব ছিল যে, মেয়ের বিয়েতে যৌতুক হিসেবে নগদ টাকা দেওয়া তো দুরের কথা সাধারনত ভাত খাওয়ার একটা থালা দেবে সেটাও দেয়ার সমর্থ তার ছিলনা

আমাদের দেশে এমন একটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, শিক্ষিত মেয়ের জন্য একটা শিক্ষিত পাত্র খুঁজতে হলে তাকে সেভাবে সাজিয়ে দিতে হবেছেলেকে দিতে হবে, ছেলের ঘর সাজিয়ে দিতে হবেঅতএব বাধ্য হয়ে শিল্পির মত এমন অনেক প্রতিভাবান মেয়েরা শিক্ষিত হয়ে ও অশিক্ষিতের সাথে সারাটা জীবন কাটাতে হচ্ছে পৃথিবী সম্পর্কে অনেক কিছু জানা থাকলেও তাকে বাস করতে হচ্ছে ঘরের কোনেযা শুধুমাত্র তার জীবনকে বিষন্ন করে তোলেবাবাকে যাতে বসত ভিটেটুকু না হারাতে হয় সে জন্য শিল্পীকে বিক্রি করে দিতে হয়েছে অশিক্ষিত একটি স্বামী ও স্বামীর সংসার না আর হয় নি ওর সাথে দেখা আমি চলে এলাম ঢাকয়ওর জন্য আমার মনটা এখনো কাদেহয়ত ওর স্বামী টাকা পয়সা আছেশিল্পী সুখেই আছে কিন্তু শিল্পী কি মানসিক দিক দিয়ে সুখী? বাংলাদেশে এইড্‌স রোগের বিজ্ঞাপনের স্লোগানটি হল বাঁচতে হলে জানতে হবে ব্যাপারে সবাই অবগত আছেএটা থেকে সবাই বাঁচতে চায়, কিন্তু আমাদের দেশের প্রতিটা নারীর জীবনে এই যে যৌতুক নামের জীবানুটা ঢুকে গেছেএ থেকে বাঁচার উপায় কি? বাংলাদেশ কি দারিদ্রতা থেকে মুক্তি পাবে নাবাংলাদেশের নারীর কি যৌতুক থেকে মুক্তি পাবে নাআজ আমার বান্ধবীর হয়েছেকাল আমার হবেপরশু আর এক জনের হবেসমাজের সমস্ত বিত্তবান এবং শিক্ষিত বুদ্ধিমান মানুষের কাছে আমার একটাই প্রশ্ন বিভিন্ন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা তারা কি বাংলাদেশকে এই দারিদ্রতা ও যৌতুকের মত রোগ থেকে বাঁচাতে পারবে না?................

নারী জীবনের জননী-- ক্যাথরীন বি ওয়ার্ড কে ধন্যবাদ

Title of this post: We are thankful to Kathryn B. Ward, “The Mother” of Nari Jibon Project by Mayanur Akter Maya.

ক্যাথরীন বি ওয়ার্ড এবং নারী জীবনের সকল ডোনারদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, সব নারীদের জন্য এতবড় একটা সুযোগ করে দেওয়ার জন্যনারী জীবন ব্লগের মাধ্যমে আমাদের দেশের অনেক মেয়েরা বিভিন্ন ভাবে উপকৃত হচ্ছেএই প্রতিষ্ঠানটি অন্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সম্পূর্ন আলাদা এখানে মেয়েরা নিরিবিলি পরিবেশে এবং নাম মাএ রেজিষ্ট্রশন ফি দিয়ে বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রশিক্ষন নিচ্ছে শুধু মাত্র মেয়েদের জন্য এই প্রতিষ্ঠানএখানে ধনী- দরিদ্র কোন বৈষম্য নেই, ছোট বড়-র কোন বৈষম্য নেইকাজের বুয়া থেকে শুরু করে সব নারীরা এই নারী জীবন থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে উপকৃত হচ্ছেনযা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে সম্ভব নাআমাদের ম্যাডাম কে.বি. ওয়ার্ড নারীদের কথা চিন্তা করে এরকম একটা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করেছেনসে জন্য প্রথমে ম্যাডামকে আমার পক্ষ থেকে তারপর নারী জীবনের সকলের পড়্গ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি

তাছাড়া ব্লগের মাধ্যমে সব মেয়েরা তাদের লিখাগুলো, মনের ভাবগুলো বিশ্বের সবার কাছে তুলে ধরেছে যা এই প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে সম্ভব নাঅনেক মেয়ে এতে উৎসাহিত হয়ে তাদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পেরেছেঅনেকে অনেক লিখা লিখে রেখেছে, কিন্তু তারা সবসময় ভাবত কখনও কি আমার এই লিখা কোন মিডিয়ার মাধ্যমে তুলে ধরা সম্ভব হবে? একমাত্র ব্লগের মাধ্যমেই তা সম্ভব হয়েছেসেজন্য ওদের লিখাটা অনেক উন্নত হয়েছেদিন দিন তারা নতুন লিখা লিখার জন্য উৎসাহিত হচ্ছে, যা তারা কোন দিনই ভাবতে পারত নাএখন তারা চলার পথে যা দেখে তা নিয়ে ভাবে কিভাবে লিখা যায়এই যে তাদের জ্ঞানের প্রসার/বৃদ্ধি এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের ম্যাডাম ক্যথরীন বি ওয়ার্ড এর মাধ্যমেতিনি যদি সুযোগ করে না দিতেন তাহলে আমাদের মত এরকম উন্নয়নশীল দেশের মেয়েদের পক্ষে কখন ও তা সম্ভব হত না সে জন্য সকল ডোনার এবং ম্যাডামকে ধন্যবাদএতে মেয়েদের ভবিষৎ আরও উন্নত হয়েছে বিভিন্ন বিষয়ের উপর তাদের নতুন নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়া মেয়েরা এখানে বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রশিক্ষন নিচ্ছেযেমন :-

১. কম্পিউটার বেসিক এবং অফিস পোগ্রাম
২. কম্পিউটার যন্ত্রাংশের রক্ষনাবেক্ষন এবং সমস্যার সমাধান
৩. গ্রাফিক্স এবং ওয়েব ডিজাইন
৪. ইংরেজী ভাষা শিক্ষা
৫.ব্যবসা পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনা
৬.বাংলা ভাষা শিক্ষা
৭. টেইলারিং ও কাটিং মাস্টার
৮. ফটোগ্রাফি

আমি আমার কথাই বলছিআমি বাঙ্গালী, যতই ইংরেজী জানিনা কেন সেরকম জানিনাআমি যেদিন প্রথম নারী জীবনে আসি ম্যাডামের সাথে কথা বলার পর থেকেই আমার একজন পছন্দের মানুষ হয়ে গেলেন আমাদের নারী জীবনের মা-- কে.বি. ওয়ার্ডতখন আমি ম্যাডামের অনেক কথাই বুঝতাম না ম্যাডাম আমাকে ইংরেজী বলে সাথে আবার ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলা বলে সব কিছু বুঝিয়ে দিতেনএই যে সবার প্রতি ম্যাডামের সহমর্মিতা এবং সহযোগিতা সত্যি সেটা প্রশংসার যোগ্যআমি আমাদের ম্যাডাম কে খুব মনে করিশুধু আমি কেন? আমার তো মনে হয়, যে একবার আমাদের ম্যাডামের সাথে পরিচিত হয়েছে তারা সবাই ম্যাডামকে মনে করবেএরকম একজন পরোপকারি এবং নারী কল্যাণে সহায়তাকারী মানুষকে মনে করারই কথাআমি প্রথমে আমার পক্ষ থেকে এবং নারী জীবনের সকলের পক্ষ থেকে আমাদের ম্যাডামকে ধন্যবাদ জানাইম্যাডাম যখনি বাংলাদেশে আসেন তখনি আমাদের নারী জীবন আনন্দে মুখরিত হয়ে উঠে সবার মাঝে আনন্দের ছোঁয়া জাগে ম্যাডাম মায়ের মমতা দিয়ে আমাদের সবাইকে ভরিয়ে দেয়মানুষ যে এত মহৎ হয় ম্যাডামকে না দেখে আমি কখনও বুঝতাম না এই মানুষটা সত্যিই খুব মহৎম্যাডাম বিনা স্বার্থে আমাদের দেশের নারীদের জন্য সব কিছু করেছেন শুধু মাত্র নারীদের উন্নতি ও অগ্রগতির জন্যযাতে আমাদের দেশের নারীরা নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াতে পারে এবং অবহেলিত, অবাঞ্চিত হয়ে এই পুরুষ শাসিত সমাজে, তাদেরকে অন্যের বোঝা হয়ে যেন বেঁচে থাকতে না হয়

শুধু তাই না আমাদেশের দেশের নারীদের কথা চিন্তা করে ম্যাডাম নারী সাইবার ক্যাফে প্রতিষ্ঠা করেছেন এখানে শুধু নারীরাই তাদের প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারেবাংলাদেশের যে কোন নারী তাদের প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারবে এই নারী সাইবার ক্যাফেতেআমাদের দেশে অনেক সাইবার ক্যাফে আছে, সেখানে নারী, পুরুষ এক সাথে কাজ করে, কিন্তু সেখানে মেয়েদের অস্বস্তি থেকেই যায়আমাদের এখানে নারীরা তাদের প্রয়োজনীয় কাজ খুবই আনন্দের সাথে করতে পারে

ব্লগের কথা বললে হয় যে, ব্লগের মাধ্যমে প্রত্যেক ছাত্রীরা তাদের মনের কথা সাহিত্যিক আকারে বা ছোট গল্প আকারে লিখতে পারেতাদের দৈনন্দিন চলার পথে হাসি, কান্না, দুঃখ বেদনার মত যত রকম ঘটনা ঘটে তারা তা নিজের মত করে প্রকাশ করতে পারে ব্লগের মাধ্যমেসেখানেও ম্যাডাম মেয়েদের কথা চিন্তা করে, আমরা বাংলাদেশী আমাদের কথা চিন্তা করেতাই ইংরেজী লিখার পাশাপাশি বাংলা লিখার সুযোগ করে দিয়েছেনকারণ সবাই তো আর ইংরেজী লিখতে পারবেনাএসবের মাধ্যমে নারীরা তাদের জীবনে চলার পথে নানা সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হবেএই যে মেয়েদের উন্নতি অগ্রগতি তা সম্ভব হয়েছে আমাদের ম্যাডাম, নারী জীবনের জননী”-র জন্যই যে মানুষটা আমাদের জন্য এতকিছু করেছেন তাকে কি কেউ ধন্যবাদ না দিয়ে, শ্রদ্ধা না করে পারে ? ম্যাডামের কাছ থেকে আমরা যা পেয়েছি, ম্যাডামের প্রশংসার কথা বলেও শেষ করা যাবে না

ম্যাডামকে এবং অন্যান্য ডোনারদেকে জানাই গোলাপের প্রাণ ঢালা শুভেচ্ছা

‘‘পুষ্প নিজের জন্য ফুটে না
অন্যের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেয়

আমাদের ম্যাডামও নারী জীবনের জন্য, বাংলাদেশী অসহায় নারীদের সহযোগিতা করার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেননিজের সব স্বার্থ ত্যাগ করেছেন

২১ ডিসেম্ভর আমাদের প্রিয় ম্যাডামের জন্ম দিনআমি আমার পক্ষ থেকে এবং নারী জীবনের পক্ষ থেকে ম্যাডামকে জানাই জন্ম দিনের প্রাণ ঢালা শুভেচ্ছা এবং সৃষ্টি কর্তার দরগায় প্রার্থনা করি, ম্যাডামকে যেন যুগ যুগ ধরে বাঁচিয়ে রাখেন আমাদের মাঝে

Tuesday, December 18, 2007

কোন একদিন

Title of this post: Once a day by Zannat Ara Amzad


অজানা, অচেনা হয় যদি চেনা-জানা
কোন একদিন........
তুমি, আমি ডানা মেলা
যেদিন আকাশ হবে নীল

চোখে চোখে কথা বলা
না বলা যত কথা হবে সেদিন,
যেদিন হবে তোমার আমার
প্রণয় মালার দিন

দিন-ক্ষণ জানি না,
সময়-অসময় বুঝি না,
কোন বাঁধা মানি না-
যদি না বাজাঁও ভালোবাসার বীণ

বন্ধু

Title of this post: “Friend” A poem by Jesmin Ara Amzad

বন্ধু মানে ভালো লাগা
দুটি হৃদয়ের ভালোবাসা
বন্ধু মানে একটু আশা

মনের মাঝে স্বপ্ন বাঁধা
বন্ধু মানে একটু ছোঁয়ায়
পরশ লাগে যত
বন্ধু মানে ছুটে চলা
জোড়া শালিকের মত।
বন্ধু মানে উদার আঁকাশ
মেঘলা রোদের ঘর।
বন্ধু মানে স্নিগ্ধ আলোয়
শিশির ভেজা ভোর।
বন্ধু মানে বেজায় খুশি
একটু অভিমান।
মনের মাঝে কোথায় যেন
একটু খানি টান......

Thursday, December 13, 2007

ব্লগার প্রোফাইল- (শিক্ষার্থী)

Title of this post: Bloggers profile (students)

আফরিনা আফরোজ এ্যানি









"আমার নাম
আফরিনা আফরোজ এ্যানি, আমি ১৯৯০ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করি । আমার বাবা একজন ব্যাবসায়ী এবং আমার মা একজন গৃহিনী। আমরা দুই ভাই এক বোন । আমার দুই ভাই আমার ছোট্‌ আমি মানবিক শাখা থেকে ২০০৫ সালে এস.এস.সি এবং ২০০৭ সালে এইচ.এস.সি পাস করেছি আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হচ্ছে আমার গ্রামের বাড়ি। সেখানে আমরা অনেক কিছু দেখতে পাই যা আমরা শহর এলাকায় দেখতে পারি না। সেখানে কোন দূষিত বায়ু নেই, নেই কোন শব্দ দূষন, চারিদিকে সবুজের সমারোহ। আমার অবসর সময়ে সখ হচ্ছে টিভি দেখা, গান শুনা। আমি ভবিষৎতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই এবং আমার বাবা ও মাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করব। আমি নারী জীবনে ইংরেজী কোর্স করছি। এখন আমি ইংরেজী কোর্স শেষ করে কম্পিউটার শিখছি। নারী জীবনে আসার পর আমি অনেক কিছু সম্পর্কে জানতে পেরেছি।"


সুরমা আক্তার






"আমার নাম সুরমা আক্তার। আমি ল
ক্ষীপুর জেলার রাম গতি থানার ভান্ডার গ্রামে ১৯৮৬ সালের ১লা জুলা জন্ম গ্রহণ করেছি। আমি নোয়াখালী বিভাগের বাসিন্দা আমি ছোট বেলা গ্রামে কাটিয়েছি । বর্তমানে ঢাকা বাস করছি। মা আর ছয় বোন ও এক ভাইকে নিয়ে আমাদের সংসার। আমার মা একজন গৃহিনী। আমি ২০০২ সালে আলেকজান্ডার পাইলট হাই স্কুল থেকে এস.এস.সি পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়েছি এবং ২০০৫ সালে আলেকজান্ডার সরকারী কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পরিক্ষায় উত্তীর্ন হয়েছি। বর্তমানে আমি বি.এ প্রথম বর্ষে পড়ছি । আমার সখ বই পড়া। আমি গল্পের বই পড়তে অনেক পছন্দ করি। বই অবসর মুহুর্তে আমাকে অনেক আনন্দ দেয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমার প্রিয় কবি । লেখাপড়া শেষে আমি একটা ভাল চাকুরী করতে চাইনারী জীবনে ইংলিশ-১ থেকে উত্তীর্ন হয়ে ইংলিশ-২ তে ভর্তি হয়েছি। নারী জীবন সংস্থা মেয়েদের জন্য একটা ভাল সংস্থা।"

ব্লগার প্রোফাইল- (শিক্ষার্থী)

Title of this post: Bloggers profile (students)

হাছিনা আকতার







"আমার নাম হাছিনা আকতার । আমার জন্ম স্থান নোয়াখালী এবং আমার জীবনে উনিশটি বছর নোয়াখালীতেই কাটাই। এখন ঢাকা থাকি। আমার বাবার নাম, (মৃত) ছিদ্দিকুর বহমান, তিনি সরকারী চাকুরী করতেন তিনি ২০০১ সালে মৃত্যু বরন করেন। আমার মায়ের নাম ছালমা আক্তার্‌, তিনি গৃহিনি। আমরা তিন ভাই দুই বোন।

আমি দাখিল” পাশ করি ২০০১ সালে বেগম” খালেদা জিয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে এবং আলিম পাশ করি ২০০৩ সালে সোনাইমুড়ী হামিদীয়া কামিল মাদ্রাসার এর পাশাপাশি হ্যানিম্যান হোমিও প্যাথি মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হাসপাতাল কুমিল্লা ডিপ্লোমা ইন হোমিও প্যাথিক মেডিসিন এন্ড সার্জরী র্কোসের ৪র্থ বর্ষের ছাত্রী। আমার বেড়াতে ভালো লাগে। আমি সেলাই কাজ করতে পারি, সেলাই করতে আমার ভালোলাগে। আমি সিনেমা দেখতে পছন্দ করি আর আমার পছন্দের ছবির নাম মাটির ময়না। আমি একজন ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই এবং পাশাপাশি হতে চাই কম্পিউটার অপারেটর নিজেকে ভালো ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই এবং সুন্দর ভাবে গড়তে চাই।

নারী জীবন মহিলাদের জন্য সুন্দর একটা প্রতিষ্ঠান। আমি প্রথমে ইংলিশ- ক্লাসে ভর্তি হই এবং কোর্স কমপ্লিট করে ইংলিশ-ক্লাসে পড়ছি এবং কম্পিউটার শিখছি। প্রথমে আমি ব্রগ সম্পর্কে কিছুই জানতাম না কিন্তু নারী জীবনে এসে আমি ব্লগ সম্পর্কে জেনেছি এবং ব্লগে লিখার চেষ্টা করছি।"


আফরোজা আখতার








"আমার নাম আফরোজা আখতার। ১৯৮৭ সালে ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়ীয়া থানার মহেশ পুর গ্রামে আমি জন্মগ্রহণ করেছি। মা-বাবা ও চার ভাই বোন নিয়ে আমাদের সংসার। আমার বড়ভাই তিনি একজন মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক বড় বোন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা । মেজো ভাই এক মাওলানা এবং সেজোভাই পুলিশ সার্জন।

আমি একজন ছাত্রী । আমি বিবাহিত। আমার স্বামী একজন ইঞ্জিনিয়ার। ২০০২ সালে আমি আজিম র্গালস্‌ স্কুল” থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এস,এস,সি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছি এবং ২০০৪ সালে আখতার সুলতানা মহিলা কলেজ” থেকে প্রথম বিভাগে উর্ত্তীণ হয়ে বর্তমানে স্বিদ্ধেশ্বরী বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ এ বি,এস, এস এ পড়ছি। তার পাশাপাশি নারী জীবনে ইংলিশ ক্লাস করছি। আমার প্রিয় সখ হল বই পড়া। শরৎচন্দ্র ও ইমদাদুল হক মিলনের বই পড়তে আমার খুব ভাল লাগে। লেখা পড়া শেষে আমি একজন আদর্শ শিক্ষিকা হতে চাই । আমি ইংলিশ ভাষায় দক্ষতা অর্জন করার জন্য নারী জীবন” প্রজেক্টে এসেছি কারন এখানে খুব ভাল ভাবে ইংলিশ শিক্ষা দেওয়া হয় পাশাপাশি আমি ব্লগে ও অংশ গ্রহণ করছি যাতে আমি আমাদের নিজেদের সংস্কৃতি অন্যান্য দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারি।"

Monday, December 10, 2007

একজন নির্যাতিত নারীর জীবনের গল্প

Title of this post : "A Story of a Tortured Girl" By Mayanur Akter Maya
Content of this post: It is a story of a girl who was being tortured by her husband. Her name is Mitali. Her parents influenced her to marry only for money. So her husband treats her as a servant, not as a wife. She is so helpless that she doesn’t have any shelter in her parent’s house.


আমাদের সমাজ চায়, মেয়েরা তাদের সব আনন্দ ত্যাগ করে খুশি থাকবে সরাইকে নিয়েআর তা না করলে বলা হয় সে ভাল মেয়ে নাঅন্য দিকে হাসি মুখে মেয়েরা সব কাজ করে গেলেও সে তার কাজের স্বীকৃতি চায়যখন নিত্য দিনের ছোট খাটো কোন ত্যাগের স্বীকৃতি সে পায় না, তখনি শুরু হয় হতাশাচাইলেও এই হতাশা খুব বেশি দিন চেপে রাখা যায় নাতা কোন না কোন দিন বিস্ফোরিত হবেইএতে একদিকে যেমন সম্পর্কের ফাটল শুরু হয়, অন্য দিকে ধুকে ধুকে কষ্ট পায় মেয়ে নিজেই

আমি এমন একজন মেয়ের কথা বলছিমিতালী আমার ছোটবেলার বান্ধবীও দেখতে খুব সুন্দরীও যখন ৯ম শ্রেনীতে পড়ে তখন রানা নামের ধর্নাঢ্য এক ব্যক্তির সাথে তার বিয়ে হয়সে মিতালীর চেয়ে ১৭ বৎসরের বড়বিয়ে কি সে কথাটি বুঝে উঠার আগেই বাবা, আর বড় ভাই দুজন মিলে তাকে বিয়ে দিয়ে দেয় রানার সাথে

ঘরই যদি নিরাপদ না হয় তবে কোথায় যাবে নারী? ঘরের বাইরে এক পা, একটি দিন মানেই অসংখ্য অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হতে হয় নারীকেযখনি সে বিয়ে করবেনা বলে আপত্তি করল তখনই শুরু হল মিতালীর উপর বাবা ভাইয়ের অমানবিক নির্যাতনতার ঘর থেকে বের হওয়া, স্কুলে যাওয়া সব বন্ধ করে দেয়া হলএমনকি স্কুলের সব বান্ধবীদের সাথেও দেখা করা বন্ধ করে দিল মানুষ কোন সমস্যার মুখোমুখি হলে তার একমাত্র আশ্রয় বা স্থান হয় ঘর, তার পরিবার-- বাবা, মা, ভাই, বোন, আত্নীয়-স্বজনআর সেখানেই যদি হয় নির্যাতনের কেন্দ্র তখন নারীরা কোথায় যাবে বলতে পারেন?

মিতালীকে এক সপ্তাহের মধ্যে বিয়ে দেয়া হলশুরু হল মিতালীর নতুন জীবননির্যাতনের এক ধাপ পার হয়ে অন্য ধাপ শুরু হল! ভাই ও বাবা দুজন মিলে সেই রানার কাছ থেকে মিতালীর বিনিময়ে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেরানা কম বয়সি ও দেখতে সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করতে পেরেছে, সে জন্য সে সব কিছু করতে রাজিকিন্তু বিয়ের পর শুরু হল মিতালীর উপর অমানবিক নির্যাতনমিতালীকে কখনও তার স্ত্রী মনে করতেন নাসব সময় তাকে মনে করা হত কেনা দাসী

আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে যেভাবে নারীদের ক্রীত দাসী হিসেবে ব্যবহার করা হতমিতালীর সাথেও রানা সে রকম আচরণই করতআর সব সময় বলত, আমি তোকে তোর ভাই আর বাবার কাছ থেকে টাকা দিয়ে কিনেছিআমি তো আর তোকে বউ করে আমার ঘরে আনিনি, যে তোর সাথে ভাল ব্যবহার করতে হবেতোকে সব সময় আমার কথা মত চলতে হবেআমি যা করতে বলি তাই করতে হবে মিতালী সব কষ্ট মুখ বন্ধ করে সহ্য করেতাছাড়া কি বা করার আছে তারসে কাকে বলবে তার এই কষ্টের কথা? বাবাকে? ভাইকে? না, তারাই তো তার অসল শত্রু সে ভাবে আমি কি করব? বাবার বাড়িতে যাবে তারাই তো তার সর্বনাশ করেছেভাবতে ভাবতে ভাবনার রাজ্যে ডুবে যায় ,কিন্তু কোন কুল সে খুঁজে পায় না

কলি থেকে ফুল হয়, আর সে ফুল থেকে মালাকিন্তু ফুল ফোটার আগেই যদি সেই কলি কোন বিষাক্ত কোন ক্রীট দ্বারা আক্রান্ত হয়, তাহলে সেই কলি থেকে কিভাবে সুস্থ ফুলের আশা করা যায়তার স্বামী সব সময় তাকে অবিশ্বাস করতসে সব সময় বলে মেয়েদের প্রশয় দিতে নেইমেয়েরা শুধূই মেয়েতারা পুরুষের হুকুম মেনে চলবে, সংসার গোছাবে শশুর শাশুরী স্বামী সন্তান দেখাশুনা করবেতাদের আবার চাওয়া পাওয়ার কি আছে? কষ্ট সহ্য করতে না পেরে মিতালী একদিন সিদ্ধান্ত নিল আত্মহত্যা করবেএত বড় পৃথীবিতে তার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার একটও জায়গা নেই কোথাও

মরিতে চাহিনা এই সুন্দর ভুবনে!মিতালীর অনেক ইচ্ছা হয় বেঁচে থাকতে এই পৃথিবীতেকিন্তু যখনি মনে অসংখ্য প্রশ্ন জাগে কেন বেঁচে থাকব? কিসের আশায় বেঁচে থাকব? কার জন্য বেঁচে থাকব? সে কোন উত্তর খুঁজে পায় না, শুধু তার চোখের সামনে ভেসে উঠে তার মার সেই অসহায় মুখখানা! মনে পরে মায়ের কথাযখনি দেখত মা নিজের জন্য কিছুই করছে নাছেলে পছন্দ করে-- তাই বাড়িতে ভাল রান্না হচ্ছে , মেয়ে শুনতে ভালভাসে-- তাই এই গানটা প্রায়ই শোনা হয়স্বামী ঘুরতে পছন্দ করেন-- তাই বেড়ানো হয় অনেককিন্তু শুধুই নিজের ভালো লাগার প্রাধান্য দেয়নিমাকে মাঝে মাঝে প্রশ্ন করা হলে মা বলতেন, মেয়েদের অবার পছন্দ! সবাইকে খুশি করতে পারলেই খুশি তারা সবার খুশিতেই নিজের খুশি !এসব কথা ভাবতে ভাবতে দুচোখের পাতা এক করতে পারেনা মিতালী

একদিন সকালে মিতালী পাশের দোকান থেকে ঘুমের ঔষদ কিনে আনে, আত্মহত্যা করার জন্যযখন রাত গড়িয়ে সন্ধ্যা হল, সবাই যখন ঘুমে বিভোর, তখন মিতালী ঘুমের ঔষধ খেয়ে শুয়ে পরেহঠাৎ কিভাবে যেন রানা বুঝতে পারল মিতালী কিছু একটা ঘটিয়েছেমিতালী মারা যাচ্ছে সেই জন্য না -- নিজেকে বাঁচানোর জন্য মিতালীকে হাসপাতালে নিয়ে গেলআর তার বাবা, ভাইয়ের কাছ থেকে লিখিত ডকুমেন্ট রাখল-- যদি কোন দিন কোন কারণে মিতালী মারা যায় এর জন্য রানা কোন রকম দায়ী থাকবেনা!

রানা এতদিন মিতালীকে মানসিক নির্যাতন করতএখন সে শারীরিক নির্যাতন করতে শুরু করলঘরের বাহিরে বের হওয়া বন্ধ করে দিলরানা সিদ্ধান্ত নিল মিতালীকে আর এভাবে রাখবেনা, সে সন্তানের বাবা হতে চায়আর মিতালীর বয়স তখন ১৫ বছর চলছেএই পুরুষ শাসিত সমাজে নারীদের কোন মূল্যই নেইসেখানে সন্তান নেওয়া , না নেওয়ার সব সিদ্ধান্ত পুরুষেরইনারীরা হচ্ছে তাদের খেলার পুতুল; যেভাবে নাচাবে, সেভাবেই নাচতে হবে
মিতালী সন্তানের মা হতে চলেছেএত যন্ত্রনার নির্যাতনের মাঝেও কি মিতালী পারবে একজন সুস্থ সন্তানের মা হতে? নানা প্রতিকুলতা পার হয়ে মিতালী মা হলেনতার যমজ সন্তান হলসে তাদের নাম রাখল সবুজ ও সাথী

এখন রানা মিতালীর উপর নির্যাতন করে অভিনব পদ্ধতিতেমিতালী মা হয়ে গেছে এখন সে আবার বিয়ে করবেমিতালী দুসন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সব কষ্ট সহ্য করে নিচ্ছেতাহলে মেয়েরা কি পাচ্ছে এই পৃথিবীতে এসে? প্রতিটি পদে পদে নির্যাতিত হচ্ছে নারীরা

দেখা যায়, পরকীয়া আর যৌতুকের জন্য স্বামী ও তার আপনজনদের সহযোগিতায় স্ত্রীকে হত্যা করা হয়কলঙ্কিত হয়ে সংসার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উপায় না পেয়ে মিতালীর মত অনেক মেয়েরাই ধুকে ধুকে মরে, কেউ বা আবার লাশ হয়ে বের হয়তাই এগুলো থেকে বঞ্চিত হলে কতগুলো জীবন ধ্বংসের পথে চলে যায়যেখানে অভিভাবকরা নিজেদের সুখ শান্তি বিসর্জন দিয়ে সন্তানদের সঠিক পথে রাখার জন্য আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে এই আভিভাবক অনন্দ-ফুর্তি করার জন্য সন্তানদের দুনিয়াতে এনে তাদেরকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে

মিতালীর মত কত নারীরা আমাদের দেশে ঘরে বাহিরে প্রকাশ্যে গোপনে নির্যাতিত হচ্ছেএই নির্যাতন থেকে নারীদেরকে রক্ষা করতে হলে আমাদের সবার মানসিকতার পর্রিবতন করতে হবেমেয়েদেরকে মানুষ ভাবতে হবেকারণ মেয়েরাও মানুষ