Saturday, October 11, 2008

বিধবা নারী

Title of this post: A Widow Joynab khanam

যার স্বামী মারা গেছে
তারই নাম বিধবা
দুনিয়াতে তার আর
আপন রইল কেবা?
বিধবা নারী বুক ভাসায়
চোখের জলে
শ্বশুর বাড়ীর লোকেরা তাকে
উপহাস করে চলে।
বলে—স্বমীকে তো খেয়েছো
এই বয়সে
টগবগে যৌবন—দুঃখ কিসের
নতুন নাগর জুটে যাবে- অনায়াসে।

স্বামী তাকে বড় ভাল বাসত বলে
মেয়েটি এসব কভু ভাবেও না ভুলে।
স্বামীর শত স্মৃতি সে
রাত জেগে ভাবে
সিদ্ধান্ত তার
স্বামীর স্মৃতি নিয়েই জীবন কাটাবে।
বাবার বাড়ি যায় না সে ভয়ে
তারা যদি জোড় করে
দিয়ে দেয় বিয়ে!

স্বামীর বাড়ীতে পড়ে আছে
বিধবা নারী
শ্বাশুড়ী তাকে পরিচয় দেয়
কাজের মাথারি।
সারা বাড়ির সব কাজ
করছে নিজ হাতে
কথায় কথায় ধমক আর
গালি আছে সাথে।
পরিবারের সবার সবই জোটে
বিধবার জন্য কারো টাকা নেই মোটে।
পরনে ছেঁড়া শাড়ি, ছেঁড়া ব্লাউজ
সেদিকে কারো যেন নেই কোন হুশ।
খাবার খাবে সে সবার শেষে
বুয়ার ঘরে পরে থাকে
ভিখারীর বেশে।
রাত হলে ভয় পায়
কেউ নেই সাথে
ভাবে সে-একা থাকার সিদ্ধান্ত
ভুল আছে কি তাতে?
এই দুর্বিষহ জীবনের যন্ত্রণা
আর যে সওয়া যায়না।

ঈদ এলে বিধবাকে
করা হয় মূল্যবান,
যাকাতের নতুন কাপড়ে
দেয়া হয় সম্মান।
বিধবার মুখ দেখে
বাইরে যায়না কেউ
কারো নতুন বাচ্চার মুখ
সে দেখেনা কভু।
কারণ সে অপয়া, অলক্ষী তাই
সবাই তাকে এড়িয়ে চলে
নির্মম অবহেলায়।

স্বামীকে খেয়েছে সে
এই তার অপরাধ,
বিধবার বাঁচার আর জাগেনা স্বাদ।
গ্রামের মাতবর একদিন মাতাল হয়ে
ঢুকে পড়ে রাতের বেলায়
বিধবার ঘরে।
বিধবা বটি নিয়ে আসল তেড়ে
মাতবর কলঙ্ক রটাল বিধবাকে ঘিরে।
চরিত্র হীনা উপাধি
সহ্য হলনা তার
নদী জলে ডুবে মরে
মেনে নিল হার।

নিঃসন্তান নারী

Title of this post: Childless woman by Joynab khanam

কেউ মা হয় বছর বছর
কেউ হয়না কোন বছর
যার হয় সে অনেক সুখী
হয়না যার সে পোড়া মূখী।
শ্বাশুড়ী তাকে ডাকে অপয়া
স্বামী তাকে ডাকে বেহায়া ।।
প্রতিবেশীর কাছে সে
অলুক্ষণে-ভাগ্যহীনা
নিঃসন্তান নারীর সাথে
কেউ আর মিশেনা।
সবাই যেন করে তাকে করুণা
ভাবে সে-মরণ কেন আসেনা?
স্বামীর সংসারের স্বপ্ন ছাড়ি
একদিন ফিরে সে বাপের বাড়ি।
মা হওয়ার জন্য সে-
পায়নি কোন চিকি‌‌ৎসা
পেয়েছিল তাবিজ আর পীরের পানিপড়া।
দোষ কার-স্বামীর নাকি তার?
হয়নি প্রমাণ
ফিরে আসতে হল চিরতরে
মুখ বুজে সয়ে সব অপমান।
নিঃসন্তান হওয়া যেন
নারীর জন্মগত পাপ,
নিঃসন্তান নারী
যেন সমাজেও অভিশাপ।

যৌতুক প্রথা

Title of this post: Dowry tradition by Asia Afrin Anni

বাংলাদেশের মত জনবহুল দেশে বিভিন্ন রীতিনীতি ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে অস্তিত্ব বজায় রেখেছেএর মধ্যে যৌতুক প্রথা অন্যতম এবং এটি বহুকাল ধরে গ্রামীন সমাজে বিস্তার লাভ করছেযৌতুক বলতে গ্রামীন সমাজে কন্যার বিয়ের সময় তার অসহায় পিতামাতা দ্বারা উপঢৌকন হিসেবে বরকে দেয়া প্রদত্ত সম্পদকে বোঝায়যৌতুকের আবির্ভাব হয়েছে পুরুষ শাসিত সমাজ থেকেবরপক্ষ যৌতুককে তাদের পাওনা এবং কন্যাকে ক্রয়-বিক্রয়ের বস্তু মনে করেবাংলাদেশে যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছেগ্রামে মেয়েদের বিয়ের জন্য তাদের দুঃখিনী মাতা-পিতাদের অর্থের বিনিময়ে সুখ কিনে নিতে হয় বরপক্ষের কাছ থেকেবরপক্ষকে যৌতুক দিতে পারলে মেয়েদের বিয়ে হয় নয়ত তাদের কুমারী হয়েই জীবন কাটাতে হয় ঘরের এক কোনেআর যদি যৌতুক ছাড়া কোন মেয়ের বিয়ে হয়, তাহলে বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ীতে সেই মেয়েকে নীরবে সীমাহীন অত্যাচার সহ্য করতে হয়শ্বশুর সম্পদশালী হলে বরের যৌতুকের পরিমান বাড়তেই থাকে

এই প্রথাটি এখনও চালু আছে কারণ বাংলাদেশের মানুষ সচেতন নয়একমাত্র সচেতনতার অভাবে যৌতুকের মত একটি প্রকট সমস্যা বাংলাদেশে বিরাজ করছেএছাড়া এই সমস্যা উৎখাতের জন্য বিভিন্ন কঠোর আইন প্রণয়ন করা হয়েছেএই আইনগুলোকে আমরা যদি সঠিক ভাবে কাযর্কর করি এবং নিজেরা সচেতন হই তাহলে আমরা যৌতুক প্রথা প্রতিরোধ করতে পারব, পারব বাংলাদেশকে যৌতুক প্রথাবিহীন দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে

Friday, October 10, 2008

ভালোবাসা

Title of this post: Love by Laily Jahan Meghla

ভালোবাসা দিয়ে আমরা মানুষ
জীবনটাকে গড়ি
ভালোবাসা হতে তৈরী যত মন
অনিন্দ্র সৃষ্টি
কখনো বা এই ভলোবাসা
আশার স্বপ্ন দেখায়
কখনো বা এই ভালোবাসায়
চিরদিন বেঁচে থাকে আজীবন
খোদার কাছে এই দোয়া করি
কখনো বা এই ভালোবাসা
পরে চোখের জলের বৃষ্টি
ভালোবাসা দিয়ে যুদ্ধ শুরু
ভালোবাসা আনে শান্তি
এই ভালোবাসা দুর করে দেয়,
হাজারো ভুলভ্রান্তি।

সুখ

Title of this post: Happiness by Pretty Ahmed

সুখ তোমাকে পাইনি বলে হয়ে গিয়েছি
আকাশের কালো মেঘ

সুখ তোমাকে পাইনি বলে রূপ
নিয়েছি সাগড়ের হাঙ্গরে
সুখ তোমাকে পাইনি বলে মিতালী
করেছি মানুষ খেকো গাছের সাথে

সুখ তোমাকে পাইনি বলে তাই ঝড়ে
গেছি শ্রাবনের ফোটা ফুল হয়ে
সুখ তোমাকে পাইনি বলে তাই
পড়ে আছি ডানা ভাঙা পাখির মত করে

সুখ তোমাকে পাইনি বলে তাই
বন্ধুত্ব করেছি চিতা বাঘের সাথে
সুখ তোমাকে পাইনি বলে তা
বয়ে যাচ্ছি বহতা নদীর মত করে

সুখ তোমাকে পাইনি বলে পুড়ে
যাচ্ছি লেলিহান অনলের মধ্যে পড়ে
সুখ শুধুই তোমাকে পাইনি বলে
নিশেঃষ হয়ে যাচ্ছি তিলেতিলে

Thursday, October 9, 2008

একজন নারীর আত্মকথা

Title of this post: A tale of a woman by Ayesha Sanjida Synthia.


পারভিন হচ্ছে আমাদের মতই একজন অতি সাধারণ মেয়ে। কৃষক পরিবারের এই অতি সাধারণ মেয়েটি তার ভাই-বোনদের মধ্যে বড়। বাবা-মা আর ভাই বোনদের নিয়ে তার পরিবার। শহরে পারভিনের জন্ম হলেও সে গ্রামেই বড় হয়েছে।

পারভিন পড়ালেখায় ভাল ছিল। গ্রামের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সে পড়ত। কিন্তু গ্রাম বাংলায় আজও বাল্য বিবাহের একটি প্রথা প্রচলিত আছে। মেয়ে বড় হয়েছে ওকে তাড়াতাড়ি বিবাহ না দিলে পরে আর বিবাহ হবে না। তাই ৫ম শ্রেণীতে অধ্যায়ন অবস্থায় পারভিনের বাবা পারভিনকে বিবাহ দেয়।

প্রতিটি মেয়েরই স্বপ্ন থাকে ভাল স্বামী সুন্দর সংসার। কিন্তু পারভিনের সেই স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই রয়ে গেল। বিবাহের কিছুদিন পর স্বামীর অত্যাচার শুরু হয়ে যায়। পারভিনের মতে তার স্বামী বউ মারায় পৈশাচিক আনন্দ পেত। সে কারণে-অকারণে শুধু মারত। ওকে খেতে দিত, কাপড় দিত না।

বিবাহের কয়েক মাস পর পারভিন গর্ভবতী হল। গর্ভকালীণ অবস্থায় স্বামীর অত্যাচারের হাত থেকে মেয়েকে ও নবজাতকটিকে রক্ষা করতে, পারভিনের বাবা পারভিনকে নিতে আসে। মেয়ের বাড়িতে তার কোনো আদর-সমাদোর কিছুই হল না। তিনি কষ্ট ভরা মনে মেয়েকে নিয়ে চলে আসেন।

অবশেষে পারভিনের আধাঁর ঘর আলোকিত করে ফুটফুটে সুন্দর একটি পুত্র সন্তান এল। শিশু জন্মের খবরটি পেয়েও পারভিনের স্বামী তার সন্তান ও স্ত্রীকে একটিবারের জন্যে দেখতে আসেনি। বরং, সে তার সন্তানকে অস্বীকার করে।

বাঙালি নারী শত অত্যাচার সহ্য করেও স্বামীর চরনে পড়ে থাকে। পারভিনও তার ব্যতিক্রম করল না। এবার পারভিনের উপর তার স্বামীর অত্যাচার আরো বেড়ে গেল। তার স্বামীর অবিশ্বাস, সন্দেহ এবং অসহনীয় মারধোর পারভিনকে একদিন প্রতিবাদী করে তোলে। অবশেষে পারভিন বাধ্য হয় তার স্বামীকে তালাক দিতে।

পারভিন ও তার ছেলে বাবু সেই পৈচাশিক লোকটির হাত থেকে মুক্তি পেলেও, মুক্তি পায়নি অভাব-অনটন, দারিদ্রতা ও সমাজের কটুকথার হাত থেকে। বাবু এখন গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর একজন ছাত্র। বাবু তার নানার বাড়িতে থাকে। পারভিন তার পরিবারের দারিদ্রতা মোচনের জন্য শহরে মানুষের বাসায় কাজ করে। তবুও আছে তাদের অভাব অনটন। কখনো হয়তো তারা পেটপুড়ে দু‌‌‌‌‍‍‍‍'বেলা খেতে পায় কখনো বা পায় না। এটাই হচ্ছে আমাদের দেশে নারী জাতির অবস্থান।

বাংলাদেশের আনাচে কানাচে এমন আরও অনেক পারভিন আছে যারা প্রতিনিয়ত এধরনের অত্যাচারের সম্মুক্ষীন হচ্ছে। নারী জাতির এ অবস্থানের অবসানও একদিন নারীকেই করতে হবে। আসুন আমরা সবাই আমাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হই।