Saturday, January 12, 2008

এটাই কি সমস্যা- “আমি নারী”???

Title of this post: The Problem is—‘I am a woman’ by Golam Rabbany Sujon

আমি আফরোজা, আমি যখন স্কুলে পরতাম তখন থেকেই আম্মু আমাকে স্কুলে নিয়ে যেত এবং নিয়ে আসতোএখন আমি মেয়েদের কলেজে পড়ি এনো আমাকে আম্মু নিয়ে যায় নিয়ে আসেঅথচ ভাইয়া মাত্র তিন বছরের বড় সে একা যায় একা আসেভাইয়া কত স্বাধীন !

আমি রিফাত একই এলাকায় একটি স্কুলে পড়ি এবং একা বান্দুবীদে সাথে যাতায়াত করিএকদিন একা স্কুলে যাচ্ছিলাম রাস্তায় এক গোয়ালা যুবক এমন উক্তি করল, যা আমাকে খু্‌ব আঘাত করল আমি কাঁদলাম! আমি রেগে গিয়েছিলাম বেশ কয়েকজন লোক জমেছিল আমি তখন আর ও লজ্জা পেয়েছিলাম আমি কাঁদলাম! বাবা, মা, ভাইয়া আমাকে কয়েক সপ্তাহ স্কুলে যেতে দেয়নিবাসা পরিবর্তন করেছিল , কারণ ওরা বাসা চিনেছিলপরে অন্য রাস্তা দিয়ে স্কুলে যেতাম বোরকা পরে এবং উপদেশ মত মাথা নিচু করে রাস্তা দেখে চল ফেরা করিএখন আমি কলেজে পড়ি ভাইয়া ও কলেজে পড়ে, ভাইয়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করে ছাত্র আন্দোলনে মিছিলে অংশ নেয়বাবা মা কিছু বলেনাভাইয়া কত স্বাধীন! যখন ইচ্ছে তখন বাসায় আসেআর যদি আমি একদিন বোরকা না পড়ি অনেক বকা খেতে হয় - যত গরমই হোক আমাকে বোরকা পড়ে যেতেই হয় আমি সুরভী (১৭) ঢাকায় একটি প্রাইভেট ডেন্টাল কলেজে পড়িআমার বাবা মা শিক্ষিদ্বিতীয় বর্ষে উঠায় বাবা-মা একটি মোবাইল ফোন কিনে দেয় যোগাযোগ রক্ষার জন্য এক বান্ধুবীর অনুপ্রেরনায় অন্য এটি মোবাইলে এক ছেলের সাথে প্রায় কথা হতকারণ মোবাইলে প্রেম ও হয়ে গিয়েছিলব্যপারটা নিকটতম কয়েকজনে জানার পর বাবা মার কানে ও চলে আসেশেষে আমাকে লেখাপড়া বন্ধ করে ঢাকা থেকে বাড়িতে নিয়ে যায়অথচ আমি বাবা মার বিনা অনুমতিতে বা লেখাপড়ার শেষ হওয়ার আগে কনোই বিয়ে করতাম নাএখন সারাদিন বাসায় বসে থাকি মোবাইল প্রেম করেছি বলে সব বান্ধুবীর সাথে যোগাযোগ বন্ধবাবা মা বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে

আমি মেঘলা ( ১৫)গ্রামের স্কুলে লেখাপড়া করতামআমাদের বাড়ির কাছেই ছিল বড় কলেজ, ছাত্র/ ছাত্রী সবাই লেখাপড়া করেএস এসসি পরিক্ষার আগেই স্থানীয় এক বখাটে ছেলে প্রেমের প্রস্তাব দেয় - অস্বীকার করার পরে অভিবাকদের মাধ্যমে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, তাতে ও অস্বীকার করায় হুমকি দেয় অপহরন করারতারপর বাবা-মা আমার স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়বাড়িতে বসে লেখা পড়া করে পাহারায় এস.এস.সি পরিক্ষা দিলামপরিক্ষার পর ঢাকায় খালুর বাসায় পাটিয়ে দেয় ভালো রেজাল্টা হওয়ায় ঢাকার কলেজে ভর্তি হইগ্রামে বাবা-মার কাছে যেতে ভীষন ইচ্ছে করে কিন্তু যেতে দেয় নাএখন শুনেছি আমার বিয়ের জন্য পাত্র খুজছেআমাকে বিয়ে দিয়ে বাবা-মা বিপদ মুক্ত হতে চায় কারণ আমি নাকি তাদের সমস্যা

আমি সুমি (২২) তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় আমিবাবার সামান্য আয়ে কোন রকমে সংসার চলেঅর্থাভাবে ভাই বোন কারোরই বেশিদুর লেখাপড়া হচ্ছে নানারীজীবন থেকে টেইলারিং শিক্ষা নিয়ে ও বেকার হয়ে বসে থাকি বাসায়খুব ইচ্ছে হয় কাজ করে আয় করে বাবাকে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করারবাবা-মার অনিচ্ছা সত্যে ও প্রতিবেশী এক লোকের সহযোগিতায় সামান্য বেতনে টেইলারিং দোকানে কাজ নেইভালই লাগছিল কিছু আয় করতে পারছি বলেসমস্যা হলো কাজের চাপ বেশী হলে সন্ধার পরে ও (রাত ৯:০০) কাজ করতে হতোতখন বাবা মা আমাকে কাজ করা বন্ধ করে দেয়মা বলেছে মেয়ে মানুষ সন্ধার পরে বাহিরে কাজ করতে নেইলোকজন খারাপ বলছেতারর ও আমি অভাবের কথা বলে যুক্তি দেখালে বাবা-মা অমাকে বকা দেয় এবং তোকে বিয়ে দিতে সমস্যা হবে! সাথে তোর বোনদে ও একই সমস্যা হবেআমরা সমাজে মুখ দেখাতে পারবো নাতখন আমি চুপ হয়ে যাই এখনো চুপ আছি

আমি ফেন্সি রহমান (৩০) কলেজে কিংবা অফিসের সম্মুখেই দুই ,একটা রিক্স, সি.এন.জি পাওয়া যায়আমাকে দেখলেই রিক্সাওয়ালা এগিয়ে আসে ভাড়া চায় অনেক বেশী সি.এন.জি চালক বলে মিটার নষ্ট ভারা চায় অনেক বেশী বাধ্য হয়েই নিতে হয়কারণ ওরা জানে আমি বেশীদুর হাঁটতে পারব না কারণ আমি মেয়ে মানুষগত মাসের শেষ সপ্তাহে হাতে টাকা ছিল না বলে পায়ে হেঁটে বাস স্টপে পর্যন্ত এলাম অন্য পুরুষ ষ্টাফদের মতোকিন্তু য় দশ/পনের মিনেট পর পর টাউন সার্ভিস বাস এলে ও আমি উঠার অনুমতি পাই না গাড়ী থামাবার আগেই বাস হেলপার বলে উঠে বাড্ডা- কুড়িল উত্তর টঙ্গী মহিলা সিট খালি নাই, মহিলা উঠবেন নাপুরুষ যাত্রীরা ঠেলা ঠেলি করে উঠলে আমি উঠতে পারি নাকারণ আমি যে মেয়ে মানুষঅথচ দেখা যায় রির সম্মুখ ভাগে মহিলা সিটে পুরুষ ঠাসাঠাসি বসাপরে কি আর করা কতক্ষদাঁড়িয়ে থেকে পরিচিত কেউ দেখে ফেলতে পারে তাই বেশী টাকায় রিক্সা নিয়ে বাসা থেকে টাকা এনে ভাড়া দিতে হলো

আমি একজন বাঙ্গালী নারী

আমি কুলছুম বানু (২৫) ওরফে বাণুর মা বিয়ে হয়েছে সাত বছর আগেগ্রামের এক রাজ মিস্ত্রিরির সাথেইতিমধ্যে আমাদের দুটো ছেলে সনন্তান হয়েছেবড় ছেলের বয়স ৪ বছর ছোট ছেলের বয়স ১ বছরস্বামীর অল্পবাড়ী ভিটা এবং ছোট ঘর ছাড়া স্থায়ী কোন সম্পদ নেইপ্রতিদিনের আয়ে চলে সংসার, গত পাঁচ মাস আগে স্থানীয় একটি এন.জি.ও থেকে পাঁচ হাজার টাকা লোন নেই আমার নামে স্বামী ব্যবসা করবে চিন্তা রে একমাস পর স্বামী ঢাকায় চলে যায়রাজমিস্ত্রির কাজ করবে বলেএন.জি.ও লোক এসে কিস্তির জন্যঅভাবের জন্য অন্য লোকের বাড়িতে সনন্তানদে মুখে পর্যন্ত খাবার দিতে পারি নাপ্রতিদিন কাজ পাওয়া যায় নান্তানরা কাঁদে ক্ষুধার কষ্টে এন.জি.ও সদস্যদের অপমান, মার স্বামীর ঠিকানা জানা নেইআমি কি এখন আত্নহত্যা করব!!! ঢাকায় স্বামীর খুঁজে যেতে সবাই নিষেধ করে কারণ আমি মেয়ে মানুষ


উপরে উল্লেখিত ঘটনা সম্মুহ আমাদের চারদিকে অনেক মেয়েদের জীবনে অহরহ ঘটছেএই সকল ঘটনা সাধারনত কেউ প্রকাশ করে না, নারীরা এসব নির্যাতন নিরবে সহ্য করে যাচ্ছেআর কত কাল.....???

Tuesday, January 8, 2008

প্রথম পরীক্ষা

Title of this post: An Interesting Story of my Exam By Shanta Islam

একটা সময় ছিল যখন আমা এস.এ.সি পরীক্ষার পরিক্ষার্থী দিলাম। সময়টা ছিল ২০০৪ সালের একটি ঘটনা। আমার প্রথম পরীক্ষা ছিল ইংরেজী ১ম পত্র। সবার মত আমিও ঐ দিন পরীক্ষা দিতে যাই। আমার সংগে সেদিন আমার বাবা ও মা আমাকে পোঁছে দেবার জন্য সেখানে যায়। আমার বাবা মা আমাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকিয়ে দিয়ে তারা আমার জন্য বাইরে অপেক্ষা করতে থাকে। ঐ দিন যেহেতু আমার জীবনের প্রথম র্বোড পরীক্ষা সুতরাং স্বভাবতই আমার খুব ভয় লাগছিল এবং ভিতু ছিলাম। একটা সময় পরীক্ষা শুরু হবার ঘন্টা পড়ল এবং আমরা সবাই যে যার আসনে বসে পড়লাম। পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল সবাই খাতা এবং প্রশ্ন পেয়ে লিখতে শুরু করলাম। আমার ভয়টা তখনো আমার ভেতর থেকে সম্পূর্ন যায়নি কিন্তু তবুও আমি ভাল পরীক্ষা দিতে চেষ্টা করছি। পরীক্ষা দিচ্ছি এমন সময় অর্থ্যাৎ প্রায় ১ঘন্টার মাথায় আমাদের ক্লাসের সামনে একজন পুলিশকে এসে দাঁড়াতে দেখলাম। এবং তাকে দেখে মনে হচ্ছিল সে যেন কাউকে খুঁজছে। এক সময় সে ক্লাসে ঢুকে পড়ল এবং একটি নাম ধরে বার বার ডাকতে লাগল। সেই সময় যে মানসিক অবস্থা কেমন হয়েছিল আমা বোঝাতে পারবনা। কারন সেই নামটি আর কারো নয় নামটি শান্তা অর্থ্যাৎ আমার নাম। পুলিশ লোকটা বার বার নাম ডাকা সত্ত্বেও যখন কোন সারা পেল না তখন সে আমাদের ক্লাসের দায়িত্বে সে ম্যাডাম ছিল তাকে খুঁজে দেবার জন্য অনুরোধ করল। যদিও আমার ক্লাসের সব বন্ধুরা এবং আমিও জানি নামটি কার তবুও আমরা কেউ মুখ খুলছিলাম না। আমার ক্লাসের সব মেয়েরা বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছিল কিন্তু তারাও কিছু বলছিল না। কারন তারা আমার ক্ষতি হোক তা চায়নি। তখন আমার ক্লাস টিচার এবং পুলিশ আমার নাম ধরে ডেকে যাচ্ছে কিন্তু কোন সাড়া পাচ্ছে না। কিন্তু আমি জানতাম আমি নির্দোশ। একসময় আমি আমার আসন থেকে উঠে দাড়ালাম এবং বললাম আমিই শান্তা। পুলিশ লোকটি তখন হাসিমুখে আমাকে আম্মু বলে ডাকদিল এবং আমার পরীক্ষা কেমন হচ্ছে জানতে চাইল। এবং সে আমাকে একটা পানির বোতল দিল আর আমার যদি কোন অসুবিধা থাকে তাহলে তাকে জানাতে বলল। আমি তখনো বুঝতে পারছিনা ব্যাপারটি আসলে কি? পরে জানতে পারলাম লোকটি আসলে আমার বাবার বন্ধু। আর তাছাড়া আমার বাবা নিজেও একজন পুলিশ। ঠিক ঐ মূহুর্তে আমার এই কথাটি মনে ছিলনা।.............