Thursday, December 4, 2008

নারী নির্যাতন বন্ধ করুন

Title of this post: Stop Violence Against Women by Fabliha Tasnim Hridi

আমরা সবাই খুব বড় গলায় বলি আমাদের দেশে নারী-পুরুষের অধিকার সমান। আসলে কি তাই? যৌতুক, এসিড নিক্ষেপ, অপহরণ ইত্যাদি তো আছেই। কিন্তু সমাজের ছোট ছোট ধাপে নারীদের যে কিভাবে বঞ্চিত করা হয় সেটা কে দেখবে? দেখে সবাই কিন্তু কেউ কিছু বলে না। ঘুমন্ত মানুষকে জাগানো যায় কিন্তু যারা জেগে জেগে ঘুমায় তাদের কখনোই জাগানো যাবে না। নারীদের প্রতি অবহেলা হয়তবা কোনদিনই দুর হবে না। কারন কিছু সংখ্যক মানুষ সুন্দর সমাজ চায়, সবাইতো চায় না। আমি আমার পরিচিত কয়েকটি পরিবারের কথা জানাতে চাচ্ছি আর প্রশ্ন করছি সবার কাছে আমাদের সাথে বা আমাদের চারপাশে কি এগুলো হয় না ? তখন আমরা কি করি নীরবে সহ্য করা ছাড়া ?

মা বাবার সখের সন্তান অনিদ্রা । বিয়ের ১২ বছর পর তাদের প্রথম সন্তান অনিদ্রা। অনিদ্রা তার মা-বাবার আশা অনুযায়ী পড়াশুনা করে একদিন একটা ভাল চাকুরি পেল। যখন ওর বাবা জানলো অফিস ছুটি রাত ৮টায় তখন আর কিছু জিজ্ঞেস না করেই চাকরি করতে মানা করে দিল। সে বলল,‍‍‌‌‌‌‌‍ ‍‌‌‌‌‌‌‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌যে চাকরি করলে রাতে বাড়ি ফিরতে হয় সে চাকরির দরকার নেই।‌‌‌‌‍‍ অনিদ্রা স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। কয়েকটা অফিস আছে সন্ধার আগে ছুটি দেয়। আর এ যুগে এত ভাল চাকরি ও আর কোথায় পাবে। তাহলে কি লাভ হলো পড়ালেখা করে? সকল পরিশ্রম কি বৃথা?

মিথলা অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। বাসে করে যেতে হয় ভার্সিটিতে। বাসে এত মানুষের ভিড়েও কিছু ছেলে ধাক্কা দিতে একদম ভুলে না। মহিলাদেরও রেহাই নেই এসব থেকে। মন্দিরে ঘন্টা যেমন একে একে সবাই এসে বাজিয়ে যায়, তেমনি মিথিলাকেও সবাই ধাক্কা দিয়ে যায়। রাস্তা ঘাটে মানুষ যেভাবে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকে মনে হয় মেয়েটা যেন চিড়িয়াখানার একটা জীব আর ওরা জীবটাকে দেখতে এসেছে।

নীলার বিয়ে ঠিক হয়েছে কিন্তু নীলা বিয়েতে রাজি না। কারণ ও কেবল ইন্টার মিডিয়েটে পড়ে। ও আরও পড়তে চায়। ছেলেকে ও এখনো পর্যন্ত দেখেনি, কিন্তু বাড়ির সবাই রাজি। ওকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজনও বোধ করলনা। ও আর কাউকে কিছু বলতে পারল না। বললে সবাই বলবে ও অন্য কাউকে পছন্দ করে, তাই নিজের মাথায় কলঙ্ক নেয়ার চেয়ে বিয়ে করে নেয়াই অনেক ভাল। এটা মেনে নিয়েই নীলা বিয়েতে রাজি হয়ে গেল। যেদিন বিয়ে হল সেদিন ওর পড়াশুনার মৃত্যু হল।

রুপা, রুপার স্বামী অপু, রুপার রাতুল রাতুলের স্ত্রী অনন্যা আর ওদের এক বন্ধু তমাল সিলেট যাচ্ছিল। হঠাৎ এক্সিডেন্ট অপু, অনন্য আর তমাল মারা গেল, আজ পাঁচ বছর রাতুলের বিয়ে অমিয়া সাথে। রাতুল তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারল কিন্তু রুপা পারল না। রুপার কি দোষ? রুপার দোষ ও একটি মেয়ে। তাই ও অলুক্ষণে। গোটা সমাজটা ওকে হেও চোখে দেখে, তাহলে ও কিভাবে বদলাবে। মেয়েদের মন নরম বিধায় ওরা অনেকেই পরবর্তিতে আর বিয়ে করতে পারে না। কিন্তু ও সমাজ কি পারতনা ওর মুখের সেই হাসিটা ফিরিয়ে দিতে?

শুধুই কি এগুলো! আজও মহিলারা মার্কেটে গেলে দাম বেশী আর পুরুষেরা মার্কেটে গেলে দাম কম চায়। স্কুলে ভর্তির ব্যাপারে বাবা না গেলে মূল্য না দেয়া। স্বামীর চেয়ে স্ত্রী বেশী শিক্ষিত হতে পারবে না ইত্যাদি আরও কত কিছু সহ্য করতে হয় মেয়েদের। আজ কত নারী উন্নয়ন সংস্থা গড়ে উঠেছে। তারা নারীদের উন্নতি করছে, কর্মজীবি করছে। অনেক অশিক্ষিত শিক্ষিত হচ্ছে। তারা নারীদের অধিকারের জন্য কত মিছিল, মিটিং করছে। কিন্তু এসব ছোট ছোট বিষয়ও বলে দেখাও কি সম্ভব? কিন্তু জানেন, এসব বিষয় আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও হবে না। কারণ তারা বুঝতো চায় না। যদি বুঝতে চাইত তাহলে অনেক আগেই বুঝত। আসুন না আমরা সবাই মিলে নারীদের উপর থেকে এই নির্যাতন বন্ধ করি।....

“আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস”- ২৫শে নভেম্বর ২০০৮

Tile of this post: “International Day Against Violence Against Women” 25th November,2008 by Farzana Akter Tuli

নারী এই শব্দটি প্রাচীন কাল থেকে প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণ নানাভাবে নির্যাতিত ও শোষিত হচ্ছে। অথচ এই নারীর কারণেই একটি সন্তান পৃথিবীর আলো দেখতে পায়, একটি সুন্দর জীবনের শুভ সুচনা হয়। অথচ নারীদের জীবন আমাদের এই সমাজে শুধুই একজন সামান্য নারী হিসাবে চিহ্নিত, যার কোন অস্তিত্ব নেই। আমাদের সমাজে নারী পুরুষ উভয় সমান অধিকারী। কিন্তু এই অধিকার নারীরা কতটুকু পায়। তারা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পুরুষ শাসিত এই সমাজে নারীদের কোন কর্মকান্ডই গ্রহণ যোগ্যতা পায় না। অথচ আমাদের দেশে বিগত কয়েক বছর যাবৎ নারীরা দেশ পরিচালনা করে আসছে।

অনেক ক্ষেত্রে আমাদের দেশে নারী নির্যাতনের মুলহোতা থাকে আরেকজন নারী। উদাহরন স্বরুপ বলা যেতে পারে যে, একজন মেয়ের বিয়ের পর সাধারণত সর্বপ্রথম শাশুরী-ননদ বা জা যৌতুকের চাপ প্রয়োগ করে। এতে করে মেয়েটি অসহায় হয়ে পড়ে। আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে আমাদের দেশের নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এর ফলে তারা নানা রকম সমস্যায় পড়ছে। যেমনঃ

সম্প্রতি দৌলতপুরে এক গৃহ বধুকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। গত রোববার রাতে উপজেলার চৌহদ্দিঘাট গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। রোববার রাত ১২টার দিকে পারিবারিক বিরোধের জের ধরে নায়েব আলী তার স্ত্রী নাজেরা খাতুনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এমনকি ঘটনা ধামাচাপা দিতে লাশ ঘরের আড়ার সাথে ঝুলিয়ে রাখে। এলাকাবাসী লাশ ঝুলিয়ে রাখতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়। এলাকাবাসী জানায় নায়েব আলীর ৮ স্ত্রীর মধ্যে হাজেরা খাতুন চতুর্থ স্ত্রী এবং তার অধিকাংশ স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গেছে। এর পর থেকে হাজেরার সাথে তার স্বামীর কলহ চলে আসছিল। এর জের ধরেই এই হত্যাকান্ডটি ঘটে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। (মানব জমিন২৫শে নভেম্বর-০৮-মঙ্গলবার)

অতএব এ থেকে বোঝা যায় আমাদের নারীরা কত অসহায়। একজন লোক বহু বিবাহে লিপ্ত হয় আর তার বলি চরাতে হয় একজন নারীকে।

অপর দিকে গোলাপগঞ্জের কোটালি পাড়ায় একজন স্কুলছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে তাকে অপহরণ করে ৭দিন ধরে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এলাকাবাসীর সন্দেহ হলে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। আর ৫জন ধর্ষণকারীকে পুলিশ খুঁজছে। (মানব জমিন২৫শে নভেম্বর-০৮-মঙ্গলবার)

এগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারি নারীরা কতখানি অনিরাপদ। তাদের প্রতিটি পদেই বিপদের সম্মুখিন হতে হয়। অপরাধীরা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে আশার কথা এই যে, বাংলাদেশে এ নারী নির্যাতন রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর সুত্র ধরে অপরাধীদের অপরাধ প্রমানে ডি,এন,এ প্রযুক্তি এখন বাংলাদেশে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজে অবস্থিত ন্যাশনাল ফরেনসিক ডি, এন, এ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরী কর্তৃক নিম্ন লিখিত সেবা প্রদান করা হয়ঃ

  • ধর্ষণ, হত্যা প্রভৃতি জঘন্যতম অপরাধের অপরাধী সনাক্ত করণ।
  • পিতৃত্ব, মাতৃত্ব নির্ণয়।
  • বিচ্ছিন্ন অথবা বিকৃত মৃতদেহ সনাক্তকরণ।

সর্বশেষে আমরা এটাই বলতে পারি এর সবকিছুর উর্ধ্বে নারী নির্যাতন বন্ধ করতে আমাদের সকলকে একাত্ম হয়ে এর প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে হবে।