Thursday, August 16, 2007

বন্যা কবলীত বাংলাদেশ

লিখেছেন: নিনা সুলতানা মীম

পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া প্রাণী জগৎ অসম্ভব। কিন্তু এ পানি যদি প্রয়োজনের অধিক হয়ে যায় তখন সে ধারণ করে এক ভয়ানক রূপ। পৃথিবীর তিন ভাগ পানি আর এক ভাগ মাটি। বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। কিন্তু বর্ষাকালে অতিবৃষ্টি এবং হিমালয়ের বরফ গলে যাওয়ার কারণে নদ-নদীগুলো পানিতে ভরে গিয়ে সেই পানি চলে আসে মানুষের বসবাস করার স্থানে। আর একেই বলে বন্যা।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে দেখা দিয়েছে বন্যা। এই কারনে মানুষের জন জীবন হয়ে উঠেছে কষ্টকর এবং দুর্বিসহ। বাংলাদেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারন করেছে। চলমান বন্যায় এই পর্যন্ত দেশের প্রায় ১ কোটি লোক সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৭ লাখ ১১ হাজার একর জমির ফসল সম্পূর্ন নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন।

রায়গঞ্জে বন্যাদুর্গত মানুষের দুর্ভোগ চরম পর্যায় পৌঁছেছে । বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য ও জরুরি ঔষুধের জন্য হাহাকার পড়ে গেছে। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের পানিবন্দি প্রায় ২ লাখ মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করছে। গবাদি পশু ও মানুষ সংর্কীণ জায়গার মধ্যে ঠাসাঠাসি করে একস্থানে অবস্থান করছে। আর বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রগুলিতে অবর্ননীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে নারীরা। মলমুত্র ত্যাগে অর্বননীয় দুর্দশা। ভেড়িবাঁধ, সড়ক-মহাসড়ক ও অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে বাস্তুহারা বানবাসি অসংখ্য মানুষ। ৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র আশ্রয় নিয়েছে ১২ হাজার লোক। আশ্রয়হীন রয়েছে আরো প্রায় ২০ হাজার বন্যার্ত মানুষ। বন্যায় প্লাবিত হয়েছে উপজেলার প্রায় ২,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অসংখ্য বসতবাড়ি। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। বন্যাদুর্গত পানিবন্দি দরিদ্র মানুষের অধিকাংশই আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেনি। তাদের অবস্থা আরো সংকটাপন্ন। কর্মহীন শ্রমজীবী দরিদ্র মানুষ অনাহারে অর্ধহারে দিন কাটাচ্ছে।

রায়গঞ্জে ছাড়াও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে যেমন- বগুড়া, সিরাজগঞ্জে, শেরপুর, রংপুর, পাবনা, কুড়িগ্রাম, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর, মানিকগঞ্জ এর সাটুরিয়া ও শিবালয়। লক্ষীপুর এর রামগঞ্জ, মাদারীপুর, গাইবান্ধা, নারায়নগঞ্জ এর গোপালদী বাজার এবং ব্রাম্মনবাড়িয়ার সরাইল। এই সকল অঞ্চলের মানুষসহ গবাদি পশুর জন্য প্রান নিয়ে বেঁচে থাকা অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

ঢাকার বন্যা কবলীত একটি এলাকা, ছবি: অনিমেষ

এছাড়া ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলও বন্যায় কবলীত। ঢাকার যে সকল অঞ্চলে বন্যার পানি এসেছে সেই সকল অঞ্চলে বন্যার পানি ও সগয়ারেজ লাইন একসাথে মিশে গিয়েছে। সেই কারনে দেখা দিয়েছে নানা রোগ ব্যাধি। স্বাভাবিক জীবন যাত্রা অব্যহত রাখার জন্য মানুষকে এই দুর্গন্ধ যুক্ত ময়লা ড্রেনের পানি দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এছাড়া বেড়েছে মশার প্রদুর্ভাব যা সহ্য করা দুর্বিসহ। তাছাড়া বন্যার সুযোগে দাম বেড়েছে খাবার স্যালাইনসহ ঔষদ ও চাল, ডালের এবং অন্যান্য সকল প্রয়োজনীয় জিনিসের।

এছাড়া বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে সেখানে দেখা দিয়েছে পানি বাহিত রোগের। যেই কারনে ছড়িয়ে পড়েছে ডায়রিয়া, কলেরাসহ বিভিন্ন ভয়ানক রোগের। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ অসুস্থ হচ্ছে এবং নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে। কিন্তু তারা পাচ্ছে না সুচিকিৎসা এবং ঔষুধ।

এসকল বন্যার্ত মানুষদের জন্য প্রয়োজন আশ্রয়, সাহায্য এবং সু-চিকিৎসা। দেশে সরকারী এবং বে-সরকারী ভাবে বিভিন্ন সাহায্য প্রদান করা হচ্ছে। নারী জীবন ও তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বন্যাকবলীত মানুষের দিকে। নারী জীবন ও বানার্ত শিক্ষার্থী, ষ্টাফ এবং অন্যান্য বন্যার্ত মানুষের মাঝে ত্রান বিতরন করছে। কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়। বিত্তবান ধনী ব্যাক্তিদের সাহায্যের হাত বাড়ানো উচিত।

প্রাকৃতিক দুযোর্গ থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে প্রচুর পরিমান বৃক্ষ রোপন। যদি আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হ্রাস করতে চাই তাহলে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে তাই প্রয়োজন অধিক বনাঞ্চল। গাছপালার পরিমান ঠিক থাকলে পৃথিবীর ভারসাম্য সঠিক থাকবে। তাহলে হবে না অতিবৃষ্টি। তাই স্লোগান হচ্ছে:গাছ লাগাই পৃথিবী বাঁচাই

Wednesday, August 15, 2007

অনেক প্রতিকুলতা পেরিয়ে অবশেষে আমার মা

লিখেছেন:হেলেন সরকার

এই ছোট্ট পৃথিবীতে একটাই শব্দ আছে যা বললেই প্রাণ জুড়িয়ে যায় তা হলো মাযদি বলি আমার মা পৃথিবীর সেরা মা তা হলে ভুল হবে না আমি যখন খুব ছোট তখন থেকেই দেখে আসছি আমার মমতাময়ী মার পরিশ্রমী জীবনযাত্রা কত কষ্ট করে সে আমাদের লালন পালন করেছে

তাঁর জীবনের শুরুটা ছিল এরকম: তাঁর স্কুল জীবন কেটেছে হোস্টেলেএস.এস.সি এর পর তার বিয়ে হয়ে যায় অবশ্য তার আগেই গ্রমের একটা ছোট্ট স্কুলে তাঁর চাকুরী হয় আর এভাবেই শুরু হয় আমার মায়ের জীবনের কষ্টকর পথ চলা

এরপর মায়ের কোল জুড়ে আসে আমার দাদা এবং তারও কয়েক বছর পর আমি, সময় থেমে থাকেনি সেই সাথে থেমে থাকেনি আমাদের দুই ভাই বোনের বড় হয়ে বেড়ে ওঠা এবং মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম

মা জানতো এবং বিশ্বাস করতো লেখাপড়া ছাড়া জীবনের অমসৃণ পথে চলা অনেক কষ্টের তাই তার কাজের পাশাপাশি চলে সংসার এবং পড়াশুনা আমি যখন সপ্তম শ্রেনীর ছাত্রী তখন মা আই.এ এবং যখন আমি নবম শ্রেণীতে পড়ি তখন সে অনেক কষ্ট করে বি.এ পরীক্ষা দেয় এবং যথারীতি পাশ করেএরপর সে একটা ভালো অফিসে কাজ করার সুযোগ পায়নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য সে আপ্রাণ চেষ্টা করেছে, এখনও করছে

আমাদের ছোট পরিবারে বাবার ও অনেক ভূমিকা ছিল, ছিল বলছি এই কারণে আমার বাবা এই পৃথিবীতে আর নেই কিন্তু মা ই এখন বাবা হয়ে আমাদের বুকে জড়িয়ে রাখে আমার দাদা এখন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার আর আমি বি.এস.এস ২য় বর্ষের ছাত্রী

আমার মায়ের জীবন থেকে আমি একটা বিষয় খুব ভালো ভাবে শিখেছি তা হলো কোন অবস্থাতেই হাল ছেড়ে না দিয়ে সামনে দিকে এগিয়ে চলা, জীবনকে সাজিয়ে তোলা নতুন রং-এ, নতুন গতিতে আমার জীবনের আদর্শ আমার মা, পৃথিবীর সব ভালবাসা দিয়ে আমি আমার মাকে ভরিয়ে দিতে চাই