Tuesday, February 19, 2008

দাদী

Title of this post: “Grandmother” by Nafisa Mubasira.

দাদী বলে উঠল পুতের ছোয়াল লাথি দিয়া কোমর ভাইঙ্গা দিমু
কেন দাদী কি করেছি আমিনাদিয়া বলল
দাদী বলে উঠল, আবার কথা কস একটা লাথি দেব মুখের উপর
নাদিয়া বাবাকে বলে, দেখ আব্বু দাদী কি বলে
বাবা বললেন, দাদী হয় একটু সহ্য কর নাদিয়া
আমি বললাম দাদী কি এমন হয় আব্বু রাত্রে খাবার সময়, হঠাৎ দাদী বলে উঠল আমাকে খাবার দিবি নাকি না খাওয়ায় মারবি

আম্মু সবাইকে রাত্রের খাবার খেতে টেবিলে ডাকলখেতে বসে দাদী তার মত তার প্লেটে খাবার তুলে নিলএক গাল ভাত মুখে তুলে মাকে বলে উঠল বড় লোকের ঝি রানতে জানিস নাবলে মাছের বাটিতে হাক থু করে থুতু দিয়ে দিয়ে নিজের খাবারের প্লেট নিয়ে রুমে চলে গেলরাত্রে এক বিছানায় আমার, মেজ ভাইয়ার ও দাদীর শোয়ার কথারুমে ডুকে দেখি মেজ ভাইয়া বিছানার কিনারায় শুয়ে আছে আর দাদী তাকে সমানে বকা ঝকা করছেআমাকে দেখে বলল হারাম যাদারে সরাবি নাকি এক লাথি দেব বলেই ভাইয়াকে এক লাথি দিয়ে বিছানা থেকে নিচে ফেলে দিলভাইয়ার কপাল ফেঁটে রক্ত বের হচ্ছে আমি চিৎকার করে মাকে ডাকার জন্য দৌঁরে গেলাম ফিরে এসে দেখি দাদী পিছন ঘুরে খাটে শুয়ে আছে ভাইয়াকে আমরা ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছি দেখে দাদী বলে উঠল, আহলাদের শরীর পাদলেই ডাক্তার লাগেকে কোন উত্তর না করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলভাইয়ার কপালে দুটি সেলাই লেগেছিল

দাদী জেদ ধরল গ্রামে যাবে, এদিকে আমাদের ও বার্ষিক পরীক্ষা শেষ আমরা সবাই গ্রামে গেলামযাওয়ার পথে আমি বড় আপুর পাশে বসলাম,
দাদী বলল
, এত পিরিত কিসের ফকিন্নির ঝি সর আমারে বসতে দে
দাদী আমার আর বড় আপুর মাঝে বসলআমার যন গ্রামের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছালাম তখন বিকালআমার বড় চাচার ছেলে তের চৌদ্দ বয়সের সুমন ভাইয়া পেয়ারা গাছে ছিল

দাদী বাড়িতে পা দিয়েই বলে উঠল, পুতের ছোয়াল আমি বাড়িতে নাই আর তুই আমার সম্পত্তি খাসপুতের ছোয়াল খাড়া মজা বুঝাই বলেই দৌড়ে গিয়ে কতগুলো ইটের টুকরা ছুরে মারল, তার মধ্যে একটা ইট যেয়ে চোখে লাগলসুমনের চিৎকার শুনে বড় চাচা ছুটে এল, আমরা হতবম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম

দাদীকে চাচা বলতে লাগল, মা তুমি বাড়ি আসতে না আসতেই শুরু করে দিলে
দাদীও চুপ থাকল না লল, ক্যা রে তোর পোলা যে আমার সম্পত্তি খায় তা কি চোখে দেখিস না
আমার বাবা বলল, থাক না অনেক হয়েছে এখন চুপ করওর চোখ থেকে রক্ত বের হচ্ছে ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান

আমার বাবা ভাই বোনদের সবার ছোট, দাদী এমন হলেও বাবাকে অনেক ভালোবাসে যার কারনে বাবার কথাতেই চুপ করে গেলআমরা সবাই দাদীর রে বসলাম হঠাৎ এক জার্মানি মহিলা এসে দাদীর পা ধরে সালাম করল
দাদী আশ্চার্য হয়ে বলল, কে তুই?
বড় চাচা বলল, জার্মান থেকে বিয়ে করে নিয়ে আসছি এটা তোমার নতুন বৌ মা
এরই মধ্যে আমার বড় চাচী কাঁদতে কাঁদাতে দাদীর কাছে এসে বিচার দিল, মা দেখেন আপনার ছেলে কি করেছে
দাদী বলল, যা করেছে ভাল করেছে তোর ইচ্ছা হইলে তুই থাক তা না হলে চইলা যা কি রে আমার বড় লোকের ঝি ছেলেরা দুই একটা বেশি বিয়ে করেই থাকে তাতে কি একেবারে মহাভারত অসুদ্ধ হইছে ঢং করিস না, যা

আমার মা, মেজ চাচী তাকে বুঝ দেওয়ার কোন ভাষা খুঁজে পেল নারাত্রে তাকে খাওয়াতেও পারল নাসে রাত্রে বড় চাচী বারান্দায় বসে কেদেঁ রাত কাটাল

সকাল হতে চাচীর ৩ বছরের মেয়ে মিনুকে সাথে নিয়ে যাওয়ার সময় দাদী ঝড়ের বেগে এসে বলল, ফকিন্নির ঝি তুই মিনুকে কই নিয়ে যাস মরলে তুই কাই মর
মিনু দৌড়ে গিয়ে বলল, দাদী মা যাচ্ছে
দাদী মিনুকে বুঝ দিয়ে বলল, ওটা তো তোর পুরানো মা কালা, দেখ তোর জন্য তোর বাপে কেমন সুন্দর বিদেশী মা নিয়ে আইছে
মিনু বলে, না দাদী আমার সুন্দর মা দরকার নাই, আমার ঐ মাই ভাল
দাদী বলল, চল তোরে গোসল করায় নিয়ে আসি তোর মাথা গরম হয়ে গেছে
দাদী মিনুকে পুকুরে গোসল করাতে নিয়ে গেলকিছুক্ষন পর দাদী গোসল করে একাই ফিরে এসে উঠানে শাড়ি নাঁড়ছে
মা দাদীকে একা দেখে বলল, আপনি একা মিনু কোথায় মা? আপনি না ওকে গোসল করাতে নিয়ে গেলেন?
দাদী ঘামটা দিয়ে বলল, ফকিন্নির ঝি ফকিন্নির মতই হইছে আমার সাথে জেদ দেখায় কয় আরো গোসল করমু ঘাঁটে থুইয়া আইছি
মা বলল, মা একি করেছেন ছোট বাচ্চা..... কথা শেষ না করেই পুকুর ঘাঁটে ছুটে গেলমায়ের চিৎকার দিয়ে দৌঁড়ে যাওয়া দেখে আমরা দৌঁড়ে গেলামমিনুকে ঘাঁটে দেখতে পেলাম নাপানিতে নীল রং এর কাপড় একটু দেখতে পেয়ে মিনু বলে চিৎকার করে সুমন ভাইয়া পানিতে ঝাপ দিলপানিতে মিনুর লাশ জরিয়ে ধরে পানিতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল, সে যে মিনুকে উঠিয়ে নিয়ে আসতে এতুটুকু শক্তি তার শরীরে নাইসবাই বলতে লাগল সুমন মিনুকে উঠিয়ে নিয়ে আস ও কি বেঁচে আছেসুমন ভাইয়ার বাক শক্তি হারিয়ে ফেলেছে একে তো মা বাড়ি ছাড়া তার উপর একমাত্র বোন মারা গেছেসুমন ভাইয়া অনেকক্ষন পরে ঘাটে মিনুকে উঠিয়ে নিয়ে এসে দাদীকে প্রসঙ্গ করে বলে উঠল, এই বুড়ির বাচ্চা বুড়ি আমার ছোট বোনকে মাইরা ফেলছে

আমি এই প্রথম দাদীকে নীরব ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম
মেজ চাচা বলে উঠল, সুমন বেয়াদবী করে কথা বল না

মিনুর লাশ দাফন দেওয়া হল কদম গাছের তলে যেখানে মিনু পুতুল নিয়ে খেলতঐ দিনের পর থেকে সুমন ভাইয়াকে আর পাওয়া যায়নিকিছুদিন পর বড় চাচা বউ নিয়ে জার্মানে ফিরে গেলপ্রায় অনেক দিন হল গ্রামে এসেছিএবার আমাদের যাওয়ার পালাদাদী আমাদের সাথে শহড়ে আসতে চাইল না
বাবা দাদীর হাতে এক মাসের খরচ দিয়ে বলল, মা আপনার জন্য প্রতি মাসে আমি টাকা পাঠাব

দাদী কোন উক্তি করল না চুপ করে কথা শুনে মাথা নাড়াঁলোদাদী ইদানিং কেমন যেন ভেঙ্গে পড়েছে, আগের মত অতবেশি গালি গালাজ, দাপা-দাপী এখন আর করে নাআমার মনে হয় মিনুর মৃত্যু দাদীর মনে লেগেছেকারণ মিনুর মৃত্যুর দোষ সম্পূর্ন দাদীর উপরই চাপিয়ে দিয়েছেন সবাই

আমরা গ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরে এলামপ্রায় দুই মাস পর খবর পাই দাদী মারা গেছেআমরা ভাই বোনরা কিছুতেই তার হঠাৎ মৃত্যু মেনে নিতে পারিনিআমরা গ্রামে গিয়ে শুনি আব্বু ঢাকায় এসে দাদীর জন্য যে টাকা পাঠাত মেজ চাচা সেই টাকা দাদীকে দিত নাএমনকি দাদীকে তারা খেতেও দিত না, না খেতে পেয়ে একদিন দাদীর প্রচন্ড জ্বর আসে
দাদী চাচাকে হাত পেতে বলে, আমারে অল্প কয়টা ভাত খাইতে দে, আমার অনেক জ্বর
চাচা তাকে খেতে দেয় না এমনকি আশেপাশের মানুষরাও তাকে সামান্য ভাত দেয় নি, এমনকি তার এই মুমূর্ষ অবস্থা দেখেও

দাদী কার কাছ থেকে যেন ৮-৯ টা প্যারাসিট্যামল ঔষধ নিয়ে একসাথে সবগুলো খালি পেটে খেয়ে নেয়তখন প্রায় সন্ধ্যা দাদী বিছানায় শুয়ে জ্বরে কাতরাচ্ছেমেজ চাচা বলে চল তোমারে গায়ে পানি ডালি জ্বর নেমে যাবে
দাদী বলল, না বাবা আমারে গোসল করালে আমি মারা যাব যদি পারিস চারডা বাসি ভাতই দে
চাচা বললেন, চলতো বক বক কইরো না বলে দাদীকে যখন গায়ে পানি ডালে কিছুক্ষনের মধ্যেই দাদী মাটিতে পড়ে মারা যায়