"পা-ই দিয়া যান, পা-ই দিয়া যান,
পা-ই দিয়া যান....................।"
এটা কোন কবিতা নয়। এই পা-ই শব্দের অর্থ হলো কয়েন বা পয়সা। এটা একজন ভিক্ষুকের ডায়ালগ। সে একজন ধবল কুষ্ঠ ও অন্ধ লোক। তার চুল সাদা। সে ৭০ বছরের একজন বৃদ্ধ। আমি এই লোক সম্বন্ধে ১৫ বছর পূর্বে থেকে জানি। কিন্তু তার কোন পরিবর্তন নেই। সে সবসময় একটি সাদা টি-শার্ঠ ও সাদা- নীল গ্রামীন চেক লুঙ্গী পরিধান করে। সে হাতে ধরে রাখে এ্যালুমিনিয়ামের একটি বোল এবং ভর করে দাড়াঁবার জন্য একটি লাঠি। আর সব সময় সে তার ডায়ালগ বলতে থাকে- পা-ই দিয়া যান, পা-ই দিয়া যান.......।
একদিন আমি তাকে জিজ্ঞেসা করলাম – এই পা-ই দিয়া যান এর মানে কি? সে কোন উত্তর দিল না বরং সে পুনরায় বলল- পা-ই দিয়া যান। সব সময় তাকে ভিক্ষা করতে দেখা যেত গোঁড়ান মোড়, বাসাবো মোড়, শান্তিবাগ মোড়। কিন্তু তার “পা-ই দিয়া যান ” শব্দের “পা-ই” ব্যবসা জমজমাট হত সদরঘাটের ফেরি ঘাটে। এই কারন সে বলে, সেখানে ও আমার মত ‘পা-ই’ লেনা-দেনা হয়। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি আপনার পরিবারে কয়জন সদস্য আছে? সে বলে আমার কোন পরিবার নেই। আমি একা। আমি তাকে আবারও জিজ্ঞাসা করি আপনি যেহেতু একা সেহেতু ভিক্ষের টাকা আপনি কিভাবে খরচ করেন? সে তার প্রতিউত্তরে বলে আমি সকালে দু’মুঠো পান্তা খেয়ে ভিক্ষে করতে বেড় হই, দুপুরে বনরুটি কিনে খাই আর রাতে গরম ভাত। বেশ কিছু পয়সা জমা হলে তিনি মাঝে মাঝে ঘুরে আসেন নির্জন, কোলাহলমুক্ত নীল আকাশ ও সবুজের সমারোহে। কেন এই নির্জনতা সবুজের মাঝে হারিয়ে যান? সে বলল- আমিতো চোখে দেখতে পাই না। তাই আমি নির্জন খোলা আকাশ, মুক্ত বাতাস ও সবুজের গন্ধ উপভোগ করতে আসি। আমার মনে হয় এই ছোট্ট নির্জনভুবনটা বিধাতা আমার জন্যই গড়েছেন। কেননা যারা চোখে দেখতে পায় তারা এই নির্জনতা, মুক্তবাতাস, সবুজের গন্ধ উপলব্ধি করতে পারে না। তারা চায় হ-য-ব-র-ল পৃথিবীটাকে আরও হ-য-ব-র-ল করে ঝাক্কাস আর জোস করে তুলতে।
প্রায় দু’বছর যাবৎ আমি সেই ভিক্ষুককে দেখি না আমি জানি না সে আজও বেঁচে আছেন কিনা। হয়তো আবারও কোন একদিন গলির ধারে কোন এক মোড়ে ধ্বনিত হবে।
"পা-ই দিয়া যান, পা-ই দিয়া যান,
পা-ই দিয়া যান....................।
No comments:
Post a Comment