Title of this post: Women from rural and urban area by Jainub Khanam
নারী-গ্রামের হোক, শহরের হোক, আধুনিক কিংবা সাধারন হোক, চালাক হোক কিংবা আনাড়ী- তার পরিচয় কিন্তু একটাই, সে নারী। কিন্তু আমি যা নিয়ে ভাবছি তা হলো - নারীতে নারীতে কত তফাৎ? আমার জন্ম গ্রামে। তাই খুব কাছ থেকে গ্রামের মেয়েদের জীবন যাত্রা আমি দেখেছি। বিয়ের পরে আমার স্বামী আমাকে ঢাকা নিয়ে আসে। আমি এখন ঢাকা শহরে থাকি। তাই শহরের মেয়েদের জীবন যাত্রা ও আমি কাছ থেকে দেখেছি। শহর আর গ্রামের নারীদের জীবনে কত পার্থক্য ? গ্রামে বেশির ভাগ নারী লেখাপড়ায় খুব একটা জোর দেয় না। কোন রকম এস.এস.সি পাশ করতে পারলেই অনেক কিছু। কয়েক জন ব্যতীক্রম অবশ্যই আছে। আমি আমাদের এলাকার কথাই বলছি। ৯ম বা ১০ম শ্রেণীতে পড়লেই বাবা মায়েরা বিয়ের কথা ভাবেন। এরপর কোন একটা পাত্র বিদেশী হলে ভাল হয়। বয়স বাবার বয়সের হোক, সমস্যা নেই, প্রচুর টাকা আছে। লেখা পড়া কম, সমস্যা নেই, মোহরানা দেবে ৫লাখ। আমার মনে হয়, বাবা-মার জ্ঞানহীন ধ্যান ধারণার জন্যই মেয়েদের এই অবস্থা। মায়েরা ছোটবেলা থেকেই মেয়ের মনে একটা ধারণা তৈরী করে দেন যে, “তোমরা নারী”। মক্তবে কোরান শরীফ শেষ করবে, বাংলা শিখে চিঠি পত্র লিখতে পারলেই হবে, তার পর বিয়ে দেব, বাচ্চা পালন, সংসার গুছানো ব্যাস তোমার দায়িত্ব শেষ।
অথচ সংসার সুন্দর করে গুছানোর জন্য, সংসার কে সুখী করার জন্য, স্বামীর সঠিক মূল্যায়ন, বাচ্চার সঠিক যত্ন, পরিবারের অন্যদের সাথে ভালব্যবহার, সবার প্রতি দায়িত্ববোধ, সচেতনতা এসব গুরুত্বপূর্ন বিষয়গুলোর জন্য উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক অর্থাৎ ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করতে হবে, সব কাজে পারর্দশী হতে হবে। গ্রামের মায়েরা এসব কখনোই ভাবেন না। এতো গেলো অবিবাহিতা মেয়েদের কথা, এবার বউদের কথায় আসি। তারাতো স্বামীর বাড়ীতে এসে রাজরানী। সংসারের চাবী তার শাড়ীর আঁচলে, স্বামীর টাকা তার ড্রয়ারে। ইচ্ছে মত, খেয়াল মত সংসারে কর্তৃত্ব খাটায় তারা। আমাদের বাড়ির বউরা এত সুখি। সকালে উঠে নাস্তা খেয়ে উঠানে বসে সবাই আড্ডা দেয়। ১০ টায় বাচ্চাদের স্কুলে পাঠায়। ১১টায় বা ১২ টায় রান্না করে হিটার বা সিলিন্ডার গ্যাসে । দুপুরে খেয়ে ঘুম দেয়, বিকালে নাস্তা খেয়ে আবার আড্ডা দেয়। সন্ধ্যায় ঘরে যায়। বাচ্চাদের পড়ালে পড়ায় না পড়ালে নাই। ৮টা বাজলে টিভি ছাড়ে ১০/১১ টা পর্যন্ত দেখা হয়। এরপর ঘুম। বউদের চিন্তা বা কোন টেনসন নেই বাজারের। স্বামীরা সবকিছু এনে হাজির করে। তাদের গল্প, হাসি তামাশায় কেটে যায়। ঘড়ির দিকে তাকানোর প্রয়োজন যেন নেই। অথচ শহরের নারীর জীবন গ্রামের নারীর জীবন থেকে সম্পূর্ন ভিন্ন। শহরের নারীরা একরকম সংগ্রামী জীবন কাটায়। তাদের সময় চলে ঘড়ির সাথে পাল্লা দিয়ে। বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া, আনা, ঘর গুছানো, বাজার করা, রান্না করা, বাচ্চাকে কোচিং এ নেওয়া, গান, ড্রয়িং শিখাতে নেওয়া, সময় মত ঘুম পাড়ানো, রাত্রে রান্না সেরে আবার বাচ্চাকে পড়ানো, নিজের পড়া, ব্যক্তিগত কাজ, সবই তারা করছে দক্ষতার সাথে। আমি দেখেছি আমার চতুর্পাশের বেশির ভাগ মেয়ে অনেক পরিশ্রমী। অবিবাহিতা মেয়েরা ও অলস সময় কাটায় না। তারা উচ্চ শিক্ষার পাশাপাশি কম্পিউটার, গ্রাফিক্স ডিজাইন, সেলাই, অত্যাধুনিক রান্না সহ আরো বিভিন্ন কোর্স শিখে নিজেকে দক্ষ, কর্মঠ ও সাবলম্বী করছে। সারাদিন তারা কাজের মধ্যেই সময় কাটায়। অবশ্য গ্রামে সুযোগ সুবিধা ও কম। চাইলেই তারা কম্পিউটারে বসতে পারে না। ইন্টারনেটে বিচরন করতে পারে না।
Thursday, September 11, 2008
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
2 comments:
যুক্তি সংগত কথা। তবে গ্রামের মহিলাদের সচেতনা বাড়াইতে হবে। তাদের মধ্যে সচেতনা লেভেল বাড়াইতে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সমস্যা ও সেগুলোর সমাধানের ব্যাপারে আলোচনা করা যেতে পারে।
তাছাড়া সাধারন স্বাস্থ্য বিধি সম্পকেও ধারনাও দেওয়া উচিত। যাতে কোন রকম কুসংস্কারে বিশ্বাস না করে ।
কাওছার মাহমুদ,
জার্মানী হইতে
কাউসার,
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমিও আপনার সাথে একমত।
Post a Comment